ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভিড় আজ কয়েকগুণ বাড়বে

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ভিড় আজ কয়েকগুণ বাড়বে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মন্দ হচ্ছে না মেলা। মোটামুটি জমজমাট। যারা বইয়ের মানুষ, সবাই আসছেন। কেউ বিকেলে। সন্ধ্যার পর কেউ কেউ। লেখক পাঠক প্রকাশকদের উপস্থিতিতে সরব হয়ে উঠছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। তবে শুক্রবারের আলাদা ব্যাপার। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আজ মেলায় ভিড় কয়েকগুণ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বই বিক্রির যে উৎসব, সেটিরও আনুষ্ঠানিক শুরু হবে আজ থেকে। সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছে আয়োজক বাংলা একাডেমি ও প্রকাশকরা। বৃহস্পতিবার মেলা ঘুরে দেখা যায়, সব স্টলেই বই বেড়েছে। নতুন বই স্টলের সামনের অংশে মেলে ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে রাখা হয়েছে জনপ্রিয় পুরনো প্রকাশনা। মেলা শুরু হওয়ার পর প্রথম শিশু প্রহর অনুষ্ঠিত হবে আজ শুক্রবার। এ উপলক্ষে সকাল থেকেই গেট খোলা থাকবে মেলার। শিশুপ্রহরের সময়কাল সকাল ১১টা থেকে বেলা ২টা। সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করবেন শিল্পী হাশেম খান। আর বই কেনা তো চলবেই। আজ বাবা-মায়ের হাত ধরে মেলায় আসবে শিশু-কিশোররা। তাদের জন্য বিশেষভাবে সাজবে স্টলগুলো। মূল আয়োজন থাকবে বাংলা একাডেমি চত্বরে। এখানে আলাদা করে শিশু কর্নারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিশুদের বইয়ের প্রকাশকরা স্টল সাজিয়েছেন এ অংশে। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নামগুলোও শিশুতোষ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ঝিঙেফুল, ঘাসফড়িং, শিশু ঘর, টইটুম্বুর, সিসিমপুর, বইপোকা, চলন্তিকা বই ঘর, ছোটদের মেলা, শিশু রাজ্য, ওয়ার্ল্ড অব চিলড্রেনস বুক, শিশু ঘর, কিশোর ভুবনসহ বেশ কিছু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। চমৎকার আয়োজন আছে সরকারী প্রতিষ্ঠান শিশু একাডেমির। অবশ্য সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান অংশেও আছে ছোটদের বই। অধিকাংশ স্টলেই শিশুদের জন্য বই সাজিয়ে রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলা প্রকাশ নামের একটি স্টলের সামনে গিয়ে দেখা যায় শিশুদের বইয়ের বড় একটি সংগ্রহ। এই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে মেলায় এসেছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সায়েন্স ফিকশন সমগ্র’, অপূর্ব দত্তের ‘বাঘের মুখে পিলপিলেদা’, কাজী জহিরুল ইসলামের ‘ছয় ঠ্যাংঅলা সাপ’। আছে মজার মজার অনুবাদ বেশিরভাগ অনুবাদ করেছেন কাজরী রায় চৌধুরী। বইগুলোর শিরোনামÑ ‘অহংকারী ময়ূর’, ‘মা ও আমি’, ‘তোমার বাড়ি কোথায়’ ও ‘ঘুমন্ত সুন্দরীর গল্প’। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা জানায়, কয়েকদিনের মধ্যে মেলায় আসবে শ্যামল চক্রবর্তী সম্পাদিত ‘বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্রের কিশোর রচনা সমগ্র’, রতনতনু ঘটীর ‘ছেঁড়া কাগজের নৌকা’ ও শাহনেওয়াজ চৌধুরীর ‘টুকটুকি আর হালুম’। স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হয় বাংলা প্রকাশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহেদি হাসানের সঙ্গে তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বই প্রকাশ করে থাকি। তবে শিশুদের জন্য থাকে আলাদা প্রস্তুতি। ছোট ছোট ছেলেমেয়ের মনস্তত্ত্ব বুঝে বই প্রকাশ করার চেষ্টা করি। এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। আজ শুক্রবার মেলার প্রথম শিশু প্রহরে বাংলা প্রকাশের স্টলে শতাধিক শিশুতোষ বই পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি। ১৫৪ নতুন বই ॥ অমর একুশে গ্রন্থমেলা পঞ্চম দিন বৃহস্পতিবার মেলায় নতুন বই এসেছে ১৫৪টি। নজরুল মঞ্চে ৪টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। মেলা মঞ্চের আয়োজন বিকেলে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক গোলাম মুস্তাফা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক মনসুর মুসা এবং হাকিম আরিফ। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল কাইউম। প্রাবন্ধিক বলেন, ভাষা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে সুনীতিকুমার বাঙালীর জীবন-ইতিহাসের সামগ্রিক রূপ অনুসন্ধান করেছেন, কিন্তু তাতে তৃপ্ত না হয়ে তিনি সমগ্র ভারতের জীবন ও সংস্কৃতিকে অধ্যয়ন ও আস্বাদন করেছেন। তিনি বিশ্বের সকল জাতির জীবন ও সংস্কৃতির প্রতিই আগ্রহী ছিলেন। মানুষের সৃজনশীলতার সকল প্রচেষ্টাকেই তিনি উপলব্ধি ও উপভোগ করতে চেয়েছেন। নিজেকে প্রসারিত করতে চেয়েছেন বিশ্বের বিদ্বৎ-চর্চার ধারায়। পা-িত্যে-মনীষার-রসোপভোগ্যতায় তাঁর তুলনা বিরল। একশ‘ পঁচিশতম জন্মবর্ষে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি আমাদের আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই। আলোচকদ্বয় বলেন, ভাষাবিজ্ঞানে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের অবদান অনন্যসাধারণ। ভাষাবিজ্ঞান চর্চায় আধুনিকতা ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োগের মাধ্যমে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন। বাংলা ভাষার পাশাপাশি অন্যান্য ভারতীয় ভাষাগোষ্ঠীর উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়েও তিনি নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মোহাম্মদ কাউয়ুম বলেন, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ছিলেন বহুমাত্রিক ভাষাবিদ। তাঁর স্মরণে বাংলা একাডেমি আলোচনা সভার আয়োজন করে তাঁর কাছে বাঙালীর ঋণ স্বীকারের যে সূচনা করল, এ জন্য বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানাই। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী রেবেকা সুলতানা, মাহমুদুজ্জামান বাবু, হায়দার হোসেন, সন্দীপন দাস, বদরুন্নেসা ডালিয়া, শ্যামা সরকার এবং ফারহানা শিরিন।
×