ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রেললাইন উৎপাটন

মিরসরাইয়ে জামায়াত-বিএনপিপন্থী কর্মচারীরা জড়িত

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

মিরসরাইয়ে  জামায়াত-বিএনপিপন্থী কর্মচারীরা জড়িত

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম-ঢাকা রেলরুটে রেল লাইন উপড়ে ফেলাসহ নাশকতা সৃষ্টির নেপথ্যে জামায়াত-বিএনপিপন্থী রেল কর্মচারীদের একটি অংশ জড়িত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ মাত্র ৪০ মিনিটের ব্যবধানে মীরসরাইয়ের উত্তর আমবাড়িয়া এলাকায় গত রবিবার গভীর রাতে রেল লাইন উপড়ে ফেলা, ফিসপ্লেট ও প্যাডেল ক্লিপ খুলে নেয়ায় এ ধরনের সন্দেহের অবতারণা হচ্ছে। ময়মনসিংহ থেকে নিম্নগামী নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেন ওই এলাকা পার হওয়ার ৪০ মিনিটে আগে চট্টগ্রাম থেকে একটি মালবাহী ট্রেন ওই এলাকা অতিক্রম করে। এছাড়াও রেল লাইনে কাজ করে এমন অভিজ্ঞ লোক ব্যতীত স্বল্প সময়ে প্রতি মিনিটে তিনটি প্যাডেল ক্লিপ খুলে নেয়া সহজ নয় বলে মন্তব্য করেছেন রেলের মেকানিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও সিগন্যালিং বিভাগের কর্মকর্তারা। রেলের পূর্বাঞ্চলীয় ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেকানিক্যাল বিভাগের পক্ষ থেকে জানা গেছে, রেল লাইন পরিচালনা ও মেরামত কাজে যারা নিয়োজিত থাকে তারাই সূক্ষ্মভাবে প্রতিনিয়ত রেল চলাচল নির্বিঘœ রাখতে কাজ করে। এ শ্রেণীর মধ্যে রয়েছে মেট, ওয়েম্যান, গ্যাং খালাসি ও কীম্যান। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত রেলে রুটে প্রায় সাড়ে ৩শ চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী রেল লাইন রক্ষণাবেক্ষণের কাজে কর্মরত। বড় তাকিয়া স্টেশন থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তরে দুর্ঘটনাকবলিত স্থান। ঘটনাস্থল অনেকটা জনমানবহীন এলাকায়। বিভিন্ন সময়ে নাশকতাকারীরা প্যাডেল ক্লিপ কিভাবে উৎপাটন করা যায় তা নিয়ে অনুশীলন করেছে। ফলে এক সময় এ ধরনের কাজে দক্ষ হয়ে উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি-জামায়াতপন্থী রেল কর্মচারীদের একটি অংশ ওই এলাকায় এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার উৎস খুঁজে পাওয়া গেছে। মাত্র ৪০ মিনিট সময়ে ১২০ প্যাডেল ক্লিপ খুলে ফেলা গেলে প্রতিটি ক্লিপের পেছনে সময় ব্যয় হয়েছে মাত্র ২০ সেকেন্ড। এ ধরনের দক্ষতা রেলে কর্মরত ওয়েম্যান, গ্যাং খালাসি এবং মেটদেরই সম্ভব। এছাড়াও কীম্যানরাও অনেক সময় রেল লাইন মেরামতে ওয়েম্যানদের সঙ্গে ওভারটাইম ভিত্তিতে জরুরী অবস্থায় কাজ করে। ফলে তাদেরও দক্ষতা রয়েছে এ ক্ষেত্রে। ১২৬ ফুট লম্বা রেল লাইনের দুদিকে চারটি করে আটটি বোল্টে লাগানো দুটি ফিসপ্লেট খুলতে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট সময় লাগতে পারে। এ ক্ষেত্রে বহিরাগতদের পক্ষে কোনভাবেই এত স্বল্প সময়ে ফিসপ্লেট ও প্যাডেল ক্লিপ খুলে রেল লাইন উৎপাটন অসম্ভব বলে জানিয়েছেন পূর্বাঞ্চলীয় সংশ্লিষ্ট বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক কর্মকর্তা। জানা গেছে, গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৩টার দিকে মীরসরাইয়ের উত্তর আমবাড়িয়া এলাকায় ট্রেন দুর্ঘটনায় ইঞ্জিন ও দুটি কোচ লাইনচ্যুত হয়। গভীর রাতে এ এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে যাত্রীসংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল। ফলে আহতদের ঘটনা ছিল মুষ্টিমেয়। কিন্তু রেল লাইন পাহারায় যেসব আনসার সদস্য কর্মরত ছিলেন এবং স্টেশনে কর্মরতদের বক্তব্য অনুযায়ী এ দুর্ঘটনা ছিল অপ্রত্যাশিত। কারণ, দুর্ঘটনার মাত্র ৪০ মিনিট আগেও একটি মালবাহী ট্রেন ঢাকা অভিমুখে অতিক্রম করেছিল। মাত্র ৪০ মিনিটের মধ্যেই ১২০টি প্যাডেল ক্লিপ সিসি স্লিপার থেকে লাইনকে বিচ্ছেদে উৎপাটন করা হয়। প্যাডেল ক্লিপ করে উৎপাটন করে ১২৬ ফুট লম্বা রেল লাইনটির উভয় দিকের দুটি ফিস প্লেট থেকে খুলে ফেলা হয়। এমনকি প্যাডেল ক্লিপ ও ফিস প্লেট ঘটনাস্থলের অদূরে ফেলে রাখা হয়। নাশকতাকারীরা গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটালেও দিনে রেকি করেছে বলে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে জানা গেছে। উল্লেখ্য, এ দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে ৪ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটি ঘটনার দিন থেকে ৭ কর্মদিবসে তদন্ত রিপোর্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করবেন। কমিটিতে রয়েছেন বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা, বিভাগীয় প্রকৌশলী-১, বিভাগীয় সঙ্কেত ও টেলিযোগাযোগ কর্মকর্তা এবং ডিভিশনাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী জানিয়েছেন, কয়েকদফায় চেষ্টার পর নাশকতাকারীরা এ ধরনের ক্লিপ খোলার চেষ্টায় সার্থক হতে পারে। কিন্তু যারা প্রতিনিয়ত এ কাজে অভ্যস্ত তারা স্বল্প সময়ে এ ধরনের ক্লিপ লাগানো এবং খোলা ছাড়াও রেল লাইন প্রতিস্থাপন করতে পারে। এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিশেষ করে লাইনে কর্মরতদের একটি অংশ জড়িত থাকতে পারে। কর্মচারীরা এ ধরনের নাশকতায় জড়িত রয়েছে কিনা সুষ্ঠু তদন্তে বেরিয়ে আসতে পারে।
×