ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘নিজের বেলা...’

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

‘নিজের বেলা...’

সত্যজিৎ রায় তাঁর ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবিতে রাজা প-িতের ছাত্র পড়ানো বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন এই বলে যে, ‘যত বেশি জানে, তত কম মানে; এবং জানার কোন শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই।’ প্রজাকুলের সন্তানরা শিক্ষা পেলে মান্যিগন্যি করবে কম। লেখাপড়া জানলে আরও বিপদ। রাজা নিজেও যে শিক্ষিত ছিলেন তা তো নয়। একালে হীরক রাজা নেই। তবে তার চেতনার ধারারজনরা রয়ে গেছেন এই একুশ শতকের রাজনীতিতে। তাই পনেরো লাখ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রতিবন্ধকতার বিপরীতে মাত্র দু’জন শিশুশিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনকে নিরাপদ ও নির্বিঘœ করা হয়েছে। কী অদ্ভুত বৈপরীত্য। জনগণ তথা দেশবাসী কত তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য পর্যায়ের তা স্পষ্ট করা হয়েছে এই মনোভাব থেকে। জনগণের জন্য, জনগণের নামে তাঁরা রাজনীতি করেন বলে দাবিদার। শুধু তাই নয়, তিন দফা দেশ শাসন করেছিলেনও তাঁরা। দেশবাসী এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি তারা যেন শত্রুজ্ঞানে আচরণ করছে। হরতাল-অবরোধ ডেকে নিজেরা ঘরে বসে থেকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী এবং জঙ্গীদের সাহায্যে দেশজুড়ে অরাজকতা, হত্যাযজ্ঞ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের রাজত্ব কায়েম করে চলছে। সরকারের প্রতি ক্ষোভ দেখাতে গিয়ে ব্যর্থকাম হয়ে দরিদ্র নিরীহ মানুষ হত্যা করছে। পেট্রোলবোমায় কেড়ে নিচ্ছে জীবনের পর জীবন। তাদের নিষ্ঠুরতা সীমাহীন বর্বরতার পরিচায়ক। দগ্ধ মানুষের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। সব কিছুকে পঙ্গু, স্থবির অকার্যকর করে দেয়ার নেশায় মত্ত হয়ে তারা নাশকতা অব্যাহত রেখেছে। আর এ সবই করছে রাজনীতির নামে, কথিত চোরাগোপ্তা আন্দোলনের নামে। এসএসসি পরীক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনকে ব্যাহত করছেন যাঁরা, তাঁরাই আবার নিজ উত্তরসূরির শিক্ষার পথ সুগম রাখতে বিদেশ পাঠিয়ে দিয়েছেন। রূপকথায় রাজার পুত্র রাজা, উজির পুুত্র উজির, কোটাল পুত্র কোটালই হয়। আর প্রজাবংশ চিরকালই দমিত থাকে। তাই এই দেশে রাজ-রাজন্যদের সন্তানরা বিদেশে শান্তিতে পড়াশোনা করতে পারছে অথচ দেশের প্রজা সাধারণের সন্তানদের শিক্ষাগ্রহণে নাখোশ তাঁরা হীরক রাজার মতোই। তাই দেশকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছে হরতাল-অবরোধ ডেকে। রাজ-রাজন্যদের দেহে সামান্য আঁচড়ও লাগছে না তাতে। সাধারণ প্রজাকুল যতই হবে অশিক্ষিত, ততই নিপীড়ন, নির্যাতন, শাসন-শোষণ সহজতর হয়। তাই দেশের মানুষকে অশিক্ষার মধ্যে রাখতে বদ্ধপরিকর আজ জঙ্গী ও সন্ত্রাসের ধারক রাজনীতিকরা। যাদের বংশধররা বিদেশে পড়াশোনা করে। তাই দেখা যায়, দেশের ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা হুমকির মুখে পড়লেও কোকোর দুই কন্যার পরীক্ষা যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য শোকের ছায়া মাড়িয়ে কোকোর স্ত্রী কন্যাদের নিয়ে গেছেন মালয়েশিয়া। সেখানকার স্কুলে তাদের পরীক্ষা থাকায় হরতালের মধ্যেও নির্বিঘেœ তারা যেতে পেরেছেন। দেশের সন্তানদের ক্লাস করা ও পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে তাদের ‘পরীক্ষা বঞ্চিত’ করে রাখতে চাচ্ছে তারা। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপার্সন চান না তাঁর নাতনিরা পুত্রদের মতো অর্ধশিক্ষিত হোক। যদিও পুত্রদের শিক্ষার খরচ রাষ্ট্র বহন করত। তথাপি তারা সে পথে না গিয়ে অপরাধের পথ ধরে হেঁটেছেন। তাদের সন্তানরা উচ্চশিক্ষিত হয়ে উঠুক- সবাই চাইবেন। নিজের বংশধরদের নিরাপদ দূরত্বে রেখে শিক্ষিত করে তোলার আপ্রাণ প্রচেষ্টার বিপরীতে তারা দেশের সন্তানদের জীবনকে, ভবিষ্যতকে পেট্রোলবোমায় পুড়িয়ে দগ্ধ করছেন। এই তাঁদের রাজনীতি! বেগম জিয়ার সদ্যপ্রয়াত কনিষ্ঠ পুত্রের দুই কন্যা শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাওয়ায় দেশের শিক্ষামন্ত্রী শুভকামনা জানিয়েছেন, আমরাও জানাই। কিন্তু দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে, অশিক্ষিত জাতি গড়ে তোলার প্রচেষ্টার বিপরীতে নিজ নাতনিদের স্কুল ও পরীক্ষার পথ সুগম রাখা সুস্থ ও স্বাভাবিক মানসিকতার প্রমাণ মেলে কি?
×