ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তারেকের নির্দেশেই সবকিছু করেন খালেদা জিয়া

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

তারেকের নির্দেশেই সবকিছু করেন খালেদা জিয়া

শংকর কুমার দে ॥ লন্ডন প্রবাসী পুত্র তারেক রহমানের কথা ছাড়া আর কারও কোন কথা শুনেন না বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রশ্নের উত্তরে এই ধরনের কথা বলেছেন রিমান্ডে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালু, শামসুজ্জামান দুদু ও যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ-বিএনপির এই চার নেতা। লন্ডন প্রবাসী তাদের নেতা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডে কথোপকথন রেকর্ড পরীক্ষা করেছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দারা যে মোবাইল ফোনের কনভারসেশন ট্র্যাক করেছে তারা ছাড়াও আছেন বিএনপি-জামায়েতের বেশ কয়েকজন নেতার নাম। মোবাইল ট্র্যাকিং ও ভয়েস রেকর্ডে নাশকতার বিষয়ে মিলেছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। যানবাহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, পেট্রোলের আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো, বোমাবাজি, নাশকতার বিষয়ে নানা প্রশ্ন করা হয়েছে ডিবি হেফাজতে থাকা বিএনপির চার নেতাকে। জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। গোয়েন্দা সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে থাকা চার নেতাকে কখনও মুখোমুখি আবার কখনও পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। গভীর রাত পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদে নিজেদের নাশকতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন তারা। বিএনপির চার নেতারই অভিন্ন উত্তর হচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়া এখন আর সরাসরি মোবাইল ফোনে নির্দেশ দেন না। কারণ তার মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এ কারণে যারা দেখা করতে আসেন তাদের মাধ্যমে অবরোধ-হরতালের খবর পৌঁছে দিতে বলেন নেত্রী। নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখন তার পুত্র তারেক রহমানের নির্দেশ অনুসারেই অবরোধ ও হরতালের নির্দেশ দিচ্ছেন। পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগানো, বোমাবাজি ও নাশকতার বিষয়ে কারা কিভাবে করছে তারা কিছুই জানেন না বলে জানান তারা। মোবাইল ফোনের রেকর্ডকৃত এসব কথোপকথনের ভিত্তিতেই তিন নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর মধ্যে লন্ডন থেকে তারেক রহমানেরও বেশকিছু কল রেকর্ড রয়েছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। রাজধানীর মিন্টো রোডের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে রিমান্ডে আনা বিএনপির চার নেতাকে। জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছেন, ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবসের’ জনসভাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মোঃ শাহজাহান, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-দফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় নেতা বেলাল আহমেদ আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গ্রেফতার হয়েছেন। আরও বেশ কয়েকজন আত্মগোপনে চলে যাওয়া নেতাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিএনপির চেয়ারপার্সনের সঙ্গে দেখা করে ফেরার পথে ডিবি পুলিশ চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ের সামনে থেকে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে আটক করে। সোমবার তাকে খিলগাঁও থানায় পেট্রোল বোমা মেরে গাড়ি পোড়ানো মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয় গোয়েন্দা হেফাজতে। বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা। গোয়েন্দা কর্মকর্তার প্রশ্ন, আপনি তো ঘনঘন গুলশানের ওই কার্যালয়ে যান। ওখান থেকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা এনে বিএনপি নেতাদের জানান। আপনি তো চেয়ারপার্সনের খুবই ঘনিষ্ঠ। আপনি যা বলবেন তাই শুনতে বাধ্য হবেন। অবরোধ-হরতালের নামে এসব নাশকতা বন্ধ করতে বলেন আপনার নেত্রীকে। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের এসব কথার জবাবে চুপচাপ থাকেন মোসাদ্দেক হোসেন ফালু। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে তিন দিনের রিমান্ড শেষে আবারও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে পাঁচ দিনের রিমান্ডে। পল্টন থানার একটি মামলায় আগে থেকেই তিন দিনের রিমান্ডে গোয়েন্দা হেফাজতে রয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার ভোরে বারিধারা থেকে আটক হওয়ার পর বাড্ডা থানা এলাকায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগের মামলায় রিমান্ডে গোয়েন্দা হেফাজতে আছেন রুহুল কবির রিজভী। বিএনপির চেয়ারপার্সনের অপর উপদেষ্টা সামসুজ্জামান দুদুকে সোমবার আরও চার দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। মিরপুর থানায় দায়ের করা একটি মামলায় এর আগেও দুই দফা রিমান্ডে ছিলেন দুদু। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মিন্টু রোডের ডিবি অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয় রাত ১০টায়। গভীর রাত পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত থাকে। তাদের ওপর কোন নির্যাতন করা হয় না। শুধুমাত্র জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল অবলম্বন করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের কৌশলের কাছে এক সময়ে ব্রেক ডাউন করতে বাধ্য হন তারা। গোয়েন্দা কার্যালয়ে দুই কর্মকর্তার কক্ষে ওই নেতাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। ঘুমানোর জন্য দেয়া হয় বালিশ ও কম্বল। ফালুকে জামাই আদরে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দারা বলেছেন, কখনও মুখোমুখি আবার কখনও পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাদের। অবরোধ-হরতালের নামে নাশকতা করছে কারা? কারা অর্থের যোগানদাতা? তাদের টার্গেট কী? বিদেশী কোন শক্তির সম্পৃক্ততা আছে কিনা? তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ হয় কিভাবে? খালেদা জিয়া কেন পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যার নির্দেশ দিচ্ছেন? এভাবে কি আপনাদের পক্ষে সরকার পতন করা সম্ভব? এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তরের সন্ধানে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছে গোয়েন্দারা।
×