ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অস্থিরতায় মূল্যস্ফীতি খাদ্যে একটু বাড়লেও কমেছে অন্যান্য পণ্যে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

অস্থিরতায় মূল্যস্ফীতি খাদ্যে একটু বাড়লেও কমেছে অন্যান্য পণ্যে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ রাজনৈতিক অস্থিরতার ধাক্কা লেগেছে দেশের খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতিতে। জানুয়ারি মাসে তাই বেড়েছে এই হার। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্টে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক শূন্য সাত শতাংশে, যা গত ডিসেম্বর মাসে ছিল পাঁচ দশমিক ৮৬ শতাংশ। তবে এ সময়ে খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমায় দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমেছে। এর হার দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক শূন্য চার শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ছয় দশমিক ১১ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ছয় দশমিক শূন্য এক শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ছয় দশমিক ৪৮ শতাংশ। অন্যদিকে কমেছে এক বছরের গড় মূল্যস্ফীতিও। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এ সব তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পণ্য সরবরাহে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমেছে। তবে এ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এক মাসে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ মূল্যস্ফীতি বাড়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু ১ শতাংশের উপরে গেলে চিন্তার বিষয়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দীর্ঘ হলে আগামী মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা শহরে দুই কোটি লোকের জন্য প্রতিদিন খাবার আসছে এখন পর্যন্ত জিনিসপত্রের দাম তেমন বাড়েনি। বাজারে প্রচুর সবজি রয়েছে, দামও হাতের নাগালে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী দেখা যায়, শহরের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ৪৮ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ছয় দশমিক ৫০ শতাংশ। খাদ্যদ্রব্যের মূুল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ছয় দশমিক ৬৯ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ছয় দশমিক শূন্য সাত শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ২৫ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ছয় দশমিক ৯৯ শতাংশ। অন্যদিকে গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ৮১ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল পাঁচ দশমিক ৮৯ শতাংশ। খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে পাঁচ দশমিক ৭৯ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল পাঁচ দশমিক ৭৮ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ দশমিক ৮৪ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ছয় দশমিক ১২ শতাংশ। গত এক বছরে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ছয় দশমিক ৮৬ ভাগ। যা তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ওই এক বছরে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল সাত দশমিক ৬০ ভাগ। পর্যালোচনা করলে দেখা যায় গত মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। দেশে খাদ্য ঘাটতি না থাকলেও শুধুমাত্র রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই জানুয়ারি মাসে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম জানায়, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সরকারের একটি অন্যতম সাফল্য। খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়ার কথা নয়। বরং কমতে পারে। কেননা এ বছর বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি। কিন্তু শুধু মাত্র রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই জানুয়ারি মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি এবং সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের কারণে ২০১১-১২ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করে। চলতি অর্থবছর (২০১৪-১৫) এখনও শেষ না হলেও গত ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত ছিল।
×