ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী

মানুষ হত্যা ও সহিংসতা বন্ধের দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের অবস্থান শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

মানুষ হত্যা ও সহিংসতা বন্ধের দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের অবস্থান শুরু

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে মানুষ হত্যা, দেশব্যাপী সহিংসতা বন্ধ এবং যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ছয় দফা দাবিতে শাহবাগে টানা অবস্থান কর্মসূচী শুরু করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জাতীয় জাদুঘর ও শাহবাগ থানার মধ্যবর্তী রাস্তায় অবস্থান নিয়ে কর্মসূচী শুরু করে মঞ্চের ইমরান এইচ সরকার পক্ষের সমর্থকরা। একই দাবিতে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সংবাদ সম্মেলন ও সমাবেশ করেছে মঞ্চের কামাল পাশা চৌধুরী পক্ষের সমর্থকরা। বিকেলে দুইপক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচীতে শাহবাগে প্রচ- হট্টগোল ও যানজটের সৃষ্টি হয়। এদিন সকাল থেকেই ইমরান এইচ সরকারের সমর্থকরা রাস্তার ওপরে অবস্থান নিয়ে সেøাগান দিয়ে কর্মসূচী শুরু করে। এরপর এতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্র ফ্রন্টসহ কয়েকটি ছাত্র সংগঠন ও সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা যোগ দেয়। শিক্ষক-সংস্কৃতি কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। এ সময় মঞ্চের একাংশের মুখপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকার বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে মানুষ হত্যা ও এসএসসি পরীক্ষার সময় হরতাল বন্ধ, যুদ্ধাপরাধীদের রায় কার্যকর, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নে টানা অবস্থান কর্মসূচী পালন করছে গণজাগরণ মঞ্চ। সহিংস আন্দোলন বন্ধসহ দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত মঞ্চের কর্মীরা ঘরে ফিরবে না। তিনি আরও জানান, একই সঙ্গে সারাদেশে মঞ্চের গণস্বাক্ষর কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। সবাইকে গণস্বাক্ষর কর্মসূচীতে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। দুপুরে শাহবাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কামাল পাশা চৌধুরী বলেন, গণজাগরণের দুই বছর পরে এসে একদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজে ধীরগতি এবং বিচার সম্পন্ন হওয়া যুদ্ধাপরাধীদের রায় কার্যকরে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত হরতাল-অবরোধের নামে সর্বত্র সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করছে। আজ সময় এসেছে এ অপশক্তিকে রুখে দিতে রাস্তায় নামার। দুই বছর আগে যেভাবে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম, ঠিক একইভাবে আমরা আবার প্রতিরোধ গড়ে তুলবো। এ সময় তিনি চার দফা দাবির কথা তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ ত্বরান্বিত করা, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ, পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যাকারীদের, সহিংসতা ও সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান এবং জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস দমনে সংসদে বিশেষ আইন পাশ। এ সময় ব্লগার এ্যান্ড অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক (বোয়ান), যুদ্ধাপরাধ বিচারমঞ্চ, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, জাসদ ছাত্রলীগ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, গৌরব ৭১, প্রাণের ৭১ ও ছাত্র মঞ্চের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিকেলের সমাবেশে কামাল পাশা চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং এফ এম শাহীনের উপস্থানায় বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমীন মজুমদার, ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি শামসুল ইসলাম সুমন প্রমুখ। অন্যদিকে ‘মানুষ হত্যার রাজনীতি বন্ধ কর করতে হবে’, ‘হত্যা খুনের রাজনীতি, চাই না’, ‘যে হাত মানুষ পোড়ায় সে হাত ভেঙ্গে দাও’ এবং ‘আমার ভাই পুড়ছে কেন? প্রসাশন জবাব চাই সহ বেশ কয়েকটি সেøাগানে শাহবাগ মুখর করে রাখেন ডাঃ ইমরান এইচ সরকারের সমর্থকেরা। গতকাল ৫ই ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। ঠিক দুই বছর আগের এ দিনটিতে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে দেশের সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। সেই তীব্র আন্দোলনের মুখে আইন পরিবর্তন করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হয়। এরপর আবার দুই বছর পরে সেই একই জায়গাতে সাধারণ মানুষ জড়ো হয়েছে বিচারের রায় কার্যকর করা এবং দেশব্যাপী সহিংস আন্দোলনের নামে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার প্রতিবাদ জানাতে।
×