ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ পরীক্ষা শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

আজ পরীক্ষা শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতালের কারণে দুই দফা পেছানোর পর অবশেষে আজ অবরোধের মধ্যেই দেশজুড়ে শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। ২৭ হাজার ৮০৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ শিক্ষার্থী এবার এ পরীক্ষায় বসছে। সারাদেশে তিন হাজার ১১৬ কেন্দ্রে একযোগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে পরীক্ষার ‘প্রশ্ন’ ফাঁস বা ভুয়া প্রশ্ন তৈরি করে যেন কেউ বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে সে জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক মনিটর করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত আটটি সাধারণ বোর্ডের অধীন এসএসসিতে বাংলা (আবশ্যিক) প্রথম পত্র, সহজ বাংলা প্রথম পত্র এবং বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রথম পত্রের পরীক্ষা রয়েছে। মাদ্রাসা বোর্ডের দাখিলে কোরান মাজিদ ও তাজবীদ এবং কারিগরি বোর্ডের এসএসসি ভোকেশনালে সকালে বাংলা-২ (১৯২১) সৃজনশীল এবং বিকেলে বাংলা-২ (৮১২১) সৃজনশীল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ রাজনৈতিক দল, শিক্ষকসহ সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেছেন। মন্ত্রী সকাল ৯টায় আজিমপুর সরকারী গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। এরপর তিনি আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের হরতালের কারণে পিছিয়ে দেয়া হয়। হরতালে এসএসসির দ্বিতীয় দিনের অর্থাৎ ৪ ফেব্রুয়ারির পরীক্ষাও পিছিয়ে যায়। ওই পরীক্ষা আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে। ফলে হরতালের কারণে সাপ্তাহিক ছুটির দুই দিন পর পর দুটি বিষয়ের পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। গত ৫ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী বিএনপির লাগাতার অবরোধের ফাঁকে ফাঁকেই হরতাল থাকছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেছে, হরতালের দিন নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পরীক্ষা নেয়া হবে না। এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাত লাখ ৩৩ হাজার ২২০ জন ছাত্র এবং ছয় লাখ ৯৯ হাজার ৫২৫ জন ছাত্রী। গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৭২৭ জন অংশ নিয়েছিল। সে হিসেবে এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে ৪৬ হাজার ৫৩৯ জন। আটটি সাধারণ বোর্ডের এসএসসিতে ১১ লাখ ১২ হাজার ৫৯১ জন, দাখিলে দুই লাখ ৫৬ হাজার ৩৮০ জন এবং এসএসসি ভোকেশনালে এক লাখ ১০ হাজার ২৯৫ জন পরীক্ষা দেবে। বাংলা দ্বিতীয় পত্র এবং ইংরেজী প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র ছাড়া অন্য সব বিষয়ের পরীক্ষা এবার সৃজনশীল প্রশ্নে হবে। এবারই প্রথম গণিত ও উচ্চতর গণিতের প্রশ্ন হবে ‘সৃজনশীল’ পদ্ধতিতে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী স্ক্রাইব (শ্রুতি লেখক) সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। এ ধরনের প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় দেয়া হবে। বিএনপি-জামায়াতের হরতালের কারণে ২০১৩ সালে এসএসসির ৩৭টি বিষয় এবং এইচএসসির ৪১টি বিষয়ের পরীক্ষা পেছাতে বাধ্য হয়েছিল কর্তৃপক্ষ। ওই বছরের জেএসসি-জেডিসির ১৭টি বিষয় এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনীর দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হরতালের কারণে পিছিয়ে দেয়া হয়। এ ছাড়া গত বছরের শেষ দিকে জেএসসি-জেডিসি এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী পরীক্ষাও বিএনপির হরতালের কবলে পড়লে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। এদিকে অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা হলেও নিরাপত্তাহীনতা আর উৎকণ্ঠায় রয়েছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। তবে পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে গ্রহণের সব বোর্ডে প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কিমিটির সভাপতি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপত আবু বক্কর ছিদ্দিক। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বাড়তি নিরাপত্তা দেয়ার নির্দশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া মোবাইল টিম কাজ করবে বলে জানান ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষার নেয়ার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি। এদিকে পরীক্ষার ‘প্রশ্ন’ ফাঁস বা ভুয়া প্রশ্ন তৈরি করে যেন কেউ বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে সে জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক মনিটর করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। ফেসবুক ছাড়াও অন্য কোনভাবে যেন কোন চক্র প্রশ্ন ফাঁস করতে না পারে সেদিকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। পরীক্ষার সময় এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা রাখা হবে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা। পরীক্ষা উপলক্ষে ২৯ জানুয়ারি থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়। পাবলিক পরীক্ষার সময় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে অনুপস্থিত-বহিষ্কার শিক্ষার্থী-শিক্ষকের সংখ্যা জানানো হলেও গত প্রাথমিক সমাপনী, জেএসসি-জেডিসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের পর এবার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ আরও শক্তিশালী করা হয়েছে বলে জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কম্পিউটার প্রোগ্রামাররা নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক ওয়েবসাইট মনিটর করছে। প্রশ্নের নামে বিভিন্ন পাতার ইউআরএল থেকে তা ডাউনলোড করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২-৩টি ইউআরএল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সচিবালয়ে ৬ নম্বর ভবনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১৭২২ নম্বর কক্ষে পরীক্ষা সংক্রান্ত এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ফোন নম্বর : ৯৫৪৯৩৯৬ ও ০১৭৭৭৭০৭৭০৫, ০১৭৭৭৭০ ৭৭০৬। এ ছাড়া সর্বক্ষণিক যে কেউ নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ই-মেইলে (examcontr [email protected]) যোগাযোগ করতে পারবে। সংশ্লিষ্ট ফোন নম্বর এবং ইউআরএল বিটিআরসি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে। পরীক্ষার দিনগুলোয় চারজন দায়িত্ব পালন করবেন। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ভাল রেসপন্স পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (মাধ্যমিক-২) রুহী রহমান। তিনি বলেন, পরীক্ষার সময় প্রয়োজনে ২৪ ঘণ্টা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা রাখা হবে। যুগ্ম-সচিব (মাধ্যমিক-১) জাকির হোসেন ভুঁঞা বলেন, ফেসবুকে যে লিঙ্ক আসছে তা ডাউনলোড করে বিটিআরসিকে জানানো হচ্ছে। প্রশ্নের নামে যে লিঙ্ক পাওয়া যাচ্ছে তা বানান ভুল এবং পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে সঙ্গতি নেই। বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য এগুলো করা হচ্ছে।
×