ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুদ্রার এক পিঠে নিরপেক্ষতা এবং অপর পিঠে শঠতার সাংবাদিকতা

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

মুদ্রার এক পিঠে নিরপেক্ষতা এবং অপর পিঠে শঠতার সাংবাদিকতা

বহুকাল আগে অবিভক্ত বঙ্গে কলকাতা থেকে একটি বহুল প্রচারিত দৈনিক প্রকাশিত হতো। পত্রিকাটির নাম সম্ভবত ছিল ‘হিতবাদী’। সঠিকভাবে পত্রিকাটির নামটি স্মরণ নেই। তবে সম্পাদকের নামটি মনে আছে। পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় (পাঁচকড়ি দে’ নন। তিনি ছিলেন গোয়েন্দা গল্পের লেখক)। তিনি সেই সময়ের বিখ্যাত সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু তার নামের আগে দুষ্ট লোকে পদবি লাগিয়েছিল ‘ক্ষমাসুন্দর সম্পাদক।’ তার এই পদবি লাভের একটা কাহিনী আছে। ফজলুল হক সাহেব তখন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী। তিনি তখন মুসলিম লীগ দলীয় সরকারের প্রধান। থাকতেন কলকাতার ঝাউতলা রোডে এক বাসায়। পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় হক সাহেবকে ‘ঝাউতলার লাউওয়ালা’ আখ্যা দিয়ে রোজই শ্লীল-অশ্লীল ভাষায় সমালোচনা করতেন। হক সাহেব ছিলেন উদার ও সহনশীল রাজনীতিক। তিনি পাঁচকড়ি বাবুর গালিনিন্দা গ্রাহ্য করতেন না। কিন্তু মাঝে মাঝে ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করলে পাঁচকড়ি বাবুর কাছে মানহানির মামলার একটি উকিলের নোটিস পাঠাতেন। তখন হক সাহেবের ঝাউতলার বাড়ির সামনে দেখা যেত বহুবার ঘটা একটি দৃশ্য। পাঁচকড়ি বাবু তার ছেলেমেয়ে নিয়ে জোড় হাতে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। হক সাহেব বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেই তিনি গলবস্ত্র হয়ে তার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেন। বলতেন, “আপনাকে আমি ইচ্ছা করে সমালোচনা করি না। আপনার মুসলিম লীগ সরকারকে দু’একটা গালিমন্দ দিলে কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভাপন্থী পাঠকরা খুশি হয়। কাগজটার বেশি কাটতি হয়। আপনার বিরুদ্ধে না লিখলে কাগজ বিক্রি হবে না। এই ছেলেমেয়ে নিয়ে আমাকে উপোস করতে হবে। এখন আপনিই বলুন, আপনার বিরুদ্ধে না লিখে আমি কি উপোস করব?” উদার হৃদয় হক সাহেব হেসে তাকে ক্ষমা করে দিতেন। মানহানির উকিলের চিঠি প্রত্যাহার করে নিতেন। এই ঘটনাটি বার বার ঘটায় কলকাতায় তখনকার সংবাদপত্র জগতে পাঁচকড়ি বাবুর নাম হয়ে দাঁড়িয়েছিল ‘ক্ষমাসুন্দর সম্পাদক।’ কারণ, হক সাহেবের কাছে গলবস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়ে তিনি বার বার বলতেন, মান্যবর, আমাকে ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখুন। এই পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে একটি স্মৃতিকথা লিখেছিলেন তার সমসাময়িক আরেক সাংবাদিক চপলাকান্ত ভট্টাচার্য্য (সম্ভবত চল্লিশের দশকে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন)। তিনি লিখেছেন, ‘পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় বলতেন, কাগজের কাটতি বাড়ানোর একটা কৌশল হলো যেসব বিষয় বিতর্কিত নয়, সে সম্পর্কে বিতর্ক সৃষ্টি করে পাঠকদের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা। ঘোলা জলে মাছ শিকার যেমন সহজ, তেমনি মীমাংসিত একটি বিষয় সম্পর্কেও পাঠকমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা গেলে বিভ্রান্ত পাঠক কাগজটি কিনবে ও পড়বে বেশি। তারপর কাগজটি নিরপেক্ষ থেকে বিতর্কিত বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক অভিমত ব্যক্ত করলেও বিষয়টি নিয়ে অনেক পাঠকমনেই ধন্দ লেগে থাকবে। তাতে মীমাংসিত বিষয়টিও বিতর্কিত হয়ে থাকবে।’ চপলাকান্ত ভট্টাচার্য্যরে এই স্মৃতিকথামূলক লেখাটিও আমি বহুদিন আগে পড়েছি। হঠাৎ পুরনো কাগজ ঘাঁটতেই লেখাটি চোখে পড়ায় মনে হলো, বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশেও একজন ক্ষমাসুন্দর সম্পাদক আছেন। মনে হয় বার বার অসাধু সাংবাদিকতা করে তার কাগজের কাটতি বাড়ানো অথবা কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন তার লক্ষ্য। ধরা পড়লে বা বিপদে পড়লেই দৌড়ে গিয়ে নাকে খত দেন, নিঃশর্ত ক্ষমা চান। এজন্যে তারও পদবি ‘তওবা সম্পাদক।’ মাত্র কিছুকালের মধ্যেই তিনি একবার ঢাকায় বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিবের কাছে গিয়ে তার পত্রিকার লেখার জন্য তওবা করেছেন, নতুন করে কলেমা পড়েছেন। ঢাকার গণজাগরণ মঞ্চের এক তরুণী কর্মীর বিরুদ্ধে অশ্লীল গল্প ছেপে গণরোষের মুখে আবার ক্ষমা চেয়েছেন। গল্প দু’টি প্রত্যাহার করেছেন। শেষ পর্যন্ত আদালতের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করে তওবা সম্পাদক আদালতে তার জুনিয়র মুনশিসহ নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা দ্বারা নিজেকে বাঁচিয়েছেন। ক্ষমা প্রার্থনায় তিনি সে যুগের সম্পাদক পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের রেকর্ড ভেঙেছেন কিনা তা আমার জানা নেই। এবার তার লেটেস্ট ট্রিকসের কথায় আসি। খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর এই সেদিন সাত সকালে ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের এক বয়ঃকনিষ্ঠ প্রতিমন্ত্রীর টেলিফোন। তিনি উল্লাসে আত্মহারা হয়ে বললেন, “গাফ্ফার ভাই, আপনি যে কাগজটির বিরুদ্ধে প্রায়ই লিখে থাকেন এবং তার সম্পাদককে বলেন তওবা সম্পাদক, সেই কাগজ ও তার সম্পাদকের সব অপরাধ আমি মাফ করে দিয়েছি।” তার কথায় উল্লাসের আতিশয্য দেখে বললাম, ব্যাপারটি কি? তিনি বললেন, ওই কাগজের আজকের সংখ্যাটি (৩০ জানুয়ারি) পড়ুন। তাতে নিউইয়র্কের হাসান ফেরদৌসের ‘কোকো কাহিনী’ নামে একটি লেখা আছে। সত্য প্রকাশে এমন সাহসী লেখা আমি বহুকাল পড়ি নাই। আর এই লেখা ওই তওবা সম্পাদকের কাগজ ছাড়া আর কেউ ছাপানোর সাহস করত না। আমি প্রতিমন্ত্রীকে বললাম, বৎস, তিষ্ট ক্ষণকাল। আগে লেখাটি আমাকে পড়তে দাও। টেলিফোন রেখে হাসান ফেরদৌসের লেখাটি পড়লাম। সত্যই নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ, সাহসী লেখা। অন্য কোন দৈনিক এই সময় লেখাটি ছাপাতে সাহস করত কি? সঙ্গে সঙ্গে নিজের মনেই প্রশ্নটির জবাব পেয়ে গেলাম। পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনী মনে পড়ল। বর্তমান বাংলাদেশের তওবা সম্পাদকের অসাধু সাংবাদিকতার ট্রিকসও মনে পড়ল (যার ভুক্তভোগী আমি নিজেও, সে কথায় পরে আসছি)। প্রতিমন্ত্রীকে এবার নিজে টেলিফোন করলাম। বললাম, বৎস, এত তাড়াতাড়ি আহ্লাদিত হয়ো না। একটা কি দুটো দিন অপেক্ষা কর। দেখবে বিএনপির কাউকে দিয়ে কোকো সম্পর্কিত মীমাংসিত বিষয়টিও (অর্থাৎ সে যে একজন কনভিকটেড ক্রিমিনাল ছিল) বিতর্কিত করার জন্য একটি লেখা লেখানো হবে, অথবা লিখতে উৎসাহিত করা হবে। হাসান ফেরদৌসের তথ্যভিত্তিক বক্তব্য সম্পর্কে পাঠকদের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হবে। তারপর পত্রিকাটি যে সৎ এবং নিরপেক্ষ, তা প্রমাণ করার জন্য সম্পাদক নিজে অথবা তার কোন মুনশিকে দিয়ে হাসান ফেরদৌসের বক্তব্যে সমর্থন দেয়ার জোরালো ভান করা হবে। তাতে তওবা সম্পাদকের দুটো লাভ। এক. মীমাংসিত বিষয়েও বিতর্ক সৃষ্টি করে কাগজের পড়ন্ত সার্কুলেশন ঠেকা দেয়া। দুই. হাসান ফেরদৌসের লেখাটি পড়ে লক্ষ লক্ষ পাঠকমনে কোকো সম্পর্কে যে সঠিক ধারণা তৈরি হয়েছিল, সেটিকে বিভ্রান্ত করে দিয়ে বিএনপির প্রচারণাকে শক্তি জোগানো। এখন হাসান ফেরদৌসের বক্তব্যের পক্ষে আরও দশটা লেখা ছাপালেও এই বিভ্রান্তি সম্পূর্ণ দূর হবে না। অনেক পাঠক ভাবতে থাকবেন, কোকোর বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নাও হতে পারে। হাসান ফেরদৌস একজন বস্তুনিষ্ঠ, সৎ এবং নিরপেক্ষ কলামিস্ট এবং তওবা সম্পাদকের কাগজেই সুদূর নিউইয়র্ক থেকে লিখে থাকেন। কিন্তু তওবা সম্পাদক নিজের ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক স্বার্থে তাকে বলি দেয়ার চেষ্টা করতেও দ্বিধা দেখালেন না। এই অসৎ খেলা তিনি অনেক কলামিস্টকে নিয়েই খেলেছেন। তার কাগজে কলাম লেখার সময় আমাকে নিয়েও খেলেছেন। হাসান ফেরদৌসকে নিয়েও এবার খেললেন। প্রথমে তার লেখাটি ছেপে সাহসী সাংবাদিকতার জন্য প্রচুর বাহবা নিলেন; কাগজের পড়ন্ত কাটতি হয়ত ঠেকালেন। আওয়ামী লীগকেও খুশি করলেন। তারপর দু’দিন পরই ছাপালেন (২ ফেব্রুয়ারি) কোকোর আইনজীবী এবং বিএনপিপন্থী মাহবুব উদ্দীন খোকনের লেখা (লেখাটি কোকোর আইনজীবী স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে লিখেছেন, না তওবা সম্পাদকের এসাইনমেন্টে লিখেছেন তা আমি জানি না)। এই লেখায় হাসান ফেরদৌসকে ‘অসত্যবাদী ও বিভ্রান্তি সৃষ্টকারী’ বলে গালি দেয়া হয়েছে। তিনি বিদেশী নথিপত্র থেকে যেসব প্রমাণপত্র হাজির করেছেন, তা এক কথায় উড়িয়ে দিয়ে বলা হয়েছে সবই মিথ্যা। অর্থাৎ পাগলা মেহেরালির ভাষায় ‘সব ঝুট হায়।’ কথায় বলে ‘ওস্তাদের মার শেষ রাত্রে।’ তওবা সম্পাদক এবার সেই ওস্তাদের মার দেখালেন একদিন পরই (৩ ফেব্রুয়ারি)। তার জুনিয়র মুনশিকে দিয়ে একটি লেখা লেখালেন হাসান ফেরদৌসের বক্তব্যের চর্বিত চর্বন করে অর্থাৎ তার বক্তব্যকে সমর্থনদানের ভান করে। এক সঙ্গে তিনটি পাখি বধ করলেন তওবা সম্পাদক। হাসান ফেরদৌসের লেখা ছেপে পত্রিকার সুনাম ও কাটতি বাড়ালেন। আওয়ামী লীগ তাতে খুশি। তারপরই বিএনপির আইনজীবী দিয়ে তার প্রতিবাদ লিখিয়ে এবং ছাপিয়ে হাসান ফেরদৌসের বক্তব্য নিয়ে পানি ঘোলা করে দেয়া হলো এবং বিএনপির আহত ঘায়ে মলম দেয়া হলো। তারপর পত্রিকার জুনিয়র মুনশিকে দুই বক্তব্যের মাঝখানে সালিশী বক্তা হিসেবে দাঁড় করিয়ে পত্রিকাটির সৎ ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার প্রমাণ তুলে ধরা হলো। মাঝখানে আসল কাজটি হয়ে গেছে। অর্থাৎ হাসান ফেরদৌসের যে প্রতিক্রিয়া সেটিকে অনেকটাই খর্ব করে ফেলা হয়েছে। আগেই বলেছি, এটা তওবা সম্পাদকের একটা চিরাচরিত ট্রিকস। তার কাগজে কলামিস্ট থাকার সময়ে আমি নিজেও তার ট্রিকসটির শিকার হওয়াতে হাসান ফেরদৌসের লেখা নিয়ে তার ট্রিকসটি বুঝতে আমার দেরি হয়নি। আমি তার অসাধু সাংবাদিকতার একজন ভুক্তভোগী। আমার এই তিক্ত অভিজ্ঞতার একটা মাত্র (বহু অভিজ্ঞতার মধ্যে) উদাহরণ দেই। বেশ কয়েক বছর আগের কথা। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকাগোষ্ঠীর পুস্তক প্রকাশনা সংস্থা আনন্দ প্রকাশনী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তারা বাংলাদেশে বাংলাদেশী অংশীদার নিয়ে আনন্দ প্রকাশনীর একটি শাখা প্রতিষ্ঠা করবে। তারা এ জন্যে বাংলাদেশ সরকারের পারমিশন চায়। আমি ঢাকায় আনন্দ প্রকাশনী আসুক তার সমর্থক ছিলাম। তাতে আমাদের প্রকাশনা ব্যবসা প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে আরও উন্নত হবে এবং লেখকেরা ভাল সম্মানী পাবে আশা করেছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশের একশ্রেণীর পুস্তক ব্যবসায়ী ও লেখক তার জোর বিরোধিতা করেন। আমি তখন তওবা সম্পাদকের কাগজের কলামিস্ট। তার সঙ্গে প্রায়ই রোজ টেলিফোনে আলাপ হয়। তাকে ঢাকায় আনন্দ প্রকাশনীর আসা সমর্থন করে আমার মত জানালাম। তিনি বললেন, আমার সঙ্গে তিনি সহমত পোষণ করেন। আমি যেন আমার কলামে জোরালোভাবে আনন্দ প্রকাশনীর ঢাকায় আসাকে সমর্থন জানাই। আমি তাই করলাম। আমার লেখাটি ছাপা হওয়ার দু’দিন পরই দেখি, আমার লেখার তীব্র প্রতিবাদ করে আহমদ ছফার (তিনি তখন বেঁচে আছেন) একটি লেখা ছাপা হয়েছে। সেই লেখায় আমাকে প্রচ্ছন্নভাবে ভারতের দালাল এবং আনন্দবাজার গোষ্ঠীর দালাল বলার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি দারুণ ক্ষুণœ হয়েছিলাম। আহমদ ছফার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা না থাকলেও পরিচয় ছিল। আমাকে তিনি বড়ভাই ডাকতেন। আমার লেখার বিরুদ্ধে তার লেখাটি ছাপা হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে একদিন আহমদ ছফার টেলিফোন পেলাম। তিনি বললেন, “গাফ্ফার ভাই, আপনাকে এটাক করেছি বলে দুঃখিত। আনন্দ প্রকাশনী সম্পর্কে আপনার মত আমি সমর্থন করি না। কিন্তু এটা নিয়ে আমার লেখার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু ওই পত্রিকার সম্পাদক জোর তাগাদা দিলেন, আমি যেন আপনার লেখাটির প্রতিবাদ করি।” আমি তার কথা শুনে থ। কোন বিষয় নিয়ে কোন পত্রিকা যদি বিতর্কে উৎসাহ দিতে চায় তা অন্য কথা। কিন্তু তাই বলে অসৎ উদ্দেশে এবং এই অসৎ উপায়ে? এর চাইতেও এই কাগজ সম্পর্কে আমার অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। সেসব কথা এখন আর লিখতে চাই না। শুধু একটি মজার অভিজ্ঞতা পাঠকদের জানিয়ে আজকের লেখাটি শেষ করতে চাই। হাসান ফেরদৌসের লেখাটি নিয়ে বিতর্ক ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার পর পত্রিকাটির যে ছোট মুনশিকে দুই পক্ষের মধ্যে সৎ ও নিরপেক্ষ আরবিট্রেটর হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে অর্থাৎ ‘কোকো কাহিনীর তৃতীয় পাঠ’ লেখাটি যার, তিনি যে তওবা সম্পাদকের কত যোগ্য সাগরেদ তার একটা উদাহরণ দি। আমি তখন ‘যুগান্তরের’ কলামিস্ট (এখনও আছি)। ওই ছোট মুনশিও তখন যুগান্তরের সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করেন। আমার সঙ্গে রোজ টেলিফোনে তার আলাপ হয়। এই সময় ‘যুগান্তরে’ আমার এক লেখায় গোলাম আযমকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দানের জন্য বিচারপতি মোস্তফা কামালের বিচারপতি থাকাকালের ভূমিকার সমালোচনা করি। তিনি পরদিনই তার জবাব দেন। তার সঙ্গে একই সময়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। আব্বাসউদ্দীনের ছেলে হিসেবে তাঁর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ছিল। তিনি আমার বক্তব্যের কড়ামিঠে জবাব দিয়েছিলেন। আমি তাঁর সেই লেখারও প্রত্যুত্তর দেই। ফলে তিনি আমাকে টেলিফোন করেন এবং বলেন, “গাফ্্ফার, আপনার লেখাটি নিয়ে আমার কিছু লেখার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু যুগান্তরের সম্পাদকীয় বিভাগের এক ছোকরা এসে আমাকে বার বার তাগাদা দিয়েছে। তারপরও আমার লেখার সময় নেই বলায় সে বলেছে, আমি যেন মুখে বলি, সে আমার ডিকটেশন নেবে। আমি ডিকটেশন দিয়েছি, সে লিখেছে। আমি আর লিখতে চাই না। আসুন, আমরা ক্ষান্ত দেই।” বিচারপতি মোস্তফা কামাল বর্ণিত এই ছোকরা সাংবাদিকই এখন তওবা সম্পাদকের যোগ্য সহকর্মী। অবশ্য তওবা সম্পাদকের একজন সিনিয়র বা বড় মুনশিও আছেন। তিনি তাদের নিয়েই তার সততার (না, শঠতার?) সাংবাদিকতার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। [লন্ডন ৩ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার, ২০১৫]
×