ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘লড়াই শুরু ড্রেসিং রুম থেকে’

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

‘লড়াই শুরু ড্রেসিং রুম থেকে’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপের পর্দা উঠবে ১৪ ফেব্রুয়ারি, অথচ বিশ্বের অগণিত ক্রিকেটপ্রেমীর চোখ ১৫ ফেব্রুয়ারির এ্যাডিলেড ম্যাচে! কারণটা অনুমেয়, ওই ম্যাচে মুখোমুখি চিরশত্রু ভারত ও পাকিস্তান। উপহাদেশের আকর্ষণীয় দুই পরাশক্তির লড়াই ঘিরে বইতে শুরু করেছে আগাম উত্তাপ। বিশ্বের যে কোন প্রান্তে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানে অন্যরকম উত্তেজনা, মাঠ ও মাঠের বাইরে আগুনে লড়াই। আর সেটি যদি হয় বিশ্বকাপে তবে তো কথাই নেই। সাবেক পাকিস্তানী তারকা শোয়েব আখতারের মতে, লড়াইটা শুরু হয়ে যায় ম্যাচের অনেক আগেই। ড্রেসিং রুমে বারুদের উত্তাপে ফুটতে থাকেন খেলোয়াড়রা, বাইরে অগণিত ভক্ত-সমর্থক, এটি নেহায়েত এক ম্যাচ নয়, তার চেয়ে বেশি কিছু। কদিন আগে বর্তমান অধিনাক মিসবাহ উল হক বলেছিলেন, ইতিহাস বদলে দিতে তৈরি তার বাহিনী। কী সেই ইতিহাস? বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত পাঁচবার মুখোমুখি (১৯৯২, ১৯৯৬, ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০১১) হয়ে প্রতিবারই হেরেছে পাকিস্তান। তবে কাজটা সহজ হবে না বলেই মনে করেন শোয়েব! ‘বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান লড়াই মানে ভিন্ন কিছু। বিষয়টা এতটাই আবেগী যে ভাষায় প্রকাশের নয়। একাদশের একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমি তা কাছে থেকে দেখেছি। উত্তেজনায় আগের রাতে ঠিক মতো ঘুম হতো না। প্রতিপক্ষকে দুমড়ে-মুচড়ে দেয়ার জন্য মানসিক লড়াইটা শুরু হয়ে যেত ড্রেসিং রুম থেকেই! বাইরে দু’দেশের অগণিত সমর্থক যেখানে উন্মাদনায় বুঁদ।’ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে উপমহাদেশের দলগুলোর জন্য ভাল করাটা সবসময়ই কঠিন। সম্প্রতি ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা তিন দলের অবস্থাই খারাপ। তবে সার্বিক বিচারে এবারও ভারতের সঙ্গে পেরে ওঠা কঠিন হবে বলেই মনে করেন তিনি। শোয়েব বলেন, ‘পরিসংখ্যান দিয়ে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ সম্পর্কে অনুমান করা যায় না। যেখানে জয়ের জন্য জীবন বাজি রাখেন দু’দলের ২২ ক্রিকেট সৈনিক। কিন্তু আমার মনে হয় মিসবাহদের জন্য ইতিহাস বদলে দেয়ার কাজটা মোটেই সহজ হবে না। সাঈদ আজমল, জুনায়েদ খানের অনুপস্থিতিতে বোলিংয়ের অবস্থা নাজুক। ব্যাট হাতেও ধারাবাহিকতার অভাব স্পষ্ট। অন্যদিকে দীর্ঘ আড়াই মাস অস্ট্রেলিয়ায় খেলছে ভারত। ব্যাটিংই ওদের মূল শক্তি। তবে মহেন্দ্র সিং ধোনির ঠা-া মাথার নেতৃত্বই পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। ধোনি আছে বলেই বিশ্বকাপে ভারতের সম্ভাবনা থাকবে।’ তবে সার্বিক বিচারে শিরোপার লড়াইয়ে শোয়েবের ফেবারিট দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড। ‘নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলছে, সঙ্গে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়াও দুর্বার। সব মিলিয়ে এই তিন দেশের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার সম্ভাবনা বেশি বলেই মনে হয়।’ তবে মানসিক চাপ থাকলেও ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকে স্নায়ু-যুদ্ধ বলে মনে করেন না বর্তমান অধিনায়ক মিসবাহ। ‘হয়ত বিশ্বকাপ বলে আমরা স্নায়ুর চাপটা নিতে পারি না। কঠিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হারাই। হয়ত অনেকের মনে এমন বিশ্বাস দাঁড়িয়ে গেছে যে বিশ্বকাপে আমরা কখনই ওদের হারাতে পারব না!’ এই রকম অবস্থা তখনই হয়, যখন আপনি ম্যাচটাকে দারুণ সিরিয়াসলি নেন। মনে মনে দারুণ রকম স্পেশাল ভাবেন। তাছাড়া ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, প্রতিটা বিশ্বকাপে যেহেতু এই ম্যাচটা একবার করেই হয়েছে, সে জন্য পাকিস্তানের দিক থেকে ব্যাপরটা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। অন্তত দুটি করে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হলে স্কোর লাইনটা এমন হতো না। তবে এবার আমরা এই ছবিটা বদলে দিতে বদ্ধপরিকর।’ ব্যাটিং নির্ভর ভারতকে হারাতে পরিকল্পনা ‘আমার মনে হয় আলোচিত ভারত ম্যাচে আমাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভাল বোলিং করতে হবে। ভারতীয়দের পাওয়ারহাউস ব্যাটিং থামাতে প্রাণপণ চেষ্টাই করতে হবে। বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিং ধোনি বা রোহিত শর্মাদের নিয়ে আলাদা পরিকল্পনার সুযোগ নেই। ওরা প্রত্যেকেই ভয়ঙ্কর। কেউ যদি লম্বা সময় ক্রিজে থাকে, তবেই বিপদ! এক কথায় ভারতের গোটা ব্যাটিং লাইনের দিকেই বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।’ তার সঙ্গে যোগ হচ্ছে ক্যাপ্টেন কুল ধোনির ধুরন্ধর নেতৃত্ব, যেমনটা শোয়েব আখতার বলছেন। তবে ম্যাচটি ভারত-পাকিস্তান বলেই অতীত পরিসংখ্যান, বর্তমান পারফর্মেন্স ছাপিয়ে ছড়াচ্ছে বাড়তি উন্মাদনা!
×