ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এলাকায় গিয়ে জনগণকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

 এলাকায় গিয়ে জনগণকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন ॥ প্রধানমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ অবরোধ-হরতালের নামে নাশকতা-সহিংসতা ও মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দলের সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এই নাশকতা ও মানুষ হত্যার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কপালে দুঃখ আছে। চাইলে তাঁকে অনেক কিছুই করা যায়। তবে এ মুহূর্তে কিছুই করতে চাই না। সন্ত্রাস-নাশকতা দমনে সরকার সরকারের কাজ করবে, আর দলকে দলের কাজ করতে হবে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও দেশের স্বার্থে যা যা পদক্ষেপ নেয়ার দরকার সরকার তা পর্যায়ক্রমে নেবে। রবিবার রাতে জাতীয় সংসদ ভবনের নবম তলার সরকারী দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের জরুরী বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দলীয় সংসদ সদস্যদের প্রতি এমন নির্দেশ দেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। রাত সাড়ে আটটা থেকে শুরু হয়ে প্রায় পৌন এক ঘণ্টা এ বৈঠক চলেছে। পরে রাতে গণভবনে দলীয় সংসদ সদস্যদের নৈশভোজে আপ্যায়িত করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেও দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে দলের সিনিয়র নেতা ও এমপিদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। বৈঠক সূত্র জানায়, দলীয় সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী আন্দোলন নয়, আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাচ্ছেন। উনি এখন সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদের নেত্রীতে পরিণত হয়েছেন, তাই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের সঙ্গে কোন আপোস নয়। আপনারা (সংসদ সদস্য) নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাস-নাশকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া সন্ত্রাসী কর্মকা- করছে বলে আমরা তেমনটি করতে পারি না। আমরা তাঁদের সন্ত্রাসী কর্মকা- জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করব। তিনি বলেন, উনি অবরোধ-হরতাল দিলেও কোন কাজ হয়নি, আমরা জিনিসপত্রের দাম স্থিতিশীলসহ সবকিছু স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হয়েছি। আগামীতেও সক্ষম হব। বৈঠক শেষে বেশ ক’জন মন্ত্রী-এমপির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈঠকে নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য দলীয় এমপিদের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। দলীয় এমপিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘খালেদা জিয়ার যে কুৎসিত রূপ, যার কোন মায়া-মমতা নেই, ছেলে হারানোর শোকও যার নেই, যিনি সেজে-গুজে অন্যদের (ড. কামাল হোসেন ও মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ কয়েকজনকে ইঙ্গিত করে) সঙ্গে দেখা করতে পারেন, যিনি প্রতিদিন আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারছেন-তাঁর প্রকৃত রূপ মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। জনগণের কাছে খালেদা জিয়ার আসল রূপ উন্মোচন করতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যাসহ তাদের কর্মকা- সম্পর্কে নিজ এলাকার মসজিদ-মন্দির-গির্জাসহ উপাসনালয়ে তুলে ধরার ব্যবস্থা করার জন্যও এমপিদের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। এসএসপি পরীক্ষার বিষয়ে বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেছেন ‘পরীক্ষা পরীক্ষার মতো করে চলবে। পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে একদিন পেছানো হয়েছে। যদি পেছানো না হতো এবং যদি একজন শিক্ষার্থীরও কিছু হতো তাহলে তখন অনেকে সরকারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলতেন।’ খালেদা জিয়াকে দেশ ও গণতন্ত্রের শত্রু উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক’দিন আগে ছেলে মারা গেলেও তাঁর মধ্যে কোন পুত্রশোক দেখা যায়নি। তিনি যেভাবে মানুষ হত্যা করছেন, জ্বালাও-পোড়াও করছেন, তা জনগণের মধ্যে আরও বেশি করে প্রচার করতে হবে। এ সংক্রান্ত দল থেকে প্রকাশিত লিফলেট জনগণের মধ্যে বেশি করে প্রচারের নির্দেশও দেন তিনি। বৈঠক সূত্র জানায়, দেশের চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীসহ বৈঠকে বক্তব্য দেয়া আওয়ামী লীগ এমপিরা বলেছেন, পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক উন্নতি হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তাঁরা বলেছেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা সঠিক পথে আছি। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। এ সময় তোফায়েল আহমেদ বলেন, কিছু ক্ষেত্রে বিঘœ ঘটলেও কৃষি, শিল্প, আমদানি-রফতানিসহ সবকিছুই স্বাভাবিক আছে। জানা গেছে, এমপিরা যেন এলাকায় গিয়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে পারেন, সে জন্য সংসদ অধিবেশন দুই সপ্তাহের জন্য মুলতবি রাখার জন্য বৈঠকে প্রস্তাব দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তবে প্রধানমন্ত্রীসহ অন্য এমপিরা তাতে সায় দেননি। তবে একটি সূত্র আভাস দিয়েছে, আগামী বুধবার থেকে সংসদের অধিবেশন ক’দিনের জন্য মুলতবি করা হতে পারে, যাতে সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে এসএসসি পরীক্ষা নির্বিঘেœ অনুষ্ঠানে পদক্ষেপ নিতে পারে। অবরোধ-হরতালের নামে চলমান সহিংসতা ও সন্ত্রাসের বিষয়টিই রবিবারের বৈঠকের মূল বিষয় ছিল। এ নিয়ে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী, সংসদ সদস্য মেজর (অব) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম এবং এ কে এম শামীম ওসমান বক্তব্য রাখেন। তবে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সাংগঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগ কিংবা জরুরী অবস্থা জারির বিষয়ে কোন কথা হয়নি। বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বেগম খালেদা জিয়া যেটা করছে সন্ত্রাসী কর্মকা-। এটা কোন আন্দোলন নয়। তিনি জঙ্গীবাদ উত্থানের চেষ্টা করছেন। নাশকতা বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে আমরা যখন ছুটি পাব এলাকায় গিয়ে জনমত সৃষ্টির জন্য কাজ করব। এসব নাশকতার জন্য সকলতে সতর্ক থাকতেও বলা হয়েছে। শুক্রবার কেন্দ্রীয় কমিটির সভা ॥ দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে আওয়ামী লীগ আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের এক সভা আহ্বান করা হয়েছে। সন্ধ্যা সাতটায় গণভবনে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সকল সদস্যকে সভায় যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
×