ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সতীর্থদের অনুশীলন করতে দেখে খুবই খারাপ লাগছে, ইনজুরিতে শুক্রবারের সেমিফাইনালে অনিশ্চিত ডিফেন্ডার আতিকুর রহমান মিশু

প্রাণবন্ত অনুশীলনে বাংলাদেশের ফুটবলাররা

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

প্রাণবন্ত অনুশীলনে বাংলাদেশের ফুটবলাররা

স্পোটর্স রিপোর্টার ॥ ‘গত ১ ফেব্রুয়ারি শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব লিমিটেড মাঠে অনুশীলন করার সময় বল ক্লিয়ার করতে ডান পায়ের গোড়ালিতে চোট পাই। ডাক্তার পরীক্ষা করে জানান, ব্যথা আরও কয়েকদিন থাকবে। দু’দিন বিশ্রামে ছিলাম। বুধবার অনুশীলন করার সময় হাল্কা জগিং করতে গিয়ে অনুভব করলাম আবারও ব্যথা করছে। কোচকে জানালাম। তিনি আমাকে বললেন বিশ্রাম নিতে।’ কথাগুলো আতিকুর রহমান মিশুর। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের নির্ভরযোগ্য লেফটব্যাক পজিশনের খেলোয়াড়। চলমান আন্তর্জাতিক ফুটবল আসর ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ’-এ বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠেছে। এখন ফাইনাল খেলার প্রত্যাশায়। তবে স্বপ্নের ফাইনালে নাম লেখাতে হলে আগামী শুক্রবার প্রতিপক্ষ থাইল্যান্ডকে হারাতে হবে বাংলাদেশকে। কিন্তু থাইদের বিরুদ্ধে সেমির এই ম্যাচে মিশুকে খেলতে দেখার সম্ভাবনা কম। কারণটা মিশুর জবানিতে পাঠক একটু আগেই পড়েছেন। গত বছরের অক্টোবরে ইনচন এশিয়ান গেমস খেলতে গিয়েও এ রকম ব্যথা পেয়েছিলেন মিশু। সেটা ছিল কডান পায়ের এ্যাঙ্কেলের চোট। দেশে ফিরে এসেছিলেন টুর্নামেন্টের মাঝপথেই। এখন চোটের যে অবস্থা, তাতে করে মিশুর শুক্রবারের সেমির ম্যাচে খেলা অনিশ্চিত। বুধবার যখন বসে সতীর্থদের প্র্যাকটিস দেখছিলেন, তখন খুব বিষন্ন দেখাচ্ছিল মিশুকে, ‘কি করব বলুন, এটাই বাস্তবতা। একজন প্লেয়ারের ক্যারিয়ারে এমন সময় আসতেই পারে।’ এ কথা বলে যেন সান্ত¡না খুঁজতে চাইলেন মিশু। একটু পর বললেন, ‘তবে আমি সেমির ম্যাচে যদি নাও খেলতে পারি এবং বাংলাদেশ যদি জেতে ফাইনালে যেতে পারে, তাহলে কোন দুঃখ থাকবে না। সবকিছুর উর্ধে আমার দেশ। যে অবস্থাতেই থাকি না কেন, প্রত্যাশা থাকবে আমার প্রিয় বাংলাদেশের সাফল্য। আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমার বাবা (হাবিবুর রহমান চুন্নু, বর্তমানে কানাডা প্রবাসী, স্বাধীনতা যুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরে সিলেটের তামাবিল অঞ্চলে যুদ্ধ করেছেন) নিজের জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছেন, আমিও চাই দেশের ফুটবলের জন্য কিছু করতে।’ শেষ চারের প্রতিপক্ষ থাইল্যান্ড সম্পর্কে মিশুর মূল্যায়ন, ‘থাইরা অনেক শক্তিশালী দল। ওদের দুটি খেলাই টিভিতে দেখেছি। তবে আমরা যেহেতু স্বাগতিক এবং ভাল খেলছি, সেহেতু আমরা তাদের ছেড়ে কথা বলব না। আমরাই জিতব। আত্মবিশ্বাসের কোন কমতি নেই। দলের জয় কামনাই করি।’ টিম বিজেএমসির অধিনায়ক অমিত খান শুভ্র জাতীয় ফুটবল দলের পারফর্মেন্সের উন্নতি ঘটাতে জাতীয় ‘বি’ দল গঠনের জন্য কাজ করছেন। এ ব্যাপারে তিনি ইতোমধ্যেই সবুজ সঙ্কেত পেয়েছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের কাছ থেকে। এ ব্যাপারে মিশুর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বেশ উচ্ছ্বাসই প্রকাশ করেন, ‘শুনেছি অচিরেই জাতীয় ‘বি’ দল গঠন করা হবে। তাহলে খুবই ভাল হবে। এতে করে জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা নিজের অবস্থান ধরে রাখতে সিরিয়াস হবেন, তেমনি ‘বি’ দলের খেলোয়াড়রাও মুখিয়ে থাকবেন ভাল খেলে জাতীয় দলে ঢুকতে।’ জাতীয় দলের ডাচ্ কোচ লোডভিক ডি ক্র্ইুফ প্রসঙ্গে মিশুত বলেন, ‘এ পর্যন্ত যত বিদেশী কোচের অধীনে খেলেছি। তাদের মধ্যে ডিডো এবং ক্রুইফকেই সেরা মনে হয়েছে। ক্রুইফকে একটু বেশি ভাল লাগে। তার কারণÑ তিনি খেলোয়াড়দের খুব ভালভাবে অনুপ্রাণিত করতে পারেন। সেই সঙ্গে একজন খেলোয়াড়কে ভালভাবে বুঝতে এবং তাকে বোঝাতে পারেন তার কাছ থেকে তিনি কি চাইছেন এবং সেই খেলোয়াড়ের করণীয় কি।’ ২০০৭ সালে ভারতে অনুষ্ঠেয় ‘নেহেরু কাপ’-এ প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে অভিষেক হয় কিশোরগঞ্জের ছেলে মিশুর (৪টি আন্তর্জাতিক গোলও আছে তার)। জাতীয় দলে খেলার আগে অনুর্ধ-১৭, ২০ ও ২৩ দলেও খেলেছেন। অনুর্ধ-১৭ দলের অধিনায়কও ছিলেন। ক্লাব ক্যারিয়ার গ্রাফ হচ্ছে এ রকম : ২০০২ সালে ধানম-ি ক্লাব দিয়ে শুরু (তখনও ক্লাবের নামের আগে শেখ জামাল শব্দটি যোগ হয়নি)। তারপর পর্যায়ক্রমে শেখ রাসেল, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, আবাহনী লিমিটেড, শেখ জামাল, আবারও আবাহনী এবং সর্বশেষ আবারও শেখ রাসেলে খেলছেন তিনি। নিজে লেফটব্যাক পজিশনে খেলেন বলে এই পজিশনে তার আদর্শ হচ্ছেন ব্রাজিলের রবার্তো কার্লোস, স্পেনের জর্ডি এ্যালবা এবং বাংলাদেশের মাসুদ রানা। এখন দেখার বিষয়, সেমির ম্যাচে মিশু খেলতে পারেন কি না।
×