ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টানা অবরোধ হরতালে পুড়ছে অর্থনীতি, দিন দিন ক্ষতি বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৮:১৬, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

টানা অবরোধ হরতালে পুড়ছে অর্থনীতি, দিন দিন ক্ষতি বাড়ছে

রহিম শেখ ॥ টানা অবরোধ ও হরতালের প্রভাবে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি। শিল্পের উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকের নিচে। পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় তৈরি পোশাক রফতানি ও আদেশ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা পুঁজিহারা হচ্ছেন। অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘœ ঘটায় খেতেই পচে যাচ্ছে কৃষকের পণ্য। পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতির সব খাতে প্রতিদিন অন্তত ১৬০০-২০০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এ হিসাবে গত ৩০ দিনের টানা অবরোধ ও হরতালে আর্থিক খাতেই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। ব্যবসাবাণিজ্যের আর্থিক খাতগুলোর বাইরেও শিক্ষাসহ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার নানা পর্যায়ে ক্ষতির পরিমাণ হিসেবের বাইরে। অর্থনৈতিক মন্দায় বিনিয়োগসহ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যাংক-বীমা-পুঁজিবাজারে। হরতাল-অবরোধের নামে এমন অর্থনৈতিক বিধ্বংসী কর্মকা- বন্ধ করা না হলে এই মন্দা আরও দীর্ঘায়িত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, গত ৫ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ চলছে। এর মধ্যে দেয়া হয়েছে হরতালও। ৩০ দিনের অবরোধ ও হরতালে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের দেয়া পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ৩১ জন। মারাত্মক দগ্ধ হয়েছেন ১১২ জন। ৯ শতাধিক যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ১০ দফা নাশকতা চালানো হয়েছে রেলে। সার্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আগুনে মানুষের সঙ্গে পুড়ছে অর্থনীতিও। টানা অবরোধ ও হরতালে পরিবহন, কৃষি, পোশাক ও উৎপাদন শিল্পসহ অন্য খাতগুলোর ক্ষতি দিন দিন বাড়ছে। মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিল্পের উৎপাদন। অনিশ্চতয়তার মুখে পোশাক রফতানির অর্ডার বাতিল করছেন বিদেশী ক্রেতারা। হরতাল-অবরোধ দীর্ঘায়িত হলে সামগ্রিক অর্থনীতির ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া কঠিন হবে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। দোকানপাট খুলতে না পেরে বাধ্য হয়ে প্রতিবাদের জন্য রাজপথে নামছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। শীঘ্রই হরতাল-অবরোধ বন্ধ না হলে কাঁচাবাজারসহ সমস্ত দোকানপাট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন দোকান মালিক ব্যবসায়ীরা। হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি ‘দেশ বাঁচাও অর্থনীতি বাঁচাও’ এই সেøাগান নিয়ে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত সারাদেশে অবস্থান কর্মসূচী পালন করবে এফবিসিসিআই। শুধু ব্যবসায়ী নয়, হরতাল-অবরোধের করাঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরাও। পরিবহন ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিজাত রফতানি পণ্য সরবরাহ। পরিবহনের অভাবে সবজি ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে। দাম পাবে না বিধায় ক্ষেত থেকে ফসল তুলছে না কৃষক। অথচ দেশজ মোট উৎপাদন (জিডিপিতে) শাকসবজির অবদান হচ্ছে এক দশমিক ৯১ শতাংশ। কিন্তু বর্তমান এ ক্ষতির কারণে কৃষি প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভাষায় পরিস্থিতি কতটা খারাপ তা বলা মুশকিল। হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস কর্মসূচীর বিষয়ে জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিলের (ইউএনডিপি) এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ৪৪ শতাংশ লোক মনে করেন হরতালের কারণে দেশের ব্যবসাবাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে। ২০ শতাংশ মনে করেন, হরতাল জাতীয় অর্থনীতির ক্ষতি করে। ৯৫ শতাংশ মানুষ হরতাল পছন্দ করেন না। বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের ছয় মাসে দেশে মোট ৫৫টি হরতাল-অবরোধ হয়েছে। ওই সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় ক্ষতি হয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১৮০ দিনের মধ্যে ওই হরতাল-অবরোধ হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে একদিনের হরতালের কারণে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিবহন খাতে ক্ষতি ৩০৩ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ২৮৮ কোটি টাকা, বস্ত্র ও গার্মেন্টস খাতে ২৫০ কোটি টাকা এবং পর্যটন খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) বলেছে, হরতাল বা অবরোধ কর্মসূচী দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতি ডেকে আনে। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, একদিনের হরতাল বা অবরোধের কারণে দেশের প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়, যার সিংহভাগই ব্যবসায়ীদের। গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) তথ্য মতে, ১ দিন অররোধ/হরতাল থাকলে ৬৯৫ কোটি টাকার পোশাক রফতানি বাধাগ্রস্ত হয়। আর প্রতিদিন এই শিল্পে প্রকৃত উৎপাদনের মূল্যমান হচ্ছে প্রায় ৪৩০ কোটি টাকা। যদি উৎপাদন হরতাল/অবরোধের কারণে ৫০ শতাংশও বিঘিœত হয়, তাহলে প্রতিদিন উৎপাদন ব্যাহত হয় অন্তত ২১৫ কোটি টাকার। সংগঠনটি বলছে, বিশ্ব মন্দার কারণে ইউরোপ এবং আমেরিকাতে রফতানি প্রতিবছরই হ্রাস পাচ্ছে। আর হরতাল-অবরোধের কারণে রফতানিতে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিজিএমইএ’র সভাপতি আতিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, অবরোধের কারণে তাদের প্রতিদিন প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। টানা অবরোধ ও হরতালে ৩০ হাজার কোটি টাকার রফতানি বাণিজ্য হুমকির মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, প্লাস্টিক, পাট ও পাটজাত পণ্য, নিটওয়্যার, চিংড়ি, চামড়াসহ অন্যান্য রফতানি পণ্য খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অবরোধ-হরতাল শিল্প খাতে আমদানি ও রফতানিসহ পণ্য উৎপাদন, পরিবহন ও জাহাজীকরণে বাধা হচ্ছে। পর্যটন খাতে ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে ৫০ কোটি টাকা। পোলট্রি খাতের ক্ষতি প্রতিদিন ২০ কোটি টাকার বেশি। চলমান অবরোধে চট্টগ্রামেও দৈনিক ক্ষতি হচ্ছে দুই শতাধিক কোটি টাকা। অন্যদিকে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ব্যবসা ও পর্যটন খাতে প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। অপরদিকে এক দিনের হরতালে শিক্ষা খাতে ৫০ কোটি টাকা ক্ষতির কথা বলা হয়। তবে পাঠদান থেকে বিরত শিক্ষার্থীদের ক্ষতির পরিমাণ কোন টাকার সংখ্যা দিয়েই হিসাবযোগ্য নয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সূত্র জানায়, মোট দেশজ আয়ের ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ অবদান রাখছে পরিবহন খাত। সার্বিকভাবে হরতাল-অবরোধে তাদের প্রতিদিন প্রায় ২০০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়। এ হিসাবে গত ৩০ দিনে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। আর এ খাতের চলাচল বাধাগ্রস্ত হলে পুরো অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ জনকণ্ঠকে বলেন, এই হরতাল-অবরোধ দেশের অধিকাংশ মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। কেননা, হরতালে ব্যবসাবাণিজ্য ও অর্থনীতির অনেক ক্ষতি হচ্ছে। মারাত্মক ঝুঁকিতে আছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি, সব ধরনের ব্যবসাবাণিজ্যের নিরাপত্তা দিতে হবে। সবার উপরে দেশ কর্মসূচী প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছে দেশ ও দেশের অর্থনীতিই বড়। রাজনীতিবিদরাও দেশের কাজ করছেন কিন্তু তাঁরা আগুনে পোড়া মানুষ দেখছেন না। রাজনৈতিক দাবি আদায়ের জন্য যে ধরনের সহিংসতা করা হচ্ছে তা সব ধরনের মানবিকতাকে হার মানিয়েছে। তিনি বলেন, এফবিসিসিআইয়ের এই কর্মসূচীর প্রতি ব্যবসায়ীসহ দেশের সাধারণ জনতাও শামিল হবেন। সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, চলমান হরতাল-অবরোধে অর্থনীতির তাৎক্ষণিক ক্ষতি, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হচ্ছে। তাৎক্ষণিক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে-শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হওয়া, কৃষিপণ্য নষ্ট হওয়া এবং ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে কৃষকের বঞ্চিত হওয়া, রফতানি বাধাগ্রস্ত হওয়া, স্বল্প আয়ের মানুষের আয় কমে যাওয়া। মধ্যমেয়াদী ক্ষতির মধ্যে সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হবে বিনিয়োগ কমে যাওয়া। এই পরিস্থিতিতে দেশী এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীরা যেসব বিনিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেগুলো বন্ধ করে দেবেন। আর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মধ্যে সরকারের যেসব বড় প্রকল্প রয়েছে সেগুলোও থমকে যাবে। তিনি আরও বলেন, সার্বিক দিক বিবেচনা করে বলা যায়-এই হরতাল-অবরোধ জিডিপির প্রবৃদ্ধি চরমভাবে বাধাগ্রস্ত করবে। এ কারণে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে এমন কোন কর্মসূচী রাজনৈতিক দলগুলো যেন না দেয়। আর রাজনৈতিক অস্থিরতা দ্রুত নিরসনে একটা সমঝোতায় আসা এখন সময়ের দাবি। পণ্য সরবরাহে বিপর্যয় ॥ টানা অবরোধে ভেঙ্গে পড়েছে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা। রাজধানীতে কৃষিপণ্য আসছে খুবই সীমিত। পরিবহন সঙ্কটের কারণে খেতেই নষ্ট হচ্ছে কৃষকের সবজি। বেশি ভাড়া দিয়ে পণ্য বিক্রি করে কৃষকের খরচ উঠছে। পুলিশ পাহারায় মহাসড়কে পরিবহন চলছে সীমিত আকারে। ঝুঁকি নিয়ে পণ্য পরিবহন করতে হামলার শিকার হচ্ছেন অনেকে। যশোর, দিনাজপুর, বগুড়া, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহের কৃষক, পাইকার ও ট্রাকচালক এবং ঢাকার কাওরান বাজারের আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। শিল্পের চাকার গতি কমেছে ॥ হরতাল-অবরোধের কারণে শিল্প খাতের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একদিনের হরতাল-অবরোধের কারণে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ২৫ শতাংশ উৎপাদন সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিজিএমইএর মতে, প্রায় ৩৫ শতাংশ সক্ষমতা নষ্ট হয়। অবরোধের ফলে শ্রমিকরা ঠিকমতো কাজে যেতে পারছে না। গেলেও তাদের পরিবহন খরচসহ অন্যান্য খরচ বাড়ছে। উৎপাদিত পণ্য বিপণন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পণ্যবাহী পরিবহন আক্রান্ত হচ্ছে। বন্দর থেকে কাঁচামাল সময়মতো কারখানায় পৌঁছানো যাচ্ছে না। এতেও ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন ব্যবস্থা। ফলে কোম্পানির খরচ বেড়ে যাচ্ছে। মানুষের আয় কমে যাওয়ায় পণ্য কেনা কমিয়ে দিচ্ছেন। এর পুরো নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে গিয়ে অর্থনীতির ওপর। এফবিসিসিআইর সূত্র জানায়, উৎপাদন ব্যবস্থা বন্ধ থাকার পরেও শিল্প প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন খরচ, কর্মীদের বেতন-ভাতা, ব্যাংক ঋণের সুদ দিতে হচ্ছে। ফলে খরচ বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু আয় বাড়ছে না। ফলে ব্যবসায়ীরা সার্বিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছেন। সময়মতো ঋণ শোধে ব্যর্থতার কারণে ব্যাংকে খেলাপী ঋণের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে যা ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পরিবহন খাত ॥ পরিবহন মালিকরা জানান, ঢাকা থেকে সারা দেশে বাসে প্রতিদিন ২ লাখ যাত্রী চলাচল করে। অবরোধের কারণে ৭৬ হাজার বাস এবং পণ্য পরিবহনকারী যান চলাচল করছে সীমিত আকারে। এতে প্রতিটি পরিবহনের প্রতিদিন গড়ে ৭ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। বাংলাদেশ ট্রাক কার্ভাড ভ্যান মালিক সমিতির দেয়া তথ্য মতে, সারা দেশে বাস-ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান রয়েছে ৩ লাখ। এর মধ্যে প্রতিদিন আড়াই লাখ গাড়ি চলাচল করে। কিন্তু হরতাল অবরোধে তারা প্রতিদিন ২০০ কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এফবিসিসিআই বলছে, অবরোধের কারণে পরিবহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ২ লাখেরও বেশি বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান অলস পড়ে আছে এবং ২০ লাখেরও বেশি পরিবহন শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ছে। সব মিলিয়ে পরিবহন খাতে দৈনিক প্রায় ২০০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশ ট্রাক কার্ভাড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী বলেন, সারা দেশে তাদের ১ লাখ ২৭ হাজার পরিবহন রয়েছে। এর বেশিরভাগ বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, অর্ধেকের বেশি পরিবহন ঋণে কেনা। এ খাতে আবার আগাম কর দিতে হয়। ফলে অবরোধের কারণে তারা বড় ধরনের ক্ষতিতে রয়েছে। তিনি বলেন, পরিবহনে বেশি সমস্যা হয়, দেশের উত্তারাঞ্চলে। বিশেষ করে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং রংপুর অঞ্চলে গাড়ি চলে না। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে স্বল্প পরিসরে হলেও গাড়ি চলে। আর এ রোডের গাড়ি বন্ধ হলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ক্ষতি হবে বলে মনে করেন তিনি। পর্যটন খাত ॥ অবরোধের কারণে বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছে পর্যটন খাত। স্বাভাবিক সময়ে পর্যটনে দেশের সবচেয়ে বড় লোকেশন কক্সবাজারে ১ লাখ পর্যটক থাকে। বর্তমানে তা ১ হাজারে নেমে এসেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন প্রায় ১ দেড় হাজার পর্যটকবাহী গাড়ি চলাচল করে। কিন্তু বর্তমানে তা ১ থেকে দেড় শ’তে নেমে এসেছে। তবে পুলিশ পাহারায় শুক্রবার ৩৩টি গাড়ি দিয়ে আটকে পড়া পর্যটকদের কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজারের হোটেলগুলোতে ৯০ শতাংশ রুম খালি রয়েছে। অথচ এখন পর্যটনের ভরা মৌসুম। এই সময়ে কক্সবাজারের হোটেল- মোটেলগুলো পর্যটকদের পদভারে মুখরিত থাকে। রাজনৈতিক অস্থিরতায় ২০১৩ সালেও তাদের ব্যবসায় মন্দা গেছে। এবার জমতে শুরু করেছিল। কিন্তু এখন তাতে ধস নেমেছে। রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি এলাকায়ও পর্যটকদের সংখ্যা কমে গেছে। অন্যদিকে ঢাকার পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতে স্বাভাবিক সময়ে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত রুম বুকিং থাকে। বর্তমানে তা ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে। বীমা খাত ॥ সহিংসতার নেতিবাচক প্রভাবে বীমা কোম্পানি দেউলিয়া হওয়ার নজির রয়েছে। অবরোধে যেসব পরিবহন বা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এদের অনেকেরই বীমা করা রয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বীমার ক্ষতিপূরণ দিতে হয় কোম্পানিগুলোকে।
×