ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যাংক কার জন্য

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ব্যাংক কার জন্য

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে এখন প্রচুর অলস টাকা। কিছু দিন ধরেই এই সংবাদটি শোনা যাচ্ছে। এই অলস টাকা সচল রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি ব্যাংকগুলো। বরং এই সুযোগে আমানতের সুদ হার কমছে। মনে করা হচ্ছিল গত নবেম্বর ও ডিসেম্বরে ঋণ চাহিদা কিছুটা বাড়ায় আমানতের সুদহার আর কমবে না। কিন্তু সেই ধারণা হালে পানি পায়নি। উল্টো ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ মতো চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যাংক ঋণ আবারও স্থবির হয়ে পড়েছে। আর এর প্রভাব পড়ছে অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রে। প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, আশানুরূপ ঋণ চাহিদা না থাকায় কিছু দিন ধরে ব্যাংকগুলো ঋণ ও আমানতে সুদহার কমাচ্ছে। তবে ঋণের তুলনায় আমানতের সুদহার বেশি কমাচ্ছে তারা। এতে ঋণ ও আমানতের মধ্যকার সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) আরও বেড়ে গেছে। ব্যাংক থেকে এখন সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিচ্ছে, পরিশোধ করছে সেই তুলনায় বেশি। এতে করে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের নিট ঋণ ধনাত্মক হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব মতে, চলতি অর্থবছরের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আগের একই সময়ের তুলনায় ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের নিট ঋণ ছয় হাজার ৬০ কোটি টাকা ঋণাত্মক হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে সরকার ঋণ নিয়েছিল তিন হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। অভিযোগ রয়েছে, কয়েকটি ব্যাংকের কারণে স্প্রেড নির্ধারিত সীমার ওপরে রয়েছে। এটি কমিয়ে আনার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন। গত ডিসেম্বর মাসে ২৮টি ব্যাংকের স্প্রেড ছিল নির্ধারিত সীমার ওপরে। এই ব্যাংকগুলোর কারণেই গড় স্প্রেড ৫ দশমিক ২১ শতাংশীয় পয়েন্টে থেমেছে। জানা যায়, গত ডিসেম্বরে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোর স্প্রেড ছিল ৪ দশমিক ১৯ শতাংশীয় পয়েন্ট। আগের মাসে যা তিন দশমিক ৫৯ শতাংশীয় পয়েন্টে ছিল। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর স্প্রেড আগের মাসের ৩ দশমিক ৩৪ শতাংশীয় পয়েন্ট থেকে কমে ২ দশমিক ২৯ শতাংশীয় পয়েন্টে নেমে আসে। শুধু তাই নয়, বেসরকারী ব্যাংকগুলোর গড় স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশীয় পয়েন্ট। আর বিদেশী ব্যাংকগুলোর স্প্রেড ৮ দশমিক ১১ শতাংশীয় পয়েন্ট থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৮৪ শতাংশীয় পয়েন্টে। এদিকে সঞ্চয়পত্রের লভাংশ নিয়ে ধূম্রজাল দূর হচ্ছে না। গোটা প্রক্রিয়াতেই সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। এ অবস্থায় বিভিন্ন সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারী গ্রাহকরা পড়েছেন দোটানায়। সঞ্চয়পত্র বিক্রি ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ধীরগতির ফলে ব্যাংক ঋণ তেমন প্রয়োজন হচ্ছে না। জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয়েছে ১৩ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। যা পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩১ শতাংশ বেশি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বর্তমান দুরবস্থার কথা সবার জানা। এই দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে সঞ্চয়পত্রসহ বিভিন্ন আমানতের সুদের হার কমানোর কথা বলা হলেও এই আঘাতটা সরাসরি আসছে মধ্যবিত্তের ওপর। কারণ মধ্যবিত্তের একটা বিরাট অংশের আয়ের উৎস তাদের সঞ্চয়পত্র ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র আমানত। দেশের এমন অনেক পরিবার আছে যারা সঞ্চয়পত্রসহ বিভিন্ন আমানতের লভাংশের ওপর নির্ভরশীল। এই ক্ষেত্রে সুদের হার কমানো মানে অসংখ্য পরিবারের অপ্রত্যাশিত সঙ্কটে পড়া। যদিও বলা হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এবার সরকারের রাজস্ব আয় কমতে পারে। এতে চাপ পড়তে পারে মূল্যস্ফীতির ওপরও। এই অবস্থায় ব্যাংকগুলোকে দুই কূলই রক্ষা করতে হবে। তবে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে মধ্যবিত্তের স্বার্থ যেন ক্ষুণ্ণ না হয়। প্রশ্ন যেন না ওঠে ব্যাংক কার জন্য? এই শ্রেণীর আমানতকারীরা যদি সত্যিকার অর্থে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে প্রথমে সঙ্কটে পড়তে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকেই। বিষয়টি বিশেষভাবে নজর দেয়া জরুরী।
×