ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অংশ নিয়েছে ১৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬৫ পরীক্ষার্থী

ভয় জয় করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এসএসসি পরীক্ষা শুরু

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ভয় জয় করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এসএসসি পরীক্ষা শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতাল অবরোধের নামে চলা নাশকতার আতঙ্ককে কাটিয়েই দেশজুড়ে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শুরু হলো এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। সারাদেশে অবরোধ ছাড়াও কোথাও কোথাও দেয়া হরতালের ভয়কে জয় করে শুক্রবার ছুটির দিনে প্রথম পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১০ শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষার্থী। রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলাতেই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। ১৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬৫ জন। ফরম পূরণ করেও পরীক্ষায় অংশ নেয়নি সাত হাজার ২৭৭ জন। সারাদেশে নেয়া কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় খুশি পরীক্ষার্থী ও তাদের উদ্বিগ্ন অভিভাবক। প্রথম দিন শেষে শিক্ষা মন্ত্রী, পরীক্ষার্থী, অভিভাবকরা আবারো পরীক্ষার সময়ে হরতাল-অবরোধ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে আজ শনিবার অবরোধের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে গত ৪ ফেব্রুয়ারির পিছিয়ে যাওয়া বাংলা দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষা। এর আগে বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতালের কারণে দুই দফা পেছানোর পর অবরোধের মধ্যেই শুক্রবার দেশজুড়ে শুরু হয় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। ২৭ হাজার ৮০৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষার্থী এবার এ পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করেছে। সারা দেশে তিন হাজার ১১৬টি কেন্দ্রে একযোগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত আটটি সাধারণ বোর্ডের অধীন এসএসসিতে বাংলা (আবশ্যিক) প্রথমপত্র, সহজ বাংলা প্রথমপত্র এবং বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রথমপত্রের পরীক্ষা ছিল। মাদ্রাসা বোর্ডের দাখিলে কুরআন মাজিদ ও তাজবীদ এবং কারিগরি বোর্ডের এসএসসি ভোকেশনালে সকালে বাংলা-২ (১৯২১) সৃজনশীল এবং বিকালে বাংলা-২ (৮১২১) সৃজনশীল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের হরতালের কারণে পিছিয়ে দেয়া হয়। হরতালের কারণে সাপ্তাহিক ছুটির দিনই পরীক্ষার তরিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরীক্ষা আয়োজনে কঠোর নিরাপত্তা ॥ অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা হওয়ায় নিরাপত্তাহীনতা আর উৎকণ্ঠায় ছিল শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বাড়তি নিরাপত্তা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। এছাড়া মোবাইল টিমও কাজ করে। পরীক্ষা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করতে আগেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পরীক্ষা অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্তদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, রেলপথ এবং বিদ্যুত বিভাগের কাছে চিঠি দেয়া হয়। পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে উত্তরপত্র এবং ওএমআরসহ গোপনীয় কাগজপত্র শিক্ষাবোর্ডগুলোয় প্রেরণের লক্ষ্যে ডাকঘর খোলা রাখার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং রেলওয়ে পার্সেল বিভাগ খোলা রাখার জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়েও পত্র দেয়া হয়েছে। আর পরীক্ষাকালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ করার জন্য বিদ্যুত বিভাগের সচিবকে অনুরোধ করা হয়েছে। এর বাইরে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারকে (এসপি) আলাদা চিঠি দিয়েছেন শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান। শিক্ষা সচিবের পত্রে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে নিরাপত্তা দেয়া, প্রশ্নপত্র, উত্তরপত্র, ওএমআর ফরমসহ পরীক্ষা সামগ্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের পদক্ষেপ, প্রশ্ন ফাঁসের গুজব রটনাকারীকেও ১৯৮০ সালের পরীক্ষা আইন ও ২০০৬ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসহ মোট ৮ দফা নির্দেশনা রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ১০টি শিক্ষাবোর্ডে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে পরীক্ষা সংক্রান্ত কন্ট্রোল রুমের জন্য লিংক স্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের হোমপেজে এক্সাম কন্ট্রোল রুম নামক মেন্যুতে কন্ট্রোল রুমের ই-মেইল আইডি, জাতীয় মনিটরিং কমিটির সদস্যদের ফোন নম্বর ও ই-মেইল আইডি দেয়া হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বর হচ্ছে ৯৫৪৯৩৯৬। এ ছাড়া দুটি ইউনিক মোবাইল ফোন ০১৭৭৭-৭০৭৭০৫ ও ০১৭৭৭-৭০৭৭০৫। পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে একটি জাতীয় মনিটরিং কমিটিসহ মোট ১২টি মনিটরিং কমিটি গঠন করে কাজ শুরু করে একদিন আগেই। সারাদেশে পরীক্ষা কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। ঠিক এমন এক নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেই শুক্রবার থেকে শুরু হয় ১০ বোর্ডের পরীক্ষা। ভয় কাটিয়ে পরীক্ষা শুরু ছুটির দিনে ॥ টানা অবরোধের মধ্যে ভয় ও শঙ্কা নিয়েই শুক্রবার দেশব্যাপী শেষ হলো এসএসসি ও সমমানের প্রথম দিনের পরীক্ষা। সকাল নয়টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনো রকম বাধা ছাড়াই বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা শেষ হয়। রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি স্থান থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার কথা জানা গেছে। অভিভাবকরাও বেশ খুশি। প্রথম পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর অভিভাবকরা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, আগামী পরীক্ষাগুলো এভাবেই শান্তিপূর্ণভাবে হবে। সকাল নয়টার আগেই অভিভাবকরা কেউ গাড়িতে আবার কেউ মোটরসাইকেল করে তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজির হন। প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রের পুলিশ ও বিডিআর-এর বাড়তি নজরদারি লক্ষ্য করা গেছে। কোনো কোনো কেন্দ্রের বাইরে ছাত্রলীগ ও ১৪ দলের নেতাকর্মীদেরও পাহাড়া দিতে দেখা গেছে। শিক্ষামন্ত্রীসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। সকালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আজিমপুর সরকারী গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বলেন, সারাদেশেই সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা হচ্ছে। কোথাও কোন অঘটনের খবর পাওয়া যায়নি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আজ হরতাল দেয়ার মতো কোন পরিস্থিতি ছিল না। এই দিনে যারা হরতাল দেয় তারা কোন রাজনীতি করে? এর উদ্দেশ্য পরীক্ষা প্রতিহত করা। পরীক্ষার মধ্যে হরতাল না দিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা বাধাগ্রস্ত করতে আর কোন কর্মসূচী দেবেন না। আশা করছি আপনাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হবে। এবার কোনো প্রশ্ন ফাঁস হয়নি এবং ফেসবুকেও এ ধরনের কোন তৎপরতা দেখা যায়নি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিভ্রান্তি ছড়াবেন না, জাতিকে বিভ্রান্ত করবেন না। আজিমপুর সরকারী গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষমাণ পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। এরপর মন্ত্রী আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
×