ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

৭ বছর পর সৌদি শ্রমবাজার ফের খুলে গেল

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

৭ বছর পর সৌদি শ্রমবাজার ফের খুলে গেল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সৌদি আরবে আবার বাংলাদেশের শ্রমবাজার খুলে গেল। রবিবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক বার্তায় সৌদি কর্তৃপক্ষ এ ঘোষণা দিয়েছে। মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। দীর্ঘ ৭ বছর বাজারটি বন্ধ থাকায় জনশক্তি রফতানির হার নিম্নমুখী হয়ে পড়েছিল। দেশের জনশক্তি রফতানির জন্য সৌদি আররই সবচেয়ে বড় বাজার। সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সৌদি আরব সফর করেন। প্রতিনিধি দল সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর কর্মী নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। ওই বৈঠকে সৌদি শ্রমমন্ত্রী আবদেল ফকিহ বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নেয়ার কথা জানান। এই ঘোষণার কয়েকদিনের মাথায় সৌদি বাদশা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের অনুমোদন দেন। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় কর্মী যেতে পারবেন। সৌদি কোম্পানিই কর্মীদের সব খরচ বহন করবে। ফলে দেশ থেকে অনেক বেশি কর্মী সেখানে যেতে পারবেন। বাজারটি খুলে যাওয়ায় জনশক্তির রফতানির হার বাড়বে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। জানা গেছে, দীর্ঘদিন বাজারটি বন্ধ থাকায় জনশক্তি রফতানির হার নিম্নমুখী হয়ে পড়েছিল। দেশের জনশক্তি রফতানির জন্য সৌদি আরবই সবচেয়ে বড় বাজার। সরকার পুরনো বাজারগুলো উদ্ধারের জন্য যে কর্মসূচী হাতে নিয়েছে তারই অংশ হিসাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গত মাসে দেশটি সফর করেন। সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রতিনিধি দলের কয়েক দফা বৈঠক হয়। বিশেষ করে সৌদি শ্রমমন্ত্রী আবদেল ফকিহর সঙ্গে বৈঠকটি দেশের শ্রমবাজার উম্মুক্ত হওয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বৈঠকে সৌদি শ্রমমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে কর্মী পাঠানোর ব্যয় কমাতে হবে বলে সৌদি শ্রমমন্ত্রী জানিয়ে দেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশী কর্মীরা যাতে অপরাধ প্রবণতা থেকে দূরে থাকে সে বিষয়েও সৌদি শ্রমমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে অনুরোধ জানান। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতির কথা তুলে ধরে আবদেল ফকিহ বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নেয়ার বিষয়ে সৌদি বাদশার অনুমোদনের কথা বলেন। ইতিবাচক আলোচনার শেষ করে প্রতিনিধি দল দেশে ফিরে আসেন। এর এক সপ্তাহের মধ্যে সৌদি আরবের নতুন বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। রবিবার এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার একটি বার্তা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সৌদি আরবের রাজকীয় সভা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিষয়টি অনুমোদন করেছে। দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের উপ-মন্ত্রী আহমেদ এফ আলফাহিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার বিভিন্ন বিষয় চূড়ান্ত করতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সৌদি সরকারের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন বলেও আশা করা হচ্ছে। সরকারী হিসাবে বর্তমানে ১২ লাখ ৮০ হাজার বাংলাদেশী সৌদি আরবে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। বাস্তবে এ সংখ্যার চেয়ে আরও অনেক বেশি কর্মী সৌদিতে কর্মরত আছেন। ২০০৮ সালে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় দেড় লাখ কর্মী নিয়োগ করে থাকত সৌদি আরব। শ্রমবাজার খুলে যাওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যেতে একজন শ্রমিকের ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ হবে না বলে গত ২৫ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সৌদি আরবে যেতে কর্মীদের আসলে তেমন কোনো খরচ নেই। চাকরিদাতাই লেভি, ভিসা, যাতায়াত এবং মেডিক্যালসহ অন্যান্য খরচ বহন করবে। গত ২৪ জানুয়ারি নিষেধাজ্ঞা ওঠার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে সৌদি শ্রমমন্ত্রী আবদেল ফকিহ রিয়াদে সাংবাদিকদের জানান, সৌদি আরবের কোন কোন খাতে কীভাবে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগ করলে দুই দেশই লাভবান হবে, সে বিষয়ে একটি কর্মকৌশল ঠিক করা হবে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সৌদি থেকে পাওয়া বার্তাটি দেশের শ্রমবাজারের জন্য একটি বড় খবর। শীঘ্রই বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক পাঠানো যাবে। কর্মী নিয়োগের বিষয়টি যেহেতু নীতিগত সিদ্ধান্তে চলে এসেছে-এখন শুধু কিছু আনুষ্ঠানিকতা বাকি রয়েছে। এটা হয়ে গেলেই বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ শুরু করবে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এই আনুষ্ঠানিকতাগুলো পূরণ করতে আল্প কয়েকদিন সময় লাগবে। সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রণালয় আশা প্রকাশ করেছে পুরনো শ্রমবাজারগুলো চাঙ্গা করলেই শ্রমবাজার আবার ভাল হয়ে যাবে। এই বাজারগুলো চাঙ্গা হলে কর্মী নিয়োগ গত বছরের তুলনায় অনেক বেড়ে যাবে। পুরনো বাজারগুলোতে কর্মীর প্রয়োজন থাকলেও তারা নানা কারণে কর্মী রফতানিকারক বেশ কয়েকটি দেশ থেকে নিযোগ বন্ধ রেখেছিল। তবে এটা সাময়িক। বন্ধ থাকা বাজারগুলো থেকেই কর্মী নিয়োগের বেশি প্রস্তাব আসছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে প্রস্তাব রয়েছে। সৌদি আরবে জনশক্তি বন্ধ না হলেও সেখানে গত কয়েক বছর ধরে কর্মী নিয়োগ কমিয়ে দেয়া হয়। এবার বাংলাদেশ থেকে কয়েক লাখ কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। কিছু শর্ত সাপেক্ষে কর্মী নিয়োগ করতে চায় দেশটি।
×