ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এমআর মাহবুব

ফিরে দেখা ভাষা আন্দোলন

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ফিরে দেখা ভাষা আন্দোলন

পার্টিহাউস পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সম্মানিত সদস্যদের বাসস্থান (পার্টিহাউস) ছিল আজিমপুরে। বর্তমানে স্থানটির কোন চিহ্ন নেই। আজিমপুর সরকারী কলোনির পাশে বর্তমানে আজিমপুর কবরস্থানের পাশেই ছিল পার্টিহাউসের অবস্থান। সেখানে বর্তমানে গড়ে উঠেছে বহুতল বিশিষ্ট সরকারী ভবন। আজকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ছিল তৎকালীন আইন পরিষদ ভবন। আইন পরিষদের যে সকল সদস্য বিভিন্ন সময় বাংলা ভাষার পক্ষে কথা বলেছেন তাঁরা আজিমপুরের পার্টিহাউসে থাকতেন। আজিমপুরে আইন সভার সদস্যদের বাসস্থান থাকাকালে এইসব সদস্য আইন সভায় বাংলা ভাষার পক্ষে কথা বলেছেন পার্টিহাউসে থেকেই। পার্টিহাউস ছিল তৎকালীন রাজনীতি চর্চার উত্তম স্থান। পার্টিহাউসে বসবাসরত এলএমএ-দের বহু অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে বিভিন্ন সময়। নানা কারণেই পার্টিহাউসের গুরুত্ব ছিল। ভাষাকর্মী, রাজনীতিবিদ, এমএলএ আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ পার্টিহাউসের কথা উল্লেখ করেছেন বহুবার। তিনি বলেন, ২৪ তারিখ সন্ধ্যার দিকে নুরুল আমিনের চড়ষরঃরপধষ ঝবপৎবঃধৎু ইসকেন্দার খান পার্টিহাউসে এসে জানাল যে আমি গ্রেফতার হতে পারি। আমি অংংবসনষু তে নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে যে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলাম সেটা রিঃযফৎধি করার জন্যে সে আমাকে পরামর্শ দিল। ... এরপর আবার সেরাত বারোটার দিকে এলো। আমাকে বলল, বাপু তোমাকে আমি বন্ধু হিসেবে বলছি। সাধু হয়ে লাভ নেই। প্রস্তাব মেনে নাও। তাতে রাজি না হলে দেখো চারিদিকে পুলিশ পার্টিহাউস ঘিরে রেখেছে। তোমাকে গ্রেফতার করতে পারে। আমার কামরায় সে সময় চাঁদপুরের আবদুস সালাম এমএলএ থাকত। সেও খুব সম্ভবত নুরুল আমিনকে আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেছিল। কারণ সে রাতে পার্টিহাউসে ছিল। তাকে তখন আমার কামরায় না রেখে বগুড়ার বিএম ইলিয়াস সাহেবের কামরায় পাঠিয়ে দিলাম। এরপর রাতে চিন্তায় আমার ভাল ঘুম এলো না। রাত প্রায় তিনটার দিকে কামরায় দরজা ঠক ঠক করে আওয়াজ হলো। দেখলাম পার্টিহাউসের দারোয়ান। বলল, আপনার কাছে লোক এসেছে। দরজা খুলে দেয়ামাত্র দারোগাসহ কয়েকজন পুলিশের লোক তাড়াহুড়া করে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল এবং এক দারোগা লাফ মেরে আমার ওপর এসে পড়ল। আমি এতে খুব রেগে গেলাম এবং তাদের বললাম, ‘তোমরা, এ রকম ব্যবহার করছ কেন? আমি তো পালিয়ে যেতে চাইছি না। এসপি আমার কাছে সকলের থেকে মাফ চাইল। এ সময় খয়রাত হোসেন আমার কামরায় এলো। সে চৌকির ওপর বসে জিজ্ঞেস করল, ওয়ারেন্ট কি শুধু তর্কবাগীশের বিরুদ্ধে আছে না অন্য কারও বিরুদ্ধে? তখন তারা বললেন আপনাকেও আমরা গ্রেফতার করব। .... এর ঠিক পরেই দেখলাম আবুল হাশিম সাহেবকে হাজির করল। তারপর মনোরঞ্জন ধর, গোবিন্দচন্দ্র মুখার্জীকে। ওখান থেকে কিছুক্ষণ পর আমাদের ঈবহঃৎধষ ঔধরষ এ নিয়ে গেল। (সূত্র ভাষা-আন্দোলন প্রসঙ্গ কতিপয় দলিল-বদরুদ্দীন উমর।) লেখক : গবেষক E-mail: [email protected]
×