ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রথম দিনেই বইপ্রেমীরা ভিড় করেন মেলায়, গুছিয়ে ওঠেনি সব স্টল

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

প্রথম দিনেই বইপ্রেমীরা ভিড় করেন মেলায়, গুছিয়ে ওঠেনি সব স্টল

মোরসালিন মিজান ॥ ‘মাগো, ওরা বলে,/সবার কথা কেড়ে নেবে/ তোমার কোলে শুয়ে/গল্প শুনতে দেবে না।/ বলো, মা, তাই কি হয়?/তাইতো আমার দেরী হচ্ছে।/তোমার জন্য কথার ঝুড়ি নিয়ে/ তবেই না বাড়ী ফিরবো...।’ খোকা বাড়ি ফিরেছিল। রক্তাক্ত বুকে। তবু মায়ের জন্য রাষ্ট্রভাষা বাংলা আনতে ভুলেনি। বায়ান্নর সেই আন্দোলন, আত্মত্যাগের ইতিহাস স্মরণে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বাংলা একাডেমি আয়োজিত এ মেলা শুধু মেলা নয়, লেখক পাঠক প্রকাশকের অনিন্দ্য সুন্দর সম্মেলন। বাঙালীর প্রাণের উৎসব। প্রতি বছরের মতো এবারও ১ ফেব্রুয়ারি রবিবার থেকে শুরু হয়েছে বাঙালীর সাংস্কৃতিক উৎসব। বিকেলে মাসব্যাপী মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে তিনি মেলার দুই অংশ বাংলা একাডেমি ও সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখেন। বলা চলে মেলার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন প্রথম দর্শনার্থী। বই দেখার পাশাপাশি এদিন পছন্দের বই কিনে সঙ্গে করে নিয়ে যান তিনি। প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর মেলা উন্মুক্ত করে দেয়া হয় সাধারণের জন্য। সন্ধ্যার কিছু আগে মেলায় প্রবেশ করেন টিএসসি ও শাহবাগে অবস্থানরত বইপ্রেমীরা। পুরনো অভ্যাস মতো, অনেকেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে শুরু করেন বই দেখা। প্রথম দিন একাডেমি অংশ ঘুরে দেখা যায়, মোটামুটি পরিচ্ছন্ন একটি চেহারা। এখানে ৯২টি প্রতিষ্ঠান। মোট ইউনিট ১২৮টি। প্রথম দিন হওয়ায় অনেক স্টলই চালু করা সম্ভব হয়নি। বহেরাতলায় ছিল না লিটলম্যাগ। এখানে কিশোর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৪২ ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসবের হাতেগোনা কয়েকটি চালু ছিল। একাডেমি চত্বরের বড় অংশজুড়ে রয়েছে সরকারী ও এনজিওসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টল। ২৫টি সরকারী প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে ৪৪ ইউনিট। এগুলো মোটামুটি চালু ছিল। আশা করা হচ্ছে, আজ মেলার দ্বিতীয় দিন থেকে চালু হবে সব স্টল। একইভাবে সোমবার থেকে বর্ধমান হাউসের পাশে স্থাপিত মেলা মঞ্চে প্রতিদিন আয়োজন করা হবে গুরুত্বপূর্ণ সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যায় মেলার সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, বেশ নতুন একটি চেহারা। বিগত যে কোন মেলার পরিসরের চেয়ে এই পরিসর কয়েকগুণ বড়। বিশালায়তন সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় পুরোটাই ব্যবহার করা হয়েছে ভেন্যু হিসেবে। উদ্যানের বিশাল পরিসরে স্টল সাজিয়েছে মূল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো। এখানে ১০৬ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ১ ইউনিট করে, ৯৬ প্রতিষ্ঠানকে ২ ইউনিট করে, ৪৫ প্রতিষ্ঠানকে ৩ ইউনিট করে এবং ১টি প্রতিষ্ঠানকে ৪ ইউনিটের স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ অংশের নতুন সংযোজন প্যাভিলিয়ন। ১১টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করেছে। ১০টি প্যাভিলিয়ন সাজিয়েছে ইউভার্সিটি প্রেস লিমিটেড- ইউপিএল, অনুপম প্রকাশনী, আগামী প্রকাশনী, সময় প্রকাশন, মাওলা ব্রাদার্স, অন্যপ্রকাশ, অনন্যা, সাহিত্যপ্রকাশ, কাকলী প্রকাশনী ও পাঠক সমাবেশ। প্যাভিলিয়ন প্রতিটির আয়তন ২০ ফিট বাই ২০ ফিট। কিছু প্যাভিলিয়ন সত্যি সুন্দর। রুচির পরিচয় রেখেছেন প্রকাশকরা। সবচেয়ে বড় প্যাভিলিয়নটি বাংলা একাডেমির। মেলার বাংলা একাডেমির মোট চারটি বিক্রয় কেন্দ্র রাখা হয়েছে। সবকটি বিক্রিয় কেন্দ্র থেকে ৩০ ভাগ ছাড়ে বই কেনার সুযোগ পাবেন পাঠক। একাডেমির ২০০০ সালের আগে প্রকাশিত বই কিনতে ছাড় পাওয়া যাবে ৭০ ভাগ। এবারের গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি শতাধিক নতুন বই পাওয়া যাবে। তবে মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো বই বিক্রি করবে ২৫ ভাগ ছাড়ে। সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান অংশের নান্দনিক সাজ সজ্জাও চোখে পড়ার মতো। উদ্যানে প্রবেশ করার যে রাস্তা সেটি ধরে সামনে এগিয়ে গেলে, চোখে পড়ে স্বাধীনতা স্তম্ভ। পুরোটা গ্লাস টাওয়ার দৃশ্যমান হয় এখান থেকে। পুরো উদ্যান ঘুরে দেখা যায়, কোন কোন অংশ পুরোপুরি প্রস্তুত। কোন কোন অংশ এখনও অপরিচ্ছন্ন। স্টল চালু করতে পারেননি অনেক প্রকাশক। যেগুলো চালু ছিল, পাঠক ভিড় করেছিল সেসব স্টলে। বিশেষ করে নামী স্টলগুলোর সামনে বাড়তি ভিড় দেখা গেছে। আনিলা ও আরেফ নামের দুই বন্ধুকে দেখা গেল, ভাষাচিত্র প্রকাশনীর সামনে। প্রথম দিনেই মেলায়। কেমন দেখছেন? জানতে চাইলে আনিলা বলেন, আসলে এই মেলার জন্য তো সারা বছর প্রতীক্ষা করে থাকি। ১ ফেব্রুয়ারি আসলেই মাথায় থাকে, মেলা শুরু হলো। কেমন হলো এবারের আয়োজনটি তা দেখতেই চলে এসেছি। আরেফ যোগ করলÑ বইও কিনেছি। বই দেখতে শুরু করলে না কিনে থাকা যায় না। এভাবে আরও অনেকেই প্রথম দিন বই কিনেছেন। মেলার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তরুণ প্রকাশক খন্দকার সোহেল বলেন, অন্য সববারের মতোই শুরুটা। হরতাল অবরোধ না থাকলে হয়ত আরও বেশি লোকসমাগম হতো। তা না হলেও, কিছু বিক্রি আমরা করতে পেরেছি। বাংলা একাডেমির মেলার গভীর আবেদনের কাছে হরতাল অবরোধ বড় বাধা হবে না বলেই আশা তাঁর। এদিকে, প্রথম দিন মেলার স্পন্সর প্রতিষ্ঠান টেলিটক ‘বর্ণমালা’ নামে একটি বিশেষ প্যাকেজ চালু করেছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
×