ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তছনছ হয়ে গেল নূর আলমের সংসার

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

তছনছ হয়ে গেল নূর আলমের সংসার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে এসে আর বাড়িতে ফেরা হলো না ঠিকাদার নূর আলমের (৪০)। ২৩ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ীতে বাসে অবরোধকারীদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু টানা নয় দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে রবিবার দুপুর ১টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। নূর আলমের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সাজানো সংসার তছনছ হয়ে গেছে। এতে বাড়ছে লাশের মিছিল। দগ্ধদের তালিকা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর পাল জানান, নূর আলমের শরীরের ৪৮ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। ২৩ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী বাসে পেট্রোল বোমা দগ্ধ হয়ে যারা এসেছিলেন তাদের শরীরের ১২ থেকে ৪৮ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। অন্যদের অবস্থা এখন আগের চেয়ে ভাল, তবে কাউকে আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোজাম্মেল হক জানান, ওই ঘটনায় নূর আলমের সঙ্গে আরও ৩০ জন দগ্ধ ও আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। যাত্রাবাড়ীর ওই ঘটনায় মোট ৬৯ জনের নাম উল্লেখ করে দুটি মামলা করেছে পুলিশ, যাতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে করা হয়েছে হুকুমের আসামি।এদিকে এদিন দুপুরে বার্ন ইউনিটে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলমান অবরোধ-হরতালে সহিংসতার ঘটনায় রবিবার (১ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত মোট একশ’ জন অগ্নিদগ্ধ রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক প্রফেসর সাজ্জাদ খন্দকার ও বার্ন ইউনিটের প্রকল্প পরিচালক ডাঃ আবুল কালাম জানান, বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ জন ও আনার সঙ্গে সঙ্গে ১ জন মারা গেছেন। রবিবার পর্যন্ত ভর্তি আছেন ৫৪ জন। আইসিইউতে আছেন ৭ জন। তাদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি করা হয়েছে ৪ জনকে। সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থেকে সায়েম, আলহাজ ও আবুল কাশেম এবং সাভার থেকে এসেছেন সুজন। এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানায়, বিএনপি-জামায়াতের টানা ২৫ দিন অবরোধে সারাদেশে ৩৪ জন দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় দুই শতাধিক। যাত্রাবাড়ীতে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ নূর আলমের বাবার নাম আহাদ আলী। গ্রামের বাড়ি নাটোর জেলায়। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ থানার পেচান এলাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন। তিনি দুটি সন্তানের জনক ছিলেন। গত ২৩ জানুয়ারি এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে এসে রাতে ফেরার পথে যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় অন্য বাসযাত্রীদের সঙ্গে তিনিও পেট্রোল বোমার শিকার হন। নূর আলমের মৃত্যুতে স্ত্রী চম্পা বেগম বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুতে তিনি অন্ধকার দেখছেন। কে তাদের দুই সন্তানকে চালাবে। সংসার চালাবে কে? নূর আলমের স্ত্রী চম্পা বেগম বিলাপ করে জানান, তার স্বামী সাব-কন্ট্রাক্টে ঠিকাদারি কাজ করতেন। ঘটনার দিন স্বামীর ছোট বোন হেনার মিরপুরের বাসায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে পেট্রোলবোমা হামলার শিকার হন। যারা আমার দুই সন্তান এতিম করেছে, আল্লাহ যেন তাদের ওই অবস্থায় রাখে। এ সময় চম্পা বেগম বার বার বিলাপ করে বলছিলেন, তার স্বামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। কেন তাকে পুড়ে মরত হলো। উল্লেখ্য, গত ২৩ জানুয়ারি সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা হামলা চালায় অবরোধকারীরা। এতে দগ্ধ হন ২৮ জন। ঢাকা-গাউসিয়া রুটের গ্লোরি পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৪৮৮৬) বাসটিতে এ হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা হয়। মামলা এজাহারে বলা হয়েছে, বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গত ৫ জানুয়ারি দেশব্যাপী অবরোধের ডাক দেন। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত দেশে অচলাবস্থা নিশ্চিত করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। তার ওই নির্দেশেই আসামিরা বাসে নাশকতা ঘটায়। বার্ন ইউনিটে সংবাদ সম্মেলন ॥ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চলমান অবরোধ-হরতালে সহিংসতার ঘটনায় রবিবার (১ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত মোট একশ’ জন অগ্নিদগ্ধ রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এদিন দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা জানান বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক প্রফেসর সাজ্জাদ খন্দকার। ঢামেক হাসপাতালের তৃতীয় তলার সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বার্ন ইউনিটের প্রকল্প পরিচালক ডাঃ আবুল কালাম ও সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ জন ও আনার সঙ্গে সঙ্গে ১ জন মারা গেছেন। রবিবার পর্যন্ত ভর্তি আছেন ৫৪ জন। আইসিইউতে আছেন ৭ জন। তাদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি করা হয়েছে ৪ জনকে। সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থেকে সায়েম, আলহাজ ও আবুল কাশেম এবং সাভার থেকে এসেছেন সুজন। এদিকে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতায় অগ্নিদগ্ধ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি রোগীদের জন্য অতি জরুরি নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্টে সরবরাহ করেছে ল্যাবএইড। গত ৩১ জানুয়ারি রাতে ল্যাবএইডের পক্ষ থেকে এসব নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্ট সরবরাহ করেন এজিএম, কর্পোরেট কমিউনিকেশন সাইফুর রহমান লেনিন। গ্রহণ করেন ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রাক্তন ডিরেক্টর ও প্লাস্টিক সার্জন ডাঃ সামন্ত লাল সেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ রবিউল করিম খান ও ল্যাবএইড গ্রুপের অন্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
×