ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংযত, সংহত ও বাস্তবমুখী মুদ্রানীতি ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:১২, ৩০ জানুয়ারি ২০১৫

সংযত, সংহত ও বাস্তবমুখী মুদ্রানীতি ঘোষণা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বেসরকারী ও উৎপাদনশীল খাতে ঋণ প্রবাহ গতিশীল এবং মূল্যস্ফীতি পরিমিত রাখতে অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য ‘সংযত, সংহত ও বাস্তবমুখী’ মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৮ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি সাড়ে ১৫ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে নয়া মুদ্রানীতিতে। তবে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় এ অর্জন অনেক বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেনÑ যদি এটা দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে অর্থনীতির রক্তক্ষরণ বাড়বে। যারা সহিংস কর্মসূচী চালাচ্ছে, সাধারণ মানুষের কথা ভেবে তাদের এই কর্মসূচী বন্ধের জন্য আহ্বান জানান তিনি। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গবর্নর ড. আতিউর রহমান চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন মেয়াদের ষান্মাসিক মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে তিনি এ সব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এস কে সূর চৌধুরী, চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট এ্যাডভাইজার আল্লাহ মালিক কাজমী, প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বীরূপাক্ষ পাল সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এ সময় ডেপুটি গবর্নর আবুল কাশেম, নাজনীন সুলতানা, অর্থনৈতিক পরামর্শক ড. আখতারুজ্জামান, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ড. মাহফুজুর রহমানসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে ড. আতিউর রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতি পরিমিতির জন্য প্রয়োজনীয় সংযত ও সতর্ক মুদ্রানীতি ভঙ্গী শৃঙ্খলার মধ্যে থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের উন্নয়ন কৌশলের সমর্থনে দেশের আর্থিক খাতে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন যোগানে সচেষ্ট রয়েছে। তিনি বলেন, বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি এখনও ৬ দশমিক ৫ শতাংশের ওপরে রয়েছে, মূল্যস্ফীতির উর্ধমুখী প্রবণতা এবং চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতাজনিত প্রেক্ষাপটে আগামী ৬ মাসের মুদ্রানীতিতে নতুন কোন শিথিলতা বা কঠোরতা না এনে আগেকার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হচ্ছে। তিনি ঘোষিত এ মুদ্রানীতিকে বছরের প্রথমার্ধের ন্যায় ‘সংযত, সংহত ও বাস্তবমুখী’ মুদ্রানীতি বলে উল্লেখ করেন। মুদ্রানীতি প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের জন্য চলমান সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচী প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যবশত রাজনৈতিক অস্থিরতাজনিত বিঘেœর পুনরাবির্ভাব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনায় অনিশ্চয়তার ছায়া ফেলেছে। যদি এটা দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে অর্থনীতির রক্তক্ষরণ বাড়বে। যারা সহিংস কর্মসূচী চালাচ্ছে, সাধারণ মানুষের কথা ভেবে তাদের এ কর্মসূচী বন্ধের শুভবুদ্ধির উদয় হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। নতুন মুদ্রানীতি প্রোগ্রামে সংশোধনী এনে বেসরকারী খাতে ঋণ যোগানের উর্ধসীমা আগেকার ১৬ দশমিক ৫ শতাংশের বদলে কমিয়ে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারী খাতের উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বৈদেশিক অর্থায়ন ব্যবহারের সুযোগও উন্মুক্ত থাকছে। মুদ্রাযোগানে প্রবৃদ্ধির যে পরিসর মুদ্রানীতি প্রোগ্রামে রাখা হয়েছে, তা অনুকূল পরিবেশে সরকার নির্ধারিত জিডিপির উচ্চতর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পর্যাপ্ত অর্থায়ন দেয়া সম্ভব হবে বলে গবর্নর আশা প্রকাশ করেন। তবে বর্তমানের মতো রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে এ লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে বলে তিনি মনে করেন। চলতি অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক এরই মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রাক্কলন করেছে। আর এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) বলেছে, প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৪ হবে। সরকারের আশা অনুযায়ী জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত না হলেও মূল্যস্ফীতি বাজেটে নির্ধারিত ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে এমনটি মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে গত কয়েক মাসে মূল্যস্ফীতি কমে আসাকে আশার দিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গত ডিসেম্বর শেষে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে যেখানে ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ। গবর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি নিম্নগামী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত ও ঋণের সুদহারও নিম্নগামী হয়েছে। আমানত ও ঋণের সুদহারের গড় ব্যবধান বা স্প্রেড সরকারী ব্যাংকগুলো এবং অধিকাংশ বেসরকারী ব্যাংকে এখন ৫ শতাংশ পয়েন্ট বা তার নিচে। উচ্চ ঝুঁকিবহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ঋণে বেশি ভূমিকা রাখা গুটিকয়েক বেসরকারী ব্যাংক এবং বিদেশী ব্যাংকগুলোর স্প্রেড এখনও উচ্চতর। এগুলোর স্প্রেড যৌক্তিকীকরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান। গবর্নর বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে কৃষি ঋণের জন্যে ১৩ শতাংশ সুদহারের উর্ধসীমা নামিয়ে এনে ১১ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। গবর্নর বলেন, মুদ্রানীতির ভঙ্গির ধারাবাহিকতার পাশাপাশি মুদ্রানীতি অনুষঙ্গ ঋণ ও অর্থায়ন নীতি কাঠামোতে বিবিধমুখী বিনিয়োগ ও উৎপাদনবান্ধব সংস্কারের ধারাবাহিকতায় বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বজায় রাখা হবে। জোরদার করা হবে মুদ্রানীতির ট্রান্সমিশন চ্যানেলগুলো। এক প্রশ্নের উত্তরে গবর্নর বলেন, ঋণ নিয়মাচারের মধ্যে থেকে সব দেশে ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়া হয়। আমরাও সেটা করেছি নিয়মের মধ্যে থেকে । ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ না দিলে যেসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে কেবলমাত্র তারা এর সুযোগ পাবেন। কেননা এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে বড় ধরনের বেকারত্ব দেখা দেবে।
×