ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বোমার আগুন নেভান

সম্পাদক সমীপে

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৩১ জানুয়ারি ২০১৫

সম্পাদক সমীপে

অবরোধ আহ্বানকারীদের পেট্রোলবোমার আগুনে প্রতিদিন আহত হচ্ছে মানুষ। ভাঙচুর আর অগ্নিসংযোগ যেন কোন অবস্থায় ঠেকাতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আর ঠেকাতে পারবেই বা কিভাবে? যারা এ সংহিংসতা ঘটাচ্ছে তাদের মধ্যে হাতেগোনা কিছুসংখ্যক ধরার ক’দিন বাদেই জামিনে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। তাহলে হলোটা কী (?) সহিংসতা যারা ঘটায় তারাতো আরও আস্কারা পেয়ে গেল। সহিংসতা বন্ধ করতে হলে যা যা করণীয় তাহলো- ১. যারা হাতেনাতে ধরা পড়বে তাদের সহায়-সম্পত্তি ব্যাংক ব্যালেন্স যা কিছু রয়েছে তা বাজেয়াপ্ত করে পেট্রোলবোমায় পুড়ে যাওয়া সাধারণ মানুষকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদান করতে হবে। ২. সংহিংসতা-নাশকতাকারীদের ধরামাত্র তাদের ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য উকিল নিয়োগ করা যাবে না। প্রয়োজনে এদের কোন দ্বীপে কারাগার নির্মাণ করে সেখানে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ৩. যে এলাকায় পেট্রোলবোমার আগুনে মানুষ মরবে কিংবা ভাঙচুর ঘটাবে, সেখানে কাউকে হাতেনাতে ধরতে না পারলে ওই এলাকার হরতাল-অবরোধ আহ্বানকারীদের শীর্ষ ১০ নেতাকে দোষী সাব্যস্ত করে তাদের গ্রেফতার করে ৫ বছরের আগে মুক্তি দেয়া যাবে না। প্রয়োজনে তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে। এমনকি তারা কোন আইনজীবীও নিয়োগ করতে পারবে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে আইন প্রয়োগ করুন জরুরীভাবে। কেননা, বাংলার মানুষ পেট্রোলবোমার আগুন থেকে বাঁচতে চায়। লিয়াকত হোসেন খোকন ঢাকা। মানুষ হত্যার অবরোধ কথিত রাজনৈতিক কর্মসূচীর ও সহিংসতার জন্য মানুষ অগ্নিদগ্ধ হচ্ছে, পাথর নিক্ষেপে শিক্ষয়ত্রী মারা যাচ্ছেন। এমনকি পুলিশও আহত হচ্ছেন। যা মানবজীবনের এক বিরাট ক্ষতি। আর এজন্য দায়ী সহিংস রাজনীতি। অথচ এ বিষয়ে সংবাদপত্রে আগেও অনেক লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু তবুও রাজনৈতিক নেতারা তাদের সহিংস রাজনীতির কোন পরিবর্তন করছেন না। রাজনৈতিক কর্মসূচী, শ্লোগান, প্রতিশ্রুতি আজকালের জীবনযাত্রার সাথে বাস্তবভিত্তিক কোন মিলও নেই। জনসংখ্যা বাড়ছে, মানুষের নানাবিধ সমস্যা। আর সেই সমস্যা সমাধানের জন্য হওয়া উচিত বর্তমান রাজনীতি। কিন্তু তা না হয়ে দেশের মানুষকে সহজ, সরল, নরম ও ভদ্র পেয়ে রাজনীতিওয়ালারা নোংরা রাজনীতি তথা, বোমা নিক্ষেপ ইত্যাদির নামে ক্ষয়ক্ষতি করে দেশ ও দেশের মানুষকে পিছিয়ে দিচ্ছে। যা বর্তমান গণতন্ত্রিক বিশ্বে অগণতান্ত্রিক ও অসভ্য কাজ। মানুষ এ ধরনের জঘন্য রাজনীতি চায় না। দেশের মানুষ উন্নয়নের জন্য স্থিতিশীলতা ও শান্তির পরিবেশ চায়। জানমালের ক্ষতি রোধ করে দেশের মানুষকে ভয়ভীতি না দেখিয়ে সুন্দর ও ভাল রাজনীতি উপহার দিতে রাজনীতিবিদদের প্রতি মানবিক আবেদন জাতির। শরীফউদ্দিন ভয়েস তেজকুনিপাড়া, ঢাকা। মিথ্যাচারের রাজনীতি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া প্রায় তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন প্রতিহত করার আপ্রাণ চেষ্টা করেও তারা কিন্তু নির্বাচন ঠেকিয়ে রাখতে পারেননি। নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াত জোট সারাদেশে প্রায় ছয় হাজার ভোটকেন্দ্র তথা স্কুল মাদ্রাসা পুড়িয়ে দিয়েছিল। পোলিং প্রিজাইডিং অফিসার হত্যা করেছিল। তাছাড়া প্রায় ৭০০০ রাস্তার দুই ধারের গাছ কর্তন করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে নির্বাচন বন্ধ করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। তারপরও প্রায় ৪১% লোক ভোট দিয়েছিল, দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এখন ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র দিবস হত্যা পালন করতে গিয়ে সারাদেশে ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করেছে। অনবরত আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করছে। যা মানুষের কাম্য নয়। সবচেয়ে আশ্চর্য এবং হাস্যকর বিষয় হলো, ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধান অমিত শাহ টেলিফোনে খালেদার খোঁজখবর নেন বলে কি নির্লজ্জ মিথ্যাচার করা হলো। অথচ তাঁর পক্ষ থেকে কোন ফোন করা হয়নি। এটা দেশ ও জাতি এবং বিভিন্ন দলের জন্য লজ্জাজনক অধ্যায়ের সূচনা করল জাতীয়তাবাদী দল। রণজিত মজুমদার সোনাগাজী, ফেনী। আর কত পোড়াবে? আর কত জ্বালাবে আর কত পোড়াবে, এর চেয়ে ঢের ভাল একেবারে মেরে ফেল। অথবা আমাকে পোড়াতে যদি লাগে ভাল, অঙ্গার করে দাও, জ্বলে-পুড়ে হয়ে যাব ছাই। কথাগুলো কাব্য হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের বাস্তব অবস্থা এটাই। রাস্তায় বেরুলেই মনে হয় এই বুঝি পেট্রোলবোমার আগুনে প্রাণটা গেল। অলি-গলি, গাড়িতে, এমনকি রাস্তায়ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নেই। চোরাগোপ্তা হামলায় যে কোন মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে মারাত্মক কোন দুর্ঘটনা। বিএনপির ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ এবং তার সঙ্গে মাঝে মধ্যে ডাকা হরতালে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। রাজনীতির নামে জনগণকে আর বলি করবেন না। অনেক হয়েছে, এবার থামুন। আলোচনায় বসুন। জনগণকে শান্তিতে থাকতে দিন। রাজনীতির নামে জনগণ দেশের এমন নাশকতা, মানুষ পোড়ানো, খাদ্যবাহী ট্রাক পোড়ানো সমর্থন করে না। জনগণের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব¡ সরকারের। ক্ষমতাসীন সরকার তার জনগণ ও দেশের সম্পত্তির ওপর কোন ধরনের ক্ষতিসাধন বরদাশ্ত করতে পারে না এবং করা উচিতও না। আমরা চাই সরকার এসব যাবতীয় সন্ত্রাসী কর্মকা- বন্ধ করার লক্ষ্যে যথাসম্ভব আইনসম্মত পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসবেন। আমরা জনগণ বাঁচতে চাই, অপঘাতে মরতে চাই না। আমাদের আর আগুনে পুড়িয়ে মারবেন না, প্লিজ। নজরুল ইসলাম লিখন ষরশযড়হধষরভব@মসধরষ.পড়স অবরোধমুক্ত বইমেলা চাই বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বলছি, জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য সরকারের কাছে যে দাবি জানিয়েছেন এবং দাবি আদায়ের জন্য যে অবরোধের ডাক দিয়েছেন তার জন্য সমস্ত বাংলাদেশের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঘর থেকে বাইরে বেরোনোর কোন উপায় নেই। জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। দুর্বৃত্ত, সন্ত্রাসীরা গাড়িতে পেট্রোলবোমা ছুড়ে নির্দয়ভাবে, নৃশংসভাবে, নিরপরাধ মানুষ পুড়িয়ে মারছে। যা কারও কাম্য নয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী সন্ত্রাসীদের হাতেনাতে ধরতে পারছে না। এখন আপনার কাছে সবিনয় অনুরোধ, জনগণের কথা ভেবে অন্ততপক্ষে মহান ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারিতে দেশ ও দেশের বাইরের প্রতিটি বাঙালীর প্রাণের স্পন্দন বইমেলার জন্য আপনার আন্দোলন বন্ধ বা স্থগিত ঘোষণা করুন। আমরা চাই অবরোধ ও সহিংসতামুক্ত বইমেলা। যাতে সব মানুষ নির্বিঘেœ বইমেলায় যেতে পারে। আমার বিশ্বাস জনগণের আবেগ অনুভূতির কথা বিবেচনা করবেন। তাতে আপনারই লাভ হবে। আপনার প্রতি জনগণের সমর্থন ও সহানুভূতি আরও বেড়ে যাবে এবং আপনি যে জনগণের জন্য আন্দোলন করছেন এই কথাটা স্বচ্ছ কাঁচের মতো পরিষ্কার মনে হবে। আশা করি আমার এই কথাটুকু বুঝবেন ও রাখবেন। মিলন সরকার ঢাকা। দয়া-মায়া-মমতাহীন অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন, জুলুম, ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, জ্বালাও পোড়াও, বোমা, পেট্রলবোমা, ককটেল ছুড়ে সাধারণ মানুষকে আগুনে পুড়ে মারা, আগুন, দিয়ে যানবাহন পুড়ে ফেলা, শিশু, নারী, বৃদ্ধ, শিক্ষক, ফল ব্যবসায়ীকে হত্যা, নাশকতা, পুলিশ হত্যা, ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির করে ক্ষতি সাধন করা, শ্রমজীবী মানুষের পেটে লাথি মারা, রেলের সিøপার, ফিসপ্লেট তুলে ফেলে নিরীহ সাধারণ যাত্রী হত্যা করা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান তাবলিগ জামাতে লোকজনকে আসতে না দেয়া-এসব কার্যকলাপ সভ্যযুগে সভ্য পৃথিবীতে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে ঘটাচ্ছে রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলাম। নির্দেশদাতা বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি জঙ্গীবাদী কাজের নির্দেশদাতা। নাশকতা, অপকর্ম, ষড়যন্ত্রের মহানেত্রী। মমতাহীনতায় সারা শরীর ঢাকা। দয়া-মায়া অনুপস্থিত। ভারতবর্ষের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের নেতা ফুলন দেবী, যার নাম শুনলে সাধারণ জনগণ ভয়ে কাঁপতো সেই ফুলন দেবী এক সময় নিজের অপরাধ অনুধাবন করতে পেরে শান্তি কামনায় আত্মসমর্পণ করে কলঙ্কমুক্ত হন। জনগণের ভোটে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়ে জনসেবায় আত্মনিয়োগও করেছিলেন। ফুলন দেবী প্রশংসিত হয়েছিলেন। তিনি ছোট হননি, সম্মান হ্রাস পায়নি। খালেদা জিয়া বলছেনÑ শান্তিপূর্ণ অবরোধ! তিনি মিথ্যা বলেছেন অবশ্যই। যার নির্দেশে অবরোধে নিমর্মভাবে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, নাশকতা হচ্ছে। বার্ণ ইউনিটে জায়গা হচ্ছে না আগুনে পোড়া মানুষের। রেললাইন তুলে ফেলে সাধারণ যাত্রী হত্যা করা হচ্ছে, এসব কি বেগম খালেদা জিয়া মিডিয়াতে দেখেন না? পত্রিকায় দেখেন না? দীর্ঘ সময় স্বামী-স্ত্রী ক্ষমতায় ছিলেন। আর কত? অহঙ্কার, জেদ, হিংসা, পরনিন্দা, মানুষকে অমানুষ ভাবা, এতিমদের অর্থ আত্মসাত এসব পরিহার করে নতুন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন। জনগণকে ভালবাসুন। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। বলপ্রয়োগ, কালো টাকা ব্যবহার, নিষিদ্ধ জঙ্গীগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগসাজশ এসব কল্যাণ বয়ে আনবে না বরং নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। দল ধ্বংস হবে। কলঙ্কের বোঝা ভারি হবে। দলীয় নেতারা ভয়ে আপনাকে পরামর্শ দিতে পারে না। আল কায়েদা, তালেবান, আইএসএস, বাংলা ভাই, জামায়াতে ইসলাম, শিবির, যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, আলবদর প্রভৃতি অসভ্য অন্ধকার জগত হতে আপনি বেগম খালেদা জিয়া, আপনাকে মুক্ত দেশের মুক্ত সমাজে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হচ্ছে। অধমদের ছেড়ে আসুন। তাতে আপনি হতে পারেন উত্তম। এম আলী শ্রীনগর। আর নয় সহিংসতা যাদের নিয়ে রাজনীতি করবেন তাদেও, পথে-ঘাটে পেট্রোলবোমা ককটেল ও বাস, ট্রাক, লেগুনায় আগুন দিয়ে পুরিয়ে মারবেন, এটা কি ঠিক? এর নাম কি রাজনীতি? গরিব-মধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষকে পুড়িয়ে মেরে কি লাভ। এই যদি হয় রাজনীতি তাহলে সে রাজনীতিতে এ দেশের জনগণ কখনও সমর্থন তো দূরের কথা ধিক্কার দেয় তাদের, যারা বার বার সহিংস কর্মসূচী দিয়ে এদেশের মানুষের দুর্ভোগ চরমে নিয়ে গেছে। এরা সমাজকে কিছু তো দিতে পারেনি বরং কলুষিত করছে এদেশ ও দেশের রাজনীতি। ঘন ঘন হরতাল-অবরোধ, যা পরবর্তীতে সহিংস ও বোমাবাজির আতঙ্কে পরিণত হয়, কত যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, যা দেখে বিশ্ববাসী হতবাক। বিদেশীরা আমাদের দেশের রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামায় অথচ আমরা এ ক্ষেত্রে কত বোকা। রাজনীতিতে হিংসা, বিদ্বেষ, অহমিকা, অহঙ্কার, ক্রোধ, ক্ষোভ, ধ্বংসের কিছুই থাকা ঠিক না। বরং দেশ ও দেশের মানুষকে ভালবাসা ও তাদের কর্মে জনগণের মন জয় করাই হউক শান্তিময় রাজনীতি। রাজনীতিতে দেশপ্রেম না থাকলে তাদের রাজনীতি করা উচিত হবে না। মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী গেন্ডারিয়া, ঢাকা। বর্বরতার শেষ কোথায়? অনবরত বাসে আগুন দেয়া ও বোমা হামলা হচ্ছে। নিরপরাধ সাধারণ মানুষ পুড়ে কয়লা হচ্ছে। ঝলসে যাচ্ছে সুন্দর মুখ ও দেহের অন্যান্য অংশ। বাসা থেকে বেরিয়েই এক অজানা আতঙ্ক ভিড় করে আমাদের সবার মধ্যে। কখন জানি কি হয়? অবস্থা এমন হয়েছে, সবাই বুঝতে পারছে অবস্থাটা, তবু যার যার সম্পর্কের জায়গা থেকে একটু পরামর্শ বা উপদেশ দিতে কেউ ভুল করছেন না। বাবা সন্তানকে বের হওয়ার সময় দেখেশুনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন। স্ত্রী তাঁর স্বামীকে পরামর্শ দিচ্ছেন সাবধানে চলার। আর এদিকে স্ত্রী বাসায় বসে বসে সারাটা দিন অজানা এক দুশ্চিন্তায় দীর্ঘ সময় গুনতে থাকেন। মনে সংশয় জাগতে শুরু করে, আমার সন্তান-স্বামী সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরবে তো? নাকি কোন বিপদে আটকে গেছে! সময় গড়িয়ে বেলা শেষে যখন নিরাপদে ঘরে ফেরা হয়, তখনই শেষ হয় একজন মায়ের ও স্ত্রীর উৎকণ্ঠার দিন। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? একটা স্বাধীন দেশে নিরাপত্তার এই দুর্দশা ভাবলে কান্না ছাড়া কিছুই আসে না। চলমান এ অমানবিক সহিংসতার চিত্রই কি আমাদের গণতান্ত্রিক চর্চার প্রতিবিম্ব? এই স্বার্থান্বেষী জনস্বার্থবিরোধী রাজনৈতিক অবস্থার কি পরিবর্তন ঘটবে না? দলীয় হাইকমান্ড থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচীর ঘোষণা দেয়া হয়। আর হাইকমান্ড থেকে আসা নির্দেশনার বাস্তবায়ন ঘটান দলীয় সমর্থক বা ভাড়াটে কর্মী। কিন্তু তারাও তো মানুষ, তাদেরও তো স্বজন-পরিবার-পরিজন আছে। কিভাবে সে একটা মানুষ হয়ে দলীয় স্বার্থে বা অর্থের লোভে অন্য একটা মানুষের জীবনে অমানবিক বিপর্যয় বা বর্বরতায় দায় মাথায় তুলে নেয়? হায়রে মানুষ! মানুষের যদি গ্যাংগ্রিন (এক ধরনের পচন রোগ) হয়, তখন দেখা যায় মানুষ বাঁচার তাগিদে সেই পচন ধরা অংশটুকু কেটে ফেলে দিয়ে বাঁচতে চায়। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে দেখছি, নষ্ট রাজনীতির নামে যে গ্যাংগ্রিন আমাদের মানসিকতায় প্রবেশ করেছে, সেটা থেকে আমরা পরিত্রাণ পাচ্ছি না। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে যে, গ্যাংগ্রিন এ-আক্রান্ত অংশটুকু কেটে সময়মতো চিকিৎসা না করালে, সারা দেহে এর পচন ছড়িয়ে পড়বে। আর তখন ইচ্ছে করলেই পচনরোধের আর কোন উপায় থাকবে না। সুমিত বণিক কিশোরগঞ্জ। জানালাটা খোলা থাক লেগুনাতে আমরা ১২ জন। তবে ভয়ের বিষয় হচ্ছে, লেগুনাতে যদি কেউ এখন পেট্রোলবোমা বা ককটেল ছুড়ে মারে, তবে আমরা ১২ জনের মধ্যে কমপক্ষে ১০ জনই গুরুতর বিপাকে পড়ব। এখানে বাসের মতো জানালা নেই যে গ্লাস সরিয়ে লাফ দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেব। এছাড়া লেগুনার ভেতর প্রবেশ এবং বেরোবার দরজা একটাই। যার দরুন প্রয়োজনীয় মুহূর্তে ঐ এক দরজায় সবাই হুড়োহুড়ি করাই আমরা কেউই বেরোতে পারব না। ফলে একটা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতেই পারে। তা অস্বাভাবিক কিছুই না। কোনরকম অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ছাড়াই যাত্রাবাড়ী পৌঁছলাম। আপাতত গন্তব্য আসাদ গেট। আর তাই যাত্রাবাড়ী থেকে গাবতলীর বাসে উঠলাম। বাসের মাঝামাঝি অবস্থানে জানালার পাশে একটা মাত্র সীটই খালি পড়ে আছে। গিয়ে বসলাম ওখানেই। বন্ধ জানালার গ্লাসটা হাল্কা খুলতেই পাশের ভদ্রলোক বলে উঠলেন, ‘জানালাটা বন্ধই রাখেন, কখন কি হয় বলা যায় না।’ বিষয়টা সত্য। আর তাই মনের কোণে পুনরায় জেঁকে বসল পুরনো ভয়টা। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বন্ধ করে দিলাম জানালাটা। অথচ আমার তো জানালাটা বন্ধ করার কথা নয়! প্রতিদিন কত সংবাদ পড়ছি-লিখছি, মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে ছোটছুটি করছি, যেখানে আগুন ধরছে, পেট্রোলবোমা ককটেল ফুটছে সেখানে ছুটে যাচ্ছি। কিন্তু কই, এজাতীয় ভয় তখন তো হচ্ছে না। শাহবাগের জ্যাম ঠেলে, বাংলামটর পেছনে রেখে আমাদের বাসটা এগুচ্ছে। কাওরান বাজারে আমাদের বাসটা দাঁড়িয়ে আছে ঠিক একুশে টেলিভিশন ভবনের বিপরীত পাশে। ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত পৌনে আটটা। হঠাৎ করেই আমার মনের কোণে জমে থাকা ভয়টাকে সত্যি করে দিয়ে একুশে টেলিভিশন ভবনের সামনে দুটো ককটেল ফুটলো, যার লক্ষ্য আমাদের বাসটাও হতে পারত। জানালার গ্লাসের ভেতর দিয়ে শুধু ধোঁয়া দেখতে পেলাম। বাস মোটামুটি ফাঁকা থাকাই আমার পাশের জন ততক্ষণে দৌড়ে দরজায় গিয়ে হাজির। কাউকে নামতে না দিয়ে বাসের ড্রাইভারও বাসটাকে একটানে ছুটিয়ে নিলেন ফার্মগেটে। সামনে থেকে আসা আঘাতের মোকাবেলা করতেই পারি, কিন্তু পেছনেরটা রুখবে কে? আমিও তো চাই, বাসে আমার ছিটের পাশের জানালাটা খোলা থাক। হোসাইন মোহাম্মদ সাগর ংবহফযঁংধমধৎ@মসধরষ.পড়স
×