নিজস্ব সংবাদদাতা, নরসিংদী, ৩ ফেব্রুয়ারি ॥ চৌদ্দগ্রামে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হয়ে নিহত সাত জনের মধ্যে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বালুচর গ্রামের মা-ছেলের মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া ।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামে সোমবার রাতে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোলবোমায় ওই গ্রামের আরমান মিয়ার কন্যা আছমা বেগম (৩৫), তার পুত্র পলাশ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র শান্তসহ (১৩) সাত জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় ।
নিহত আছমা বেগমের পিতা আরমান মিয়া (৬০) জানান, শুক্রবার তাঁর মেয়ে দু’ নাতি শান্ত ও মুন্নাকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি নোয়াখালী বেড়াতে যায়। সেখান থেকে বাসযোগে ঘোড়াশাল ফেরার পথে সোমবার রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হয়ে আসমা বেগম (৩৫) ও তার ছেলে শান্ত (১৩) নিহত হয় । এ ঘটনায় আছমা বেগমের অপর ছেলে মুন্না (১৫) গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে। নিহত শান্ত পলাশ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র এবং আহত মুন্না একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র ।
ঘটনার খবর পেয়ে নিহত আছমার স্বামী কাপড় ব্যবসায়ী মানিক মিয়া ঘটনাস্থলে গিয়ে স্ত্রী ও পুত্রের লাশ সনাক্ত করেন ।
এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ঘোড়াশালে নেমে আসে শোকের ছায়া । শত শত মানুষ ভিড় জমায় নিহতের পিত্রালয়ে । এ সময় শোকাহত আরমান মিয়া এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে নোংরা রাজনীতিকে দায়ী করেন এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন ।
স্টাফ রিপোর্টার কক্সবাজার থেকে জানান, অবরোধকারীদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় নিহত সাতজনের মধ্যে দুইজনের বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়ায়। সোমবার রাতে চকরিয়া থেকে তারা ‘আইকন পরিবহন’র বাসে ঢাকায় যাওয়ার পথে মঙ্গলবার ভোরে (রাত সাড়ে তিনটা) কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মিয়াবাজার জগমোহনপুর এলাকায় বোমা হামলার শিকার হয় তারা। চকরিয়ার হারবাং গাইনাকাটা গ্রামের মৃত ছালেহ আহমদের ছেলে মোহাম্মদ ইউসুফ (৪৮) ও সিদ্দিক আহমদের ছেলে আবু তাহেরসহ চার কৃষক পানের বরজ ও সহায়-সম্বল বিক্রি করে অধিক রোজগারের আশায় কাতারে যাচ্ছিল। বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলের ক্যাডারদের নিক্ষেপ করা পেট্রোল বোমায় হতভাগা এই নিরীহ কৃষকদের আর কাতার যাওয়া হলো না।
স্টাফ রিপোর্টার নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, সোনারগাঁওয়ের খেটে খাওয়া টগবগে ছয় তরুণ অবরোধের আগুনে পুড়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। কক্সবাজারের একটি মেলা থেকে বিন্নি ধানের খই বিক্রি শেষে ফিরছিল ওরা। চৌদ্দগ্রামে ‘আইকন পরিবহন’র যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমায় দগ্ধদের মধ্যে রয়েছেন সোনারগাঁওয়ের সনমান্দি ইউনিয়নের কাহৈয়াকান্দা এলাকার ঈমান হোসেন (৩০), সালাউদ্দিন (২৫), মাইনুদ্দিন (১৮), বাবু (১৮), শফিকুল (২০) এবং কান্দাপাড়া এলাকার আমির হোসেন (১৮)।
এদের মধ্যে শফিকুলের (২০) অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। শফিকুলের পিতার নাম আলাউদ্দিন। অন্যদের কুমিল্লা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।