ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে খাবার চেয়ে এনে পিন্টুকে খেতে দিয়েছিলাম

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে খাবার চেয়ে এনে পিন্টুকে খেতে দিয়েছিলাম

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী থেকে ॥ হরতাল-অবরোধে বাড়িতে বসে থাকায় খাবার জুটছিল না। ক’দিন অন্যের বাড়ি থেকে ধারে চাল নিয়ে চলল। কিন্তু ক’দিন এভাবে চলবে- এই ভেবে বসে না থেকে ওস্তাদের (চালক) সঙ্গে ট্রাক নিয়ে বেরিয়েছিলেন রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার টাঙ্গন গ্রামের পিন্টু। কিন্তু স্ত্রী আর শিশুসন্তানের জন্য চাল-ডাল নিয়ে নয়, পিন্টু ফিরল দগ্ধ লাশ হয়ে। একমাত্র উপার্জনক্ষম লোকটিকে হারিয়ে ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছে পরিবারে। নাশকতাকারীদের হামলায় নিহত হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকে স্ত্রী সাথী বেগম বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। শোকে স্তব্ধ পুরো গ্রাম। সবার জিজ্ঞাসা- কী হবে তাদের। কে দেখবে তার স্ত্রী আর ফুটফুটে শিশুকে? স্বামীর নির্মম মৃত্যুতে কাতর স্ত্রী সাথী বলেন, ‘পিন্টু বাড়ি থেকে বেরুনোর সময় বলছিল, যেভাবে জামায়াত-শিবির ট্রাকে পেট্রোলবোমা মারছে, খুব ভয় লাগে। বুধবার রাতে বাড়িতে কোন খাবার ছিল না। বৃহস্পতিবার সকালে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে খাবার চেয়ে এনে স্বামী পিন্টুকে খেতে দিয়েছিলাম। সকাল আটটার দিকে পিন্টু বের হয়ে যায়। কথা ছিল, কাজ শেষে চাল-ডাল নিয়ে আসবে। কিন্তু ঘাতকরা তাকে পাঠিয়ে দিল না-ফেরার দেশে।’ বৃহস্পতিবার রাতে পুঠিয়ার বেলপুকুরে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় পিন্টু। শুক্রবার সকালে পিন্টুর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী সাথীর আহাজারি। সান্ত¡না দিতে এসে স্বজন ও প্রতিবেশীরাও কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। তাঁর বাড়ি ঘিরে শুধু শোকের মাতম আর নানা জিজ্ঞাসা। একমাত্র ছেলে সিয়ামকে নিয়ে মায়ের আহাজারিতে সবার চোখেই পানি। সাথী বলেন, সিয়ামের বাবার স্বপ্নœ ছিল বয়সী সিয়ামকে লেখাপড়া শিখিয়ে সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বানানো। কিন্তু সব স্বপ্ন আজ ভেঙ্গে গেল। পিন্টুর মামা ওমর আলী জানান, পিন্টুর পিতার বাড়ি চারঘাটের রাওথা পাইকপাড়া গ্রামে। তারা তিন ভাই। জন্মের পর থেকে পিন্টু তার নানার বাড়ি টাঙ্গনেই বড় হয়েছে। নানা শের ম-ল ও নানি আলফেল পিন্টুকে নিজের বাড়িতেই রেখেছিলেন। নানা শের ম-ল মারা যাওয়ার আগে পিন্টুকে ১০ কাঠা জমি লিখে দিয়ে যান। সেই জমি ছাড়া পিন্টুর আর কিছুই নেই। পিন্টুর মা আলেয়া বেগম আহাজারি করে বলেন, আমার পিন্টুর কী দোষ ছিল? সে তো চুরি করতে যায়নি, পরিবারের অন্ন যোগাতে ট্রাকে কাজ করছিল। কেন তাকে এভাবে মরতে হলো? এখন কী হবে তার শিশুসন্তানের? তিনি আল্লাহর কাছে বিচার দাবি করে বলেন, ‘হে আল্লাহ যারা আমার ছেলের ওপর বোমা মেরেছে, তাদের বড় গজব দেও।’ বৃহস্পতিবার রাতে ট্রাকে বরইবোঝাই করে ঢাকা যাচ্ছিল পিন্টু। পুঠিয়ার বেলপুকুর এলাকায় পৌঁছলে দুর্বৃত্তরা পেট্রোলবোমা ছুড়ে মারে। এ সময় পিন্টুর মাথায় আগুন ধরে গেলে পিন্টু আতঙ্কে লাফ দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। শুক্রবার সকালে পিন্টুর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। এ ঘটনায় পিন্টুর বাবা আহম্মেদ আলী বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে পুঠিয়া থানায় একটি মামলা করেন। পুঠিয়া থানার ওসি (তদন্ত) হাফিজুর রহমান জানান, আসামিদের গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে।
×