ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

লবণাক্ত এলাকায় সুপেয় পানি

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ৩০ জানুয়ারি ২০১৫

লবণাক্ত এলাকায় সুপেয় পানি

সুপেয় পানির সঙ্কট বিশ্বব্যাপী এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বলা হচ্ছে আগামীতে যদি বিশ্বযুদ্ধ বাধে, তাহলে তা পানির জন্যই বাধবে অথচ পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগই পানি। এর বেশিরভাগই পানের অনুপযুক্ত, লোনা পানি! বাংলাদেশের মতো জলাভূমি ভরপুর বৃষ্টিপাতের দেশটিতে প্রাকৃতিকভাবে সুপেয় পানির সঙ্কট থাকার কথা ছিল না। সমস্যা হয়েছে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে। সেচ ব্যবস্থায় পাম্প প্রক্রিয়ায় ক্রমাগত ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে তলদেশের পানির প্রবাহ হ্রাস পেয়ে সুপেয় পানি সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপাসাগর, লোনা পানির বিশাল পারাবার। দক্ষিণের মানুষ লোনা পানি থেকে যত দূরে সরে যেতে চেয়েছে, ততই সাগর এগিয়ে এসেছে তাদের দিকে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে জোয়ার বা জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা বাড়ছে। বিশেষ করে ২০০৯ সালে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় আইলায় খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট অঞ্চলের উপকূলীয় বাঁধ ছিন্নভিন্ন হয়ে লোনা পানি ঢুকে যাওয়ার পর ওই এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দেয়। অবশ্য কিছু মেরামত ও সংস্কার কাজ হয়েছে বটে; বিস্তীর্ণ অংশ এখনও ছোটখাটো ঘূর্ণিঝড়, নিম্নচাপ এমনকি জোয়ার-ভাটাতেও প্লাবিত হয়ে চলেছে এবং অবধারিতভাবে ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততায় জেরবার হচ্ছে। লবণাক্ততার কারণে শুধু খাবারের পানি নয়, ফসল উৎপাদনের সমান্তরালে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মিঠা পানির মৎস্য সম্পদেও। তবে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য জীবন-মরণ সঙ্কট হচ্ছে সুপেয় পানির অভাব। চাল, ডাল, সবজি, আমিষ উপকূলীয় এলাকার বাইরে থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব। কিন্তু পানি? গত শুষ্ক মৌসুমেও সুন্দরবনসংলগ্ন বহু উপজেলায় খাবার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দেয়। এসব উপজেলায় প্রায় ৫০ লাখ মানুষ বাস করেন। এক কলসি পানি সংগ্রহের জন্য এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছুটতে হয় সেখানকার মানুষকে। মিঠা পানির পাওয়ার জন্য প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে মানুষ নানা কৌশল বের করেছে। গ্রামের দিকে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্লান্ট, এমএ আর প্লান্ট, পিএসএফ প্লান্ট, এসএফপি প্লান্ট, রিভার অসমোসিস প্লান্ট প্রভৃতির মাধ্যমে মিঠা পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মিঠা পানির প্রাপ্তিতে সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য সাফল্য বয়ে এনেছে বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ)। পৌনে এক বছর আগে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাতাস থেকে মিঠা পানি উৎপাদনের যে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের বিষয়টি জানা যায় তাতে এক লিটার পানির জন্য ব্যয় হচ্ছিল কমপক্ষে দেড় টাকা। আর দেশে নতুন কৌশল খাটিয়ে মিঠা পানি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রতিলিটারের জন্য ব্যয় হচ্ছে মাত্র ৪ পয়সা। হাল্কা বাতাস থেকে পানি উৎপাদনের যন্ত্রটি তৈরি করেন ইসরাইলের ওয়াটার-জেন নামক প্রতিষ্ঠানের একদল গবেষক। আর আমাদের আরডিএর কৌশলটি হলো মাটির নিচে বিরাজমান মিঠা পানি খুঁজে বের করে তা সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, লবণাক্ত এলাকায় মাটির নিচে কোথাও অধিক গভীরে কোথাও স্বল্প গভীরতায় সুপেয় পানি রয়েছে। জায়গাটি খুঁজে বের করে গভীর ও অগভীর নলকূপের সাহায্যে বিশেষ প্রযুক্তিতে সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়ার কাজ জোরেশোরে চলছে। এ সফল গবেষণার জন্য বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। প্রক্রিয়াটি সফলতার সঙ্গে এগিয়ে নিতে তারা সক্ষম হবে এবং দেশের লবণাক্ত এলাকার মানুষের মিঠা পানির জন্য হাহাকারের অবসান ঘটবে- এটাই প্রত্যাশা।
×