ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কিসের পরীক্ষা!

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

কিসের পরীক্ষা!

নতুন প্রজন্মকে ধ্বংস করার উন্মাদনায় যারা মাতোয়ারা, তারা আসলে একটি জাতির ভবিষ্যতকেই বিনষ্ট করতে চায়- এমন মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে একটি বিকলাঙ্গ সমাজ সৃষ্টির অপতৎপরতা বৈ কি এটা। পুরো দেশ ও জাতিকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের নিগড়ে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলার পাঁয়তারা থেকে শিক্ষাব্যবস্থাও মুক্ত নয়। তাই দেখা যাচ্ছে, এসএসসি পরীক্ষার ভাগ্য কতিপয় রাজনীতিকের সঙ্কীর্ণ স্বার্থের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, পৈশাচিকতা ও নৃশংসতার মাধ্যমে চোরাগোপ্তা বোমা হামলা, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, সম্পদহানি অব্যাহত রেখে জনমনে ভীতি সঞ্চার করে চলেছে সন্ত্রাসবাদকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা রাজনীতিকরা। তাদের নাশকতার কারণে পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারবে না যথাসময়ে পূর্ব প্রস্তুতি নেয়ার পরেও। তখন তাদের মনোবল ভেঙ্গে যেতে বাধ্য। এমন অযাচিত প্রাণঘাতী পরিস্থিতিতে ভালভাবে পরীক্ষায় অংশ নেয়াও কঠিন। বছরের প্রথম দিনই নতুন বই পাবার পর মাস পেরিয়ে গেলেও শিক্ষার্থীরা তাদের স্কুলে যথারীতি যেতে পারছে না। ওদিকে পড়াশোনা স্থবির হয়ে পড়ায় তারাও প্রচার মাধ্যমে দগ্ধ মানুষের বীভৎস চেহারা, যানবাহনে অগ্নিসংযোগের দৃশ্য দেখে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। তারাও জানে না কী কারণে দেশজুড়ে এই অবরোধ-হরতাল খেলা, মানুষ হত্যার মহোৎসব। কেন শান্তি বিনষ্ট হচ্ছে তাদের। হরতাল-অবরোধ করা যেমন প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অধিকার, পাশাপাশি প্রতিটি নাগরিকের সন্তানের নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে পরীক্ষা দেয়া আরও বেশি সুসংহত অধিকার। ফেস্টুন হাতে রাজপথে দাঁড়ানো স্কুলছাত্রী; লেখা তাতে, ‘আমরা লেখাপড়া করতে চাই, আমাকে বোমা মেরো না’। তাদের থাকার কথা স্কুলে, অথচ ভুগতে হচ্ছে বোমাতঙ্কে। আর এই আতঙ্ক অব্যাহত রাখাকে বিএনপি-জামায়াত জোট বলছে আন্দোলন। আন্দোলন অর্থাৎ সংগঠিত জনতার শক্তি প্রদর্শনী। অথচ তারা প্রদর্শন করছেন সন্ত্রাস ও হত্যাযজ্ঞ। তাই একদা ফুটবলার এবং পরে এমপি-মন্ত্রী হাফিজউদ্দিন আহমদ উন্মাদনার চূড়ান্ত স্তরে দাঁড়িয়ে বলতে পারেন অবলীলায়, কিসের পরীক্ষা? আগে আইনের শাসন দরকার। পরীক্ষা পরেও নেয়া যাবে। কিন্তু জানা নেই তার পেট্রোলবোমা মেরে সন্ত্রাস জায়েজ করা যায় কিন্তু আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা নয়। আইনের শাসন জোরদার করতে হলে সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমেই করতে হয়, সন্ত্রাস দিয়ে নয়। সন্ত্রাস দিয়ে আইনের শাসন কায়েমের পরিণতি পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। বাংলাদেশ নয়। দেশজুড়ে শিশু কিশোর স্কুল কলেজের ছাত্র শিক্ষক হত্যা করে আইনের শাসন কায়েম হয় না। তাদের শাসনামলেও তারা পারেননি। এসএসসি পরীক্ষায় প্রতিবন্ধকতা তৈরির নেপথ্যে যে অসৎ উদ্দেশ্য বিরাজমান, তা জনাব হাফিজউদ্দিনের ক্রোধান্ধ বাক্যেই প্রমাণিত। গণতন্ত্র রক্ষার নামে এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে তার বক্তব্যের জবাবে পরীক্ষার্থীরাও তো বলতে পারে, পরীক্ষা বন্ধ রেখে কিসের গণতন্ত্র, কার জন্য গণতন্ত্র? আগে চাই শিক্ষা। শিক্ষিত না হলে গণতন্ত্র পাকাপোক্ত হয় না। তাহলে এর জবাব কি হবে?
×