ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রবীন্দ্রকথন গান ও আবৃত্তিতে খামখেয়ালী সভার বর্ষপূর্তি

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

রবীন্দ্রকথন গান ও আবৃত্তিতে খামখেয়ালী সভার বর্ষপূর্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাঙালি জাতির মহত্তম মনীষা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ক’জন অনুসারী মিলে, রবীন্দ্রনাথকে কেন্দ্র করে সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার একটি মননশীল ও প্রাণবন্ত মাসিক আড্ডা খামখেয়ালী সভা। রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে নিয়মিত মাসিক আয়োজনে এক বছর পার করেছে সংগঠনটি। প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে শুক্রবার সন্ধ্যায় এক আনন্দঘন প্রীতি সম্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়। ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’ শিরোনামের এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আব্দুল আউয়াল ও আবিদ এ আজাদ। মঙ্গল প্রদীপ জ্বেলে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন অতিথিরা। এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের নির্বাহী সদস্য আঁখি সিদ্দিকা। আলোচনানুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য স্রষ্টা হচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর মতো করে এই রকম দু-হাত উজাড় করে বাংলা সাহিত্যকে এত রতœভা-ার আর কেউ উপহার দিতে পারেনি। উনিশ শতকের এক দরিদ্র সাহিত্যের অধিকারী বাংলাকে তিনি প্রায় একক প্রচেষ্টাতেই জাতে তুলেছেন, সমৃদ্ধ করেছেন। বিশ্বসভায় বাংলা সাহিত্যকে স্বগৌরবে উচ্চ আসনে বসিয়েছেন। নিরন্তর সৃষ্টি করেছেন তিনি। এ সৃষ্টিতে তার কখনও এসেছে আনন্দ, কখনও দুঃখ। তবু তিনি থেমে থাকেননি। তাঁর মতো এ রকম ঐকান্তিক একাগ্রতায় সারা জীবনব্যাপী শুধুমাত্র সাহিত্য সৃষ্টি আর কোন সাহিত্যিকের দ্বারা সম্ভবপর হয়নি। ‘খামখেয়ালী সভা’ একেবারেই খামখেয়ালী কোন বিষয় নয়। খামখেয়ালী সভা নামে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ একটি আড্ডা শুরু করেন ১৮৯৭ সালে কলকাতায়। ‘ডাকাতের দল’ নামে সে সময়ের একটি চমকপ্রদ সংগঠনের উত্তরসূরি হিসেবে খামখেয়ালী সভার জন্ম। ডাকাতের দল একেক সময় একেক সভ্যকে চিঠি দিয়ে জানাতোÑ আজ তার বাড়িতে ডাকাতি হবে: অর্থাৎ সবাই মিলে ওই সভ্যের বাড়িতে আড্ডা জমাবে ও খাবে। সে সব সভায় রবীন্দ্রনাথ তাঁর নতুন নতুন লেখা পড়ে শোনাতেন। তখন গান করতেন ডিএল রায়, অতুল প্রসাদের মতো সব শিল্পীরা। দীর্ঘ ১১৫ বছর পর ঢাকায় শুরু হয়েছে খামখেয়ালী সভা নামে আর একটি সংগঠন। মাসে একবার এর আড্ডা বসে। বক্তারা আরও বলেন, বিপুল রবীন্দ্রসাহিত্যের সুধাসিন্ধুর তীরে বসে আমরা বিস্তর কোলাহল করছি বটে কিন্তু তাতে কতখানি অমৃত আর কতখানি গরল মিলছে সে প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক। সরল গদ্যে বলা যায়, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, সঙ্কটে সংগ্রামে রবীন্দ্রনাথ আমাদের দিশারি। বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানবিক দৈন্যের এ সময়ে অতীতের যে কোন সময়ের মতোই এখনও তিনি অনিঃশেষ প্রেরণার উৎস। খামখেয়ালী সভা মনে করে রবীন্দ্রমনীষার সবগুলো দিক আরও পরিপূর্ণরূপে আবিষ্কৃত হয়নি। সভার সভ্যরা বিচার ও বিশ্নেষণমুখী পঠন পাঠনের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে নতুন করে আবিষ্কারে ব্রতী হবেন, নিজেদের ঋদ্ধ করার পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানবিক চেতনা এবং তার অনিন্দ শিল্পবোধের প্রসারে কাজ করবেন। আলোচনানুষ্ঠানের পর শুরু হয় আড্ডা পর্ব। এতে রবীন্দ্রনাথের গান, কবিতা আবৃত্তি ও পাঠে প্রাণবন্ত এক আবহ সৃষ্টি হয়। আড্ডা পর্বে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, আতাউর রহমান, লিলি ইসলাম, কামরুল হাসান মঞ্জু, তপন জ্যোতি বড়ুয়া, আজিজুর রহমান তুহিন প্রমুখ। সবশেষে বছরব্যাপী নিয়মিত সভার সঙ্গে যুক্ত বিশিষ্টজনদের সম্মাননা জানানো হয়।
×