ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নতুন চেহারায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

নতুন চেহারায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

মোরসালিন মিজান ॥ অল্প জায়গা। ছোট পরিসর স্টল। সব বই রাখা যায় না। পাঠকও হাতে নিয়ে দেখতে পারেন না। মেলায় ঢুকতে গায়ে গা লাগে। এর পা গিয়ে পড়ে ওর পায়ে। দীর্ঘকাল অমর একুশে গ্রন্থমেলার এই ছিল অবস্থা। দাবি উঠেছিল পরিসর বাড়ানো হোক। বাংলা একাডেমি চত্বরের সঙ্গে যুক্ত করা হোক সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানকে। এর পর বহু তর্ক-বিতর্ক আলোচনা সমালোচনা শেষে গত বছর পরিসর বৃদ্ধি করা হয়। মেলা চলে আসে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত। এবার সে পরিসর আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের যেটুকু গত বছর নেয়া হয়েছিল এবার তার চেয়ে অনেক বেশি জায়গাজুড়ে মেলা। ফলে নতুন একটি চেহারা পেয়েছে। প্রবেশ পথ থেকে সোজা এগুলে গ্লাস টাওয়ার পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া যায়। দুই পাশে বিশাল খালি জায়গা। ন্যাড়া মাথার মতো দেখায়। প্রবেশের পর পাঠক মুক্তমঞ্চ ও রমনা কালিমন্দির অংশে ভাগ হয়ে যান। এ কারণে উপস্থিতি তেমন চোখে পড়ে না। এক অংশের সঙ্গে আরেক অংশের দূরত্ব এত বেশি যে, একটি থেকে অন্যটিকে বিচ্ছিন্ন মনে হয়। উভয় অংশের মধ্যে সংযোগ স্থাপন কঠিন হয়ে পড়ে। স্টলের বেলায়ও তাই। স্টল বাড়লেও বেড়েছে বলে মনে হয় না। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেলার সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, বড় জায়গা ছিল। আমরা সেটি কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। সবার সুবিধার কথা চিন্তা করেই মেলার পরিসর বাড়ানো হয়েছে। মেলায় অবস্থান একটু উপভোগ্য করার জন্য, আরামদায়ক করার জন্য ভেতরের অংশে খোলামেলা জায়গা রাখা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয়ভাবে জায়গা বাড়ানো হয়েছে কিনা তা এখনই বলা যাবে না বলে জানান তিনি। এ জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষার পরামর্শ দেন তিনি। আসছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে নতুন বই ॥ মেলায় এবারও আসছে বিপুল পরিমাণে নতুন বই। না, এখনই সংখ্যা বলা মুশকিল। তবে বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রচুর বই আসছে। নামী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর লম্বা ফর্দ। মাঝারি এবং ছোট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোও বসে নেই। অধিকাংশেরই ৫০ এর বেশি নতুন প্রকাশনা। কোন কোন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নতুন বই কম হলেও মানের দিক থেকে এগিয়ে। এবার অনন্যা থেকে মেলায় আসছে শতাধিক বই। বেশিরভাগই উপন্যাস। এখান থেকে আসবে রাবেয়া খাতুন, সেলিনা হোসেন, ইমদাদুল হক মিলনের মতো খ্যাতিমানদের উপন্যাস। নতুনদের লেখা কিছু উপন্যাসও প্রকাশ করবে অনন্যা। অনুপম প্রকাশনী থেকে এরই মাঝে মেলায় এসেছে ৪০টির মতো বই। আসার কথা রয়েছে আরও প্রায় ৫৫টির। সব মিলিয়ে এখানে পাওয়া যাবে ১শ’র মতো নতুন বই। বিষয়ের দিক থেকেও বৈচিত্র্য থাকছে। মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি, গবেষণা, জীবনী, কবিতা, চিরায়ত গ্রন্থমালা, অনুবাদ, সঙ্গীত, চিকিৎসাসহ নানা বিষয়ে লেখা বই থেকে পছন্দ মতো বই সংগ্রহ করার সুযোগ পাবেন পাঠক। বইমেলায় খুব পরিচিত নাম সময় প্রকাশন। এখান থেকে এবার আসছে ৭০টির মতো নতুন বই। কিছু চলে এসেছে। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সূত্র জানায়, শুক্রবার তাঁরা আনবে জনপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘সেরিনা’। শনিবার আনবে এ সময়ের বেশ জনপ্রিয় উপন্যাসিক আনিসুল হকের উপন্যাস ‘মায়ের কাছে ফেরা’। বাকিগুলো কয়েকদিনের মধ্যেই চলে আসবে বলে জানিয়েছেন প্রকাশকার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। এবার আগামী থেকে এসেছে ৩০টির মতো নত্নু বই। মেলা চলাকালে আরও ২০টির মতো বই আসবে। মাওলা ব্রাদার্স থেকে আসবে প্রায় অর্ধশত বই। ৫০টির মতো নতুন বই আসছে ঐতিহ্য থেকে। গত মেলার পর প্রকাশিত ২৮টি বইও পাওয়া যাচ্ছে এখানে। প্রথমা থেকে আসার কথা রয়েছে ৩০টির মতো বই। গত মেলার পর প্রকাশিত বইসহ সংখ্যাটি হবে ৪৫। সমান সংখ্যক বই বিদ্যা প্রকাশ থেকে আসবে। অবসর থেকে আসবে ৩৫টি বই। গবেষণা প্রবন্ধ রেফারেন্স বই বেশি এখানে। এবারের নতুন বইয়ের প্রস্তুতির চিত্র তুলে ধরে সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, এবারও প্রচুর বই আসবে মেলায়। সেভাবেই আমরা কাজ করছি। মেলার শেষ দিন পর্যন্ত বই আসলেও, অধিকাংশ প্রকাশক চেষ্টা করেন দ্রুত নিয়ে আসার। এ কারণেই মেলার বাইরে অন্য রকম ব্যস্ততা এখন ছাপাখানাগুলোতে। ২১ ফেব্রুয়ারির আগে মোটামুটি সব বই মেলায় চলে আসবে বলে জানান তিনি। চতুর্থ দিনে আসা নতুন বই ॥ একাডেমির তথ্যকেন্দ্র থেকে জানা যায়, মেলার চতুর্থ দিনে ১০২টি নতুন বই মেলায় এসেছে। শিরীন পাবলিকেশন্স থেকে এসেছে সাযযাদ কাদিরের ‘বাংলা আমার’, নবরাগ প্রকাশনী থেকে এসেছে আনু মুহাম্মদের ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, সাম্রাজ্যবাদ ও ভারত প্রশ্ন’। অনন্যা থেকে এসেছে বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের ‘সম্রাট জাহাঙ্গীরের আত্মজীবনী’, সুমন্ত আসলামের ‘কোন কোন রাত একলা এমন’। ঝিঙেফুল থেকে এসেছে শরীফ খানের ‘বাংলাদেশের পাখি’। বিভাস থেকে এসছে যতীন সরকারের ‘সাহিত্যের কাঁধে প্রত্যাশা’। আগামী থেকে এসেছে শাহাদুজ্জামানের ‘কাগজের নৌকায় আগুনের নদী’, সালাহ্্উদ্দিন আহমেদের ‘বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সমকালীন ভাবনা’, ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা ‘সহেনা মানবতার অবমাননা’। স্বরব্যঞ্জন থেকে এসেছে শিহাব শাহরিয়ারের ‘খড়ের খোঁয়ার’। আফসার ব্রাদার্স থেকে এসেছে মুহম্মদ হাবিবুর রহমানের ‘শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ’। অনুপম থেকে এসেছে মাহবুব সাদিকের ‘অনিরুদ্ধের বাঁশি’। মহাকাল থেকে এসেছে জোবায়ের আহমেদ নবীনের ‘প্রাচীর ভাঙার নেশা’। উৎস প্রকাশন থেকে এসেছে মোস্তফা সেলিমের ‘সিলেটী নাগরীলিপির বর্ণমালা’। অনিন্দ্য থেকে এসেছে কাওসার রহমানের ‘ও আমার মেঘ বালিকা।’ নজরুল মঞ্চের মোড়ক উন্মোচন ॥ চতুর্থ দিনও নজরুল মঞ্চে ছিল নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের আনুষ্ঠানিকতা। এদিন কয়েকটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বইগুলোর মধ্যে ছিল কামাল আবদুল্লাহর কবিতাগ্রন্থের অনুবাদ ‘পুশি পুশি’র ও ডাচ কবি জার্মেন ড্রগেনব্রুটের অনুবাদ ‘জোনাকী’। মেলা মঞ্চের আয়োজন ॥ গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশে ছড়াসাহিত্য’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ছড়াকার সুজন বড়–য়া। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ছড়াকাররা ছড়া লেখেন শিশুহৃদয়ের অকৃত্রিম সরলতা দিয়ে। আমাদের ছড়া সামাজিক অঙ্গীকারের চেতনায় পরিপুষ্ট। সামাজিক অসঙ্গতি-অন্যায়-শোষণ ইত্যাদির বিরুদ্ধে শাণিত কণ্ঠের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী আলোয়ে স্নাত আমাদের ছড়ার ভুবন। আলোচনায় আরও অংশ নেন রফিকুর রশিদ, আসলাম সানী, রাশেদ রউফ এবং আলম তালুকদার। সভাপতিত্ব করেন ছড়াকার রফিকুল হক। আজ বৃহস্পতিবার গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক গোলাম মুস্তাফা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন অধ্যাপক মনসুর মুসা এবং হাকিম আরিফ। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল কাইউম।
×