ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার গুলশান অফিস অনেকটাই বিচ্ছিন্ন

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

খালেদার গুলশান অফিস অনেকটাই বিচ্ছিন্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্রেফতারের ভয়ে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কেউ দেখা করার সাহস পাচ্ছেন না। রবিবার রাতে তার কর্যালয় থেকে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও এনটিভির চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালু গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। আবার বেগম জিয়ার সঙ্গে কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান নেয়া নেতাকর্মীরাও বাইরে আসার সাহস পাচ্ছে না। বেগম জিয়া অফিসে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় বাইরে থেকেও বেগম জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা কারও পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। জানা গেছে, এ কারণে সোমবার সারাদিন বিএনপি চেয়ারপার্সনের সঙ্গে কেউ দেখা করতে যায়নি। এমনকি ভেতরে অবস্থান করা বিএনপি নেত্রীর প্রেসউইং থেকেও সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কেউ কথা বলার চেষ্টা করেনি। ফলে বাইরে সঙ্গে ভেতরের এবং ভেতরের সঙ্গে বাইরের যোগাযোগ অনেকটাই এখন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সোমবার মাজহারুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি গুলশান কার্যালয়ে ঢোকার চেষ্টা করলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাকে আটক করে। তিনি নিজেকে গার্মেন্টস এ্যাকসেসরিজের কাজ করেন বলে পরিচয় দেন। এ সময় তার কাছে একটি ব্যাগ পাওয়া যায়। ব্যাগে একটি মোবাইল ফোন ছিল। তবে কেন তিনি কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকতে চেয়েছেন তা জানা যায়নি। এছাড়া আর কাউকে গুলশান কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। বিশেষ করে প্রতিদিন দলের সিনিয়র নেতাকর্মী ছাড়া সমাজের বিভিন্ন স্তরের বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীরা বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করতে গুলশান কার্যালয়ে যান। কিন্তু ফালু ও মহিলা দলের কিছু নেতাকর্মীর গ্রেফতারের পর থেকেই আর কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন না। জানা গেছে, গ্রেফতার হতে পারেন এ ভয়ে দলের কোন সিনিয়র নেতারাও গুলশান কার্যালয়ের দিকে যাচ্ছে না। তারা এখন অনেকটাই নীবর রয়েছেন। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা গত শনিবার রাতে বেগম জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। আন্দোলন সংগ্রামের বিভিন্ন দিক নিয়ে তারা আলোচনা করেন। মূলত এ বৈঠকের পরই রাতে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে রবিবার থেকে টানা ৭২ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করা হয়েছে। হরতাল আহ্বানের দিন শুক্রবার গভীর রাতে গুলশান এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের গ্রেফতারের পর তিনি দলের মুখপাত্র হিসেবে নিয়মিত প্রেসবিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠাতেন। তার গ্রেফতারের পর অপর যুগ্ম-মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিএনপির অবরোধ কর্মসূচীর শুরুর পরপরই এখনও আত্মগোপনে রয়েছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস। দেখা নেই সদস্য সচিব হাবিবুন্নবী খান সোহেলেরও। এ অবস্থায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা এখনও যারা বাইরে আছেন তারাও বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারছেন না। এমনকি আন্দোলন সম্পর্কে কোন কথাও তারা বলছেন না। তবে বিদেশে অবস্থানের কারণে বিএনপির সাবেক মহানগর আহ্বায়ক সাদেক হোসেক খোকা বিভিন্ন বিবৃতি দিচ্ছেন। তিনি নিউইয়র্কের এক অনুষ্ঠানে বলেন, র‌্যাব পুলিশ ও বিজিবি সরকার দলীয় পেটোয়া বাহিনীর পরিবর্তে নিরপেক্ষ অবস্থান করলে ঢাকা শহর থেকে আওয়ামী দস্যুদের বিতাড়িত করতে মাত্র ৩০ মিনিট সময় লাগবে। এজন্য তাকে সশরীরে উপস্থিত থাকার কোন প্রয়োজন নেই। নিউইয়র্ক থেকে একটি টেলিফোনই যথেষ্ট। দৃশ্যপটে আবার সালাউদ্দিন ॥ এদিকে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গ্রেফতারের পর থেকে পুনরায় দৃশ্যপটে আর্বিভূত হয়েছেন অপর যুগ্ম-মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ। প্রায় দেড় বছর পর গত শনিবার অজ্ঞাত স্থান থেকে তার নামে বিবৃতি আসছে গণমাধ্যমে। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে ফখরুল ও রিজভী গ্রেফতার হওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান খান দুদু মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেন। শামসুজ্জামান গ্রেফতার হওয়ার পর তখন ওই দায়িত্ব পালন করেন কক্সবাজারের সাবেক এ সংসদ সদস্য। দুই বছর আগে সালাহউদ্দিন অজ্ঞাত স্থান থেকে বিবৃতির পাশাপাশি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বক্তব্য পাঠান। তার পাঠানো এ ভিডিও বার্তা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। বিশেষ করে আল-কায়েদার পাঠানো ভিডিও বার্তার সঙ্গে তুলনা করা হয়। সোমবার বিকেলেও বিএনপির পক্ষ থেকে যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের নামে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠনো হয়েছে। চড়া মূল্য দিতে হবেÑ খন্দকার মাহবুব ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসন বলেছেন, খালেদা জিয়ার বাসায় বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য সরকারকে চড়া মূল্য দিতে হবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। মুক্তিযোদ্ধা দলের বিবৃতি ॥ এদিকে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে জনগণের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য সরকারী এজেন্টরা পেট্রোলবোমার হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করে এর দায় ২০ দলীয় জোটের ওপর চাপনোর চেষ্টা করছে গণবিচ্ছিন্ন সরকার। ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাবিতে ধর্মঘট ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক সহাবস্থান নিশ্চিত করা, নেতাকর্মী ও সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ওপর নির্যাতন বন্ধের দাবিতে বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুই দিনের ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
×