ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পেট্রোলবোমা আতঙ্কে পরিবহনে বাধা;###;ক্ষতির অঙ্ক বাড়ছে;###;সবচেয়ে বড় শিকার কৃষক;###;অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব

বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৩১ জানুয়ারি ২০১৫

বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম

কাওসার রহমান ॥ অবরোধ-হরতালে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা খুব একটা ব্যাহত না হলেও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে বাণিজ্যের। আর বাণিজ্যের ক্ষতির প্রভাব পড়ছে অর্থনীতির ওপর। বাণিজ্যের ‘লাইফলাইন’ হচ্ছে পরিবহন। পেট্রোলবোমার আতঙ্কে সেই পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক না থাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রমও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। টানা অবরোধ কিংবা হরতাল বাণিজ্যের খুব একটা ক্ষতি করেনি। ক্ষতি করছে পেট্রোলবোমার আতঙ্ক। সেই আতঙ্কের কারণেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি বাণিজ্যিক কার্যক্রম। তবে উদ্যোক্তারাও বসে নেই। তারা সড়কপথের বিকল্প হিসেবে অনেকটা নিরাপদ নৌপথকে বেছে নিচ্ছেন। যাদের পক্ষে সম্ভব তারা নৌপথেই পণ্য কিংবা কাঁচামাল পরিবহন করছেন। সচল রাখার চেষ্টা করছেন নিজ নিজ বাণিজ্য। সরকার যৌথ বাহিনীর প্রহরায় মাল পরিবহন অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেটা স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় নিতান্তই নগণ্য। এ কারণেই বাণিজ্যে ক্ষতির অঙ্ক বাড়ছে। আর এ ক্ষতির সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছেন দেশের কৃষক সমাজ। কখনই হরতাল-অবরোধে এদেশে শিল্প উৎপাদন থেমে থাকে না। এবারও থেমে নেই সেই উৎপাদন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে উৎপাদিত পণ্যের ডেলিভারি এবং কাঁচামালের যোগান নিয়ে। টানা ২৪ দিন অবরোধ-হরতালের কারণে কারখানাগুলোতে দেখা দিয়েছে কাঁচামাল সঙ্কট। সেই সঙ্গে উৎপাদিত পণ্যের ডেলিভারি স্বাভাবিক না থাকায় কারখানাগুলোতে জমছে মজুদের স্তুপ। ফলে জায়গার অভাবে কারখানার উৎপাদন শুধু হ্রাসই পায়নি, অনেক কারখানার উৎপাদন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অর্থনীতির প্রাণ যেমন বাণিজ্য তেমনি বাণিজ্যের (দেশী-বিদেশী) প্রাণ হচ্ছে বন্দর। টানা অবরোধ-হরতালে বন্দর থেকে পণ্য খালাস অনেকটাই থমকে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ প্রহরায় কিছু পণ্য পাঠানোর চেষ্টা হলেও তা আমদানির তুলনায় নিতান্তই নগণ্য। ফলে বন্দরে জমছে আমদানিকৃত তৈরি পণ্য ও কাঁচামালের বিরাট মজুদ। পেট্রোলবোমার ঝুঁকির কারণে ট্রাক ভাড়াও হুহু করে বেড়ে দুই থেকে তিনগুণ হয়ে গেছে। ফলে ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে পণ্য। পরিবহন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় শুধু ব্যবসায়ীরাই নয়, মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষক সমাজ। অন্যান্য পণ্যের ব্যবসায়ীরা তাদের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবেন। কিন্তু কৃষিপণ্য পচনশীল হওয়ায় কৃষক কখনই এ ক্ষতি পোষাতে পারবে না। সারাদেশে এখন চলছে সবজির মৌসুম। কিন্তু ট্রাক চলাচল স্বাভাবিক না থাকায় কৃষকের সবজি এখন মাঠেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি হচ্ছে সবজির ভরা মৌসুম। কিন্তু বিক্রি করতে না পারার কারণে কৃষকের ৪০ শতাংশ সবজিই এখন মাঠে পড়ে আছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে আছে আলু চাষীরা। দেশে এখন আলুর ভরা মৌসুম। কিন্তু বিক্রি করতে না পারায় কৃষকের ক্ষেতের আলু ক্ষেত্রেই পড়ে আছে। ফলে খুচরা বাজারে কমছে না আলুর দাম। অনেক কৃষক জমির পাশেই স্তুপ করে রেখেছেন মাঠের আলু। ট্রাক চলাচল না করায় পাইকাররা কৃষকের আলু কেনায় আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এতে আলুর দামও অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। চার শ’ থেকে ৫শ’ টাকা আলুর মন এখন দেড় শ’ থেকে দুই শ’ টাকায়ও কেউ কিনতে চাচ্ছে না। দেশে সারা বছর প্রায় ৪০ লাখ টন সবজি উৎপাদিত হয়। এ সকল সবজির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ হয় শীতকালে। আর শীতের সবজির ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ কৃষক ওঠায় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে। কিন্তু অবরোধের কারণে পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক না থাকায় কৃষক এখন সবজি ওঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। অবরোধের শুরুতে সবজির দাম আশঙ্কাজনক কমে যায়। গোদাগাড়ির কৃষক তাদের উৎপাদিত টম্যাটো ৩শ’ থেকে সাড়ে তিন শ’ টাকার স্থলে বিক্রি করে দেড় শ’ টাকায়। লোকসান দিয়ে বিক্রির পর কৃষক এখন আর তাদের কৃষিপণ্য মাঠ থেকে ওঠাচ্ছে না। এতে ক্ষেতে পড়ে থেকে অনেক সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে ঢাকার আশপাশ এলাকায় উৎপাদিত সবজি ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় আসায় দাম কিছুটা বাড়লেও এখন পর্যন্ত রাজধানীতে সবজির সঙ্কট সৃষ্টি হয়নি। দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ থাকার কারণে দেশের প্রধান খাদ্যশস্য চাল পরিবহনও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ডেলিভারি দিতে না পারায় চাল কলগুলোও বাজার ও মোকাম থেকে খুব একটা ধান ক্রয় করছে না। ফলে গ্রামের হাটবাজারে ধানের কেনাবেচা এক রকম বন্ধ হয়ে আছে। চালকল মালিকরা বলছেন, দেশের ১৭ হাজার চালকলের ৭০ শতাংশই এখন বন্ধ। স্বাভাবিক অবস্থায় এ সকল চালকলে দৈনিক ৪০ থেকে ৫০ হাজার টন চাল সরবরাহ হতো। এখন তা চার থেকে পাঁচ হাজার টনে নেমে এসেছে। ট্রাক ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় চালের দামও বেশি পড়ছে। আগে যেখানে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় ট্রাক আসা-যাওয়া করত সেখানে এখন ট্রাক ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে গেছে। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, কৃষিপণ্যের এই ক্ষতির প্রভাব বোরো আবাদে পড়তে পারে। এতে আমনের মতো বোরো আবাদও কমে যাবে। ফলে দেশ যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে তা ধরে রাখা কঠিন হবে। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব হোসেন বলেছেন, আমন, আলু ও সবজি বিক্রির সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি। এ সময় কৃষক মাঠের ফসল বিক্রি করতে না পারলে বোরো আবাদে বিনিয়োগ করতে পারবে না। তার প্রভাব পড়বে বোরো আবাদের ওপর। অবরোধ-হরতালে কখনও সমুদ্র ও স্থলবন্দরের কাজকর্ম বন্ধ থাকে না। এবারও বন্ধ নেই দেশের বন্দরগুলোর কার্যক্রম। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমদানিকৃত ও উৎপাদিত পণ্য পরিবহন নিয়ে। বিদেশী জাহাজ এসে পণ্য নামিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে। ভারত থেকেও নিয়মিতই মাল নিয়ে ট্রাক আসছে স্থলবন্দরগুলোতে। সেগুলো মাল খালাস করে দিয়ে চলেও যাচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে আমদানিকৃত ও কারখানায় উৎপাদিত পণ্য পরিবহন নিয়ে। দেশে বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ৩৫ হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়। সেই হিসেবে দৈনিক আমদানি হয় প্রায় এক শ’ কোটি ডলারের পণ্য। অন্যদিকে রফতানি হয় দৈনিক পাঁচ থেকে ছয় হাজার কোটি ডলারের পণ্য। দেশের দুটি সমুদ্রবন্দর ও ২০টি স্থলবন্দর দিয়ে এ সকল পণ্য আমদানি-রফতানি হয়। চট্টগ্রাম চেম্বারের এক পর্যালোচনা সভায় বলা হয়েছে, আগের বছরের ব্যবসায়িক ক্ষতি ২০১৪ সালে ব্যবসায়ীরা কিছুটা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হলেও ২০১৫ সালের প্রথমদিক থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হওয়ায় ব্যবসায়ীরা আবার নতুন করে ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। বছরের শুরু থেকে সারা দেশে অবরোধ, হরতাল, সহিংসতা, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির কারণে অর্থনৈতিক কর্মকা- মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে প্রতিদিনই এসএমই খাতে ১৫০ কোটি টাকা, উৎপাদন খাতে ১০০ কোটি টাকা, যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে ৬৮ কোটি টাকা এবং প্রতিদিন রফতানি খাতে ক্ষতি হচ্ছে ৬৯৫ কোটি টাকা। চাক্তাই খাতুনগঞ্জ থেকে প্রতিদিন ভোগ্যপণ্য নিয়ে কয়েক শ’ ট্রাক উত্তরবঙ্গের রাজশাহী, বগুড়া, কুষ্টিয়াসহ অন্যান্য জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যেত। কিন্তু এখন পণ্য নিয়ে ট্রাক যাচ্ছে না উত্তরবঙ্গের কোন জেলায়। পুলিশ ও সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়ার কথা বললেও ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকার মালের কোন ঝুঁকি নিতে রাজি নন। চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে মাল ওঠানো-নামানোর কাজ স্বাভাবিকভাবে চললেও স্বাভাবিকভাবে মাল ডেলিভারি হচ্ছে না। ধারাবাহিক নাশকতার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি পণ্য, কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য পরিবহন অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে সাপ্লাই চেন। ক্ষেত্রবিশেষে কিছু কিছু পরিবহন পুলিশ প্রহরায় চলাচল করলেও ভাড়া ৩ থেকে ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সময়মতো শিপমেন্ট করতে না পারার কারণে অনেক রফতানি আদেশ বাতিল হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ পরিচালক এমএম ওয়াহাব বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে বিদেশী ক্রেতারা দেশে আসছেন না। বিদেশে গিয়ে তারা অর্ডার নিতে বলছেন। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ দেবেন। বাকিগুলো অন্যদিকে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন। তাও আবার সময়মতো শিপমেন্ট করতে পারব কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন তারা। বলছেন, অর্ডার দিলে সেটা সময়মতো ডেলিভারি দেয়া যাবে কিনা? তিনি জানান, এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই মাসের অর্ডার দিতে এ মাসেই বিদেশী ক্রেতার বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তারা আসছেন না। ফলে নিজ প্রতিষ্ঠানের অর্ডার নিতে বিদেশ যেতে হচ্ছে। অথচ অর্ডার নিতে আমার বিদেশে যাওয়ার কথা নয়। শুধু যে বিদেশ থেকে আসা রফতানি অর্ডার কমে গেছে তাই নয়, স্থানীয় বাজারেও পণ্য সরবরাহ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। দেশের ভোগ্যপণ্যের চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশই যোগান দেয় সিটি গ্রুপ। এ প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিত সাহা বলেন, অবরোধের কারণে তাদের ভোজ্যতেল পরিবহন সবচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ প্রতিষ্ঠানের তেল পরিবহনকারী দুটি ট্রাক পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে এজেন্টরা ভোজ্যতেল নিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছে। তবে এ প্রতিষ্ঠানের সুবিধা হলো তাদের কারখানার কাঁচামাল পরিবহন করা হয় নৌপথে। ফলে এখন পর্যন্ত কোম্পানির কাঁচামাল পরিবহনে কোন সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। বিকল্প হিসেবে কিছু পণ্য তারা নৌপথে পাঠাচ্ছেন, কিন্তু সড়কপথে পণ্য পরিবহন একেবারেই কমে গেছে। সিটি গ্রুপ দৈনিক তিন হাজার টন চিনি উৎপাদন করছে। আর দৈনিক বিক্রি হচ্ছে ১২শ’ থেকে ১৩শ’ টন। প্রতিদিন ভোজ্যতেল উৎপাদিত হচ্ছে দেড় হাজার টন। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টন। সড়কপথ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বন্দর থেকেও মাল নিচ্ছেন না। একই অবস্থা ট্রেনের ক্ষেত্রেও। ট্রেনে মাল পরিবহনও ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন তারা। ফলে ট্রেনে মাল পরিবহন দৈনিক ১০০ কন্টেনার থেকে ৪/৫ কন্টেনারে নেমে এসেছে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, ঝুঁকি নিয়ে শত কোটি টাকার পণ্য পরিবহনের চেয়ে বন্দরে বসিয়ে ডেমারেজ দেয়া অনেক ভাল। দুবাই-বাংলাদেশ সিমেন্ট মিলের নির্বাহী পরিচালক জানান, ট্রাকের অভাবে মংলার বাইরে তাদের উৎপাদিত সিমেন্ট পরিবহন করা যাচ্ছে না। ফলে সাইলো ভরে গেছে উৎপাদিত সিমেন্টে। কারখানায় জায়গার অভাবে তাদের কাঁচামাল ভর্তি ২২টি কার্গো পশুর নদীতে অবস্থান করছে। ফলে কার্গোগুলোকে দৈনিক আড়াই হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ গুনতে হচ্ছে। এছাড়া এ কোম্পানির আমদানি করা সাড়ে ১৭ হাজার ক্লিংকার নিয়ে মাদার ভেসেল মংলার বাইরে গভীর সমুদ্রে অবস্থান করছে। মংলায় স্থাপিত ভোজ্যতেল কোম্পানি ভিওলা এডিবল অয়েলের মহাব্যবস্থাপক রইচ উদ্দিন জানান, রাখার জায়গার অভাবে তাদের ভোজ্যতেল উৎপাদন ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। উৎপাদিত তেল ট্রাকের অভাবে ডেলিভারি দেয়া যাচ্ছে না। ফলে উৎপাদন কমিয়ে দিতে হয়েছে। পোল্ট্রি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সাতটি এ্যাসোসিয়েশনের এপেক্স বডি বাংলাদেশ পোল্ট্রি শিল্প সমন্বয় কমিটির (বিপিআইসিসি) আহ্বায়ক মসিউর রহমান বলেন, পোল্ট্রি শিল্প অন্যান্য শিল্প থেকে আলাদা। চাইলেই উৎপাদন বন্ধ রাখা যায় না। বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ কোটি ডিম এবং এক হাজার ৭০০ মেট্রিক টন মুরগির মাংস উৎপাদন হয়। প্রতিসপ্তাহে একদিন বয়সী বাচ্চা উৎপাদিত হয় প্রায় এক কোটি ১০ লাখ। কিন্তু অবরোধ-হরতালে মুরগির এসব ডিম, বাচ্চা ও মাংস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে, ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছেন এ খাতে নিয়োজিত মালিক-শ্রমিক ও তাদের পরিবার-পরিজনরা। তিনি জানান, গত ১৪ দিনে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি ডিম, সাত হাজার মেট্রিক টন মুরগির মাংস এবং ৯৯ লাখ একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চা বাজারজাত করা সম্ভব হয়নি। বিক্রি করতে না পেরে প্রতিদিন প্রায় ২২ লাখ বাচ্চা মেরে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন উৎপাদনকারীরা। স্থলবন্দরগুলোও এখন আমদানিকৃত পণ্যে ঠাসা। কয়েকটি বন্দরের টার্মিনালসহ শেডগুলোতেও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। বেনাপোল স্থলবন্দরের ধারণ ক্ষমতা ৪২ হাজার টন। বর্তমানে সেখানে প্রায় ৭০ হাজার টন পণ্য ঠাসাঠাসি করে রাখা হয়েছে। এ বন্দরের রফতানিও প্রায় ৭০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। হিলি স্থলবন্দর থেকে পুলিশ প্রহরায় পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনও বন্দরে আমদানি করা পণ্যের ৭০ শতাংশ পড়ে আছে। তবে অবরোধের কারণে মুখ থুবড়ে পড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ স্থলবন্দরের চিত্র এখন পাল্টে গেছে। যৌথ বাহিনীর অভিযানের পর বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছে।
×