ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভুবনেশ্বর এখন মরাখাল

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ৩০ জানুয়ারি ২০১৫

ভুবনেশ্বর এখন মরাখাল

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফরিদপুর, ২৯ জানুয়ারি ॥ চরভদ্রাসন উপজেলা সদর ঘেঁষে ভুবেনশ্বর শাখা নদের নাব্য না থাকায় শীত মৌসুমেই শুকিয়ে গেছে উপজেলা সদরের একমাত্র নদটি। নদের নাব্য না থাকায় উপজেলাবাসীর দুর্ভোগের আর শেষ নেই। এতে উপজেলার জনগোষ্ঠীর মাছ ধরা, নৌকা যাতায়াত ও জেলা শহরের সঙ্গে লঞ্চ যাতায়াত দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। একই সঙ্গে ফসলী জমিতে পলিবাহিত মাটির আস্তর আর দেখা যাচ্ছে না। ফসল উৎপাদনে সেচকার্য ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলার পশ্চিমে গাজীরটেক ইউনিয়নের চরহাজীগঞ্জ বাজারের পাশে পদ্মা নদীর গর্ভ থেকে বেরিয়ে এসে অত্র নদীটি সদর ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে পূর্ব পাশের সদরপুর উপজেলার আকোটেরচর ইউনিয়নের পদ্মা নদীর সঙ্গে বিস্তৃত এ ভুবেনশ্বর নদটি। ভুবেনশ্বর নদটি ১৭ কিলোমিটার লম্বাকৃতি ও এক কিলোমিটার প্রস্থতা নিয়ে প্রবহমান ছিল। জানা যায়, স্বাধীনতার পূর্বকাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত অত্র নদটি ছিল উপজেলার একমাত্র গভীর জলমহাল। সে সময়ে নদে ১২ মাস পানি থাকত। উপজেলাবাসীর জেলা শহরে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল অত্র নদ। বছরে প্রায় ছয় মাস ছোট লঞ্চ চলাচল করত। বাকি সময় এ নদ দিয়ে পালের নৌকা চলত। উপজেলা সদর থেকে পদ্মা নদীর দূরত্ব ছিল সাত কিলিামিটার। ১৬৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের উপজেলার বিশাল জনগোষ্ঠীর ফসলী মাঠের উর্বরতা রক্ষা, সেচকার্য, মাছ ধরা, গোসলকার্য ও বিভিন্ন কাজের জন্য পানির প্রয়োজন মেটাত একমাত্র এ নদ থেকে। এছাড়া বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই বিভিন্ন গ্রামে এ নদের উপর আয়োজন করা হতো নৌকাবাইচের আসর। কালের বিবর্তনে এ নদটি খননের অভাবে দিন দিন নাব্য হারিয়ে এখন ফসলী মাঠ ও বালুচরে পরিণত হয়েছে। বিশাল এলাকাজুড়ে নদের বেশিরভাগ এলাকাই বেহাত হয়ে গেছে। কোন কোন এলাকা গো চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। শুধু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে থানা মোড় পর্যন্ত ৫শ’ মিটার বিস্তৃত জলমহালেই এখন এ নদের অস্তিত্ব রয়েছে। এর নামকরণ করা হয়েছে লোহারটেক কোল। গুরুদাসপুরের নদ-নদী সংবাদদাতা, নাটোর থেকে জানান, শুকনা মৌসুম আসার আগেই শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বেশিরভাগ নদ-নদী। নদীর নাব্য হারিয়ে পানিশূন্য হয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে বেশিরভাগ নদী। এর ফলে রাবারড্যামের দক্ষিণ অঞ্চলের কৃষিজমিতে প্রয়োজনীয় সেচ সঙ্কটের পাশাপাশি দশ সহস্র্রাধিক টিউবওয়েলে পানি সঙ্কটের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তবে নদীর নাব্য হারানোর জন্য স্থানীয় রাবারড্যামকে দায়ী করছেন এলাকাবাসী। গুরুদাসপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে দেখা যায়, উপজেলার সাবগাড়ি নামক স্থানে আত্রাই নদীতে বৃহত্তর রাবারড্যামটি আটকে দেয়ার ফলে সিংড়া উপজেলা এলাকার নদী ও খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি সংরক্ষিত থাকলেও ভাটি এলাকা গুরুদাসপুর উপজেলার আত্রাই, গুমানী, বড়াল ও নন্দীকুজাসহ খুবজীপুর নদী, তুলসীগঙ্গা নদী, গুড়নদী এবং বানগঙ্গা নদীতে পানি শুকিয়ে গেছে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় উপজেলার সমস্ত কৃষি স্কিমে চালিত অসংখ্য গভীর ও অগভীর নলকূপে প্রয়োজনীয় পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এলাকার কৃষকরা প্রতিটি স্কিমেই ৪-৫ হাত মাটি খুঁড়ে সেখানে শ্যালো মেশিন বসিয়ে জমিতে কোনরকমে সেচকাজ চালুর ব্যবস্থা করছেন। তবে কিছু দিনের মধ্যেই পানির স্তর আরও নিচে নেমে গেলে পানি সঙ্কটের অভাবে সেচ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়ে কৃষি উৎপাদন সঙ্কটের সম্মুখীন হবে বলে জানান কৃষকরা। পাশাপাশি আবাসিক এলাকায় স্থাপিত গভীর ও অগভীর নলকূপে পানির অভাবে পানীয়জলের সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা করছেন।
×