ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘আসল বিএনপি’র সমাবেশ ॥ খালেদা জিয়ার পদত্যাগ দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

‘আসল বিএনপি’র সমাবেশ ॥ খালেদা জিয়ার পদত্যাগ দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের দাবিতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের কাছে কাফনের কাপড় পরে আবারও বিক্ষোভ করেছে পরিবহন শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করে সেখান থেকে চলে গেলেও মধ্যরাত থেকে আবারও গুলশান কার্যালয়ের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয় তারা। শুক্রবার দিনভর সেখানে অবস্থান নিয়ে অবিলম্বে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা। এদিকে খালেদা জিয়ার অফিসের অনতিদূরে গুলশান ২ নম্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পদত্যাগ দাবি করেছে ‘আসল বিএনপি’। আর ওই এলাকায় মানববন্ধন করে হরতাল-অবরোধের নামে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারা বন্ধের দাবি জানিয়েছে ব্লগার এ্যান্ড অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট (বোয়ান)। এ ছাড়াও খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে আরও কিছু সংগঠনের নেতাকর্মীরা অবস্থান করে হরতাল-নৈরাজ্যের প্রতিবাদ জানায়। খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনে অবস্থানকালে বিক্ষুব্ধ পরিবহন শ্রমিকরা জানান, খালেদা জিয়া ঘোষিত টানা অবরোধ এবং হরতাল পালনের মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা পেট্রোলবোমা মেরে যানবাহন জ্বালিয়ে এবং পরিবহন শ্রমিকদের আগুনে পুড়িয়ে মেরে দেশে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে রুটি-রুজি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক পরিবহন শ্রমিক না খেয়ে মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আমরা এ পরিস্থিতির অবসান চাই। আমরা আর পুড়ে মরতে চাই না। আন্দোলনের নামে রাজনৈতিক সহিংসতা থেকে আমরা রেহাই চাই। খালেদা জিয়া আমাদের বাঁচান। দোহাই লাগে পেট্রোলবোমা মারা বন্ধ করুন। এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দল থেকে পদত্যাগ করার দাবি জানিয়েছে কামরুল হাসান নাসিমের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল ‘আসল বিএনপি’। সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এই রাজনৈতিক দলের নাম ঘোষণা করা হয়। হরতাল-অবরোধের নামে নৈরাজ্যের প্রতিবাদে শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর গুলশান ২ নম্বর গোলচত্বরে এক সমাবেশে দলের নেতারা এ দাবি জানান। এ ছাড়া তিনি দেশের চলমান সঙ্কট নিরসনে খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে সংলাপ করার দাবি জানান। ‘আসল বিএনপি’র মুখপাত্র কামরুল হাসান নাসিম বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি প্রহসনের নির্বাচন করে বিএনপি অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসে। তাই আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দল থেকে পদত্যাগ করে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ওই প্রহসনের বিষয়টি লাঘব করতে হবে। তা না হলে আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে। অবিলম্বে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান তিনি। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপিকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে নিজেকে ‘আসল বিএনপি’র নেতা দাবি করে কামরুল হাসান নাসিম তার সঙ্গে সংলাপে বসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তবে সংলাপ হতে হবে ছয় মাস পর তার নেতৃত্বে গঠিত ‘আসল বিএনপি’র কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের পর। এর আগে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সরকার সংলাপে বসলে ১৭ হাজার জিয়ার সৈনিক নিয়ে গণভবন ঘেরাও করা হবে। নাসিম বলেন, শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান নাশকতাকারীদের দিয়ে বিএনপিকে একটি অপশক্তির দল হিসেবে দাঁড় করাতে চেষ্টা করছেন। আমরা জিয়ার আদর্শের বিএনপি তা হতে দিতে পারি না। নিজেকে বিএনপির একজন ‘ওষুধওয়ালা’ পরিচয় দিয়ে নাসিম বলেন, বিএনপি শুধুমাত্র ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতিতে ব্যস্ত। আমি বলছি, নিকট সময়ে বিএনপির ইমেজ সঙ্কট শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে আমাদের নবধারার বিএনপিতে নিয়ে আসবে। এক সপ্তাহের মধ্যে দেশের জনগণ রাস্তায় নামবে ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, নিকট সময়ের মধ্যে ১৭ জন শীর্ষ নেতাকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে দেখবেন। তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের চেয়েও উন্নত অর্থনীতির চিন্তা দাঁড় করিয়ে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করব। হতে পারে সেটা মধ্যবর্র্তী নির্বাচন অথবা হতে পারে একাদশ সংসদ নির্বাচন। গুলশানে সমাবেশ করার আগে বনানী থেকে মিছিল করতে করতে সেখানে আসে আসল বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী। এ সময় তাদের মুখে সেøাগান ছিল, ‘হরতাল-নৈরাজ্য বন্ধ কর, মা খালেদা তুমি পদত্যাগ করো’। সমাবেশে নাসিমের বক্তব্য শেষে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে পদত্যাগের দাবিতে বিএনপি লেখা সাদা কাগজ মাথার ওপর তুলে ধরে এক মিনিট নিরবতা পালন করে আসল বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিকেল ৪টার দিকে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের অনতিদূরে হরতাল-অবরোধের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারার প্রতিবাদে সাদা পতাকা হাতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে ব্লগার এ্যান্ড অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট (বোয়ান)। এ সময় সংগঠনের নেতারা আন্দোলনের নামে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারা বন্ধের দাবি জানিয়েছে। মানববন্ধনকালে সংগঠনের নেতাকর্মীদের সেøাগান ছিল এমন- ‘হরতাল-অবরোধের নামে নাশকতা, মানি না মানি না’। ‘আর নয় প্রতিবাদ, এবার হবে প্রতিরোধ’, পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা বন্ধ কর, করতে হবে’। চলমান নৈরাজ্য-অস্থিরতার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে দায়ী করে বক্তারা বলেন, একের পর এক মানুষ হত্যা, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে কাবাব বানানো, অগ্নিদগ্ধ করে মানুষের জীবন কেড়ে নেয়াসহ সব ধ্বংসলীলা বন্ধ করতে হবে। মানববন্ধনে অংশ নেন ব্লগার এ্যান্ড অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট (বোয়ান) নেতা অনিমেষ রহমান, আতিকুর রহমান, সাগর লোহানী, জ্ঞানেন্দ্র চন্দ, সুজন, সারোয়ার পারভেজ পুলক, নুসলাত লাকী, বৈশাখী রায়, পিকলু চৌধুরী প্রমুখ।
×