ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ॥ গোলটেবিলে জরিপের তথ্য

উপকূলীয় ১৯ জেলার বিশ থেকে ২৫ লাখ বাস্তুচ্যুতির ঝুঁকিতে

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৯ জানুয়ারি ২০১৫

উপকূলীয় ১৯ জেলার বিশ থেকে ২৫ লাখ বাস্তুচ্যুতির ঝুঁকিতে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় ১৯ জেলার ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুতির ঝুঁকিতে আছেন। এছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গিয়ে ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের প্রতি ৭ জন মানুষের ১ জন বাস্তুচ্যুত হবেন। বর্তমানে বিশ্বের ১৬০ দেশের প্রায় ৫০০ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব মানুষের বেশিরভাগই আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বাসিন্দা। ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, নদী ভাঙ্গন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়াসহ বহুমাত্রিক কারণে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির (নিজ দেশের ভেতরে অন্য স্থানে) ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এ ধরনের জনগোষ্ঠীকে কেবল জলবায়ু শরণার্থী হিসেবে চিহ্নিত করলে চলবে না; পূর্ণ মানবাধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে এসব মানুষের স্থায়ী পুনর্বাসনের জন্য রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমন্বিত সহযোগিতার কার্যকর উদ্যোগও নিতে হবে। বুধবার সকালে রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) অডিটরিয়ামে ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ এ্যান্ড ডিসপ্লেসমেন্ট : দ্য গ্লোবাল ডিবেট’ (জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাস্তুচ্যুতি : বৈশ্বিক বিতর্ক) শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বিভিন্ন জরিপের তথ্য উল্লেখ করে বক্তারা এসব কথা বলেন। বিআইআইএসএস বোর্ড অব গবর্নরস-এর চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদের সভাপতিত্বে এতে প্রধান বক্তা ছিলেন সুইজারল্যান্ডের অধ্যাপক ও বাস্তুচ্যুতদের উন্নয়নবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন ন্যানসেন ইনিশিয়েটিভের চেয়ারম্যান ড. ওয়াল্টার কাইলিন। সমাপনী বক্তা ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক। বাংলাদেশসহ বিশ্বের নয়টি দেশ ন্যানসেন ইনিশিয়েটিভের সদস্য। অন্যরা হলো- অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, জার্মানি, কোস্টারিকা, কেনিয়া, মেক্সিকো ও ফিলিপিন্স। অধ্যাপক কাইলিন তার বক্তব্যে বলেন, বিশ্বে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ১৬ কোটি মানুষ। তবে বাস্তুচ্যুতদের আইনী পরিচয় নিয়ে জটিলতা রয়েছে। বিশেষ করে জলবায়ু শরণার্থী কারা- বৈশ্বিক পর্যায়ে এ বিতর্কের সমাধান এখনও হয়নি। তবে পরিচয় যাই হোক না কেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকার এসব মানুষের রয়েছে। তাই এদের স্থায়ী পুনর্বাসনে সরকারী-বেসরকারী ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমন্বিত সহযোগিতা দরকার। অন্যদিকে, জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তনের জন্য দায়ী দেশগুলো এর দায় নিচ্ছে না, এক্ষেত্রে এটি বড় একটি সমস্যা বলে মনে করেন তিনি। পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন স্বাভাবিক বিষয়। তবে এর প্রভাবে যখন মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হয়, তখন এটিকে সঙ্কট বলে স্বীকার করতেই হবে। এটি বর্তমানে অন্যতম প্রধান বৈশ্বিক ইস্যু। কারণ এ সমস্যা বৃদ্ধি পেলে দেশ, সংস্কৃতি, জাতি ও রাষ্ট্রের সীমানা পেরিয়ে মানুষ আশ্রয় খুঁজবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। কেননা পৃথিবী আমাদের একটাই। বাংলাদেশ জাতিসংঘের কনভেনশন মেনে এ বিষয়ে কাজ করছে বলেও জানান তিনি। প্যানেল আলোচনায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ নুরুল করিম বলেন, নদী ভাঙ্গনের ফলে বাংলাদেশের কয়েকটি জেলার মানুষ ইতোমধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় ঠাঁই নিয়েছে। ফলে শহরগুলোর ওপর চাপ বাড়ছে। তবে এ বিষয়ে সঠিক কোন পরিসংখ্যান না থাকায় এ সমস্যার তীব্রতা বোঝা যাচ্ছে না। সিডিএমপি জাতীয় প্রকল্প পরিচালক মোঃ আবদুল কাইয়ুম বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গিয়ে ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের প্রতি ৭ জন মানুষের ১ জন বাস্তুচ্যুত হবেন। তাই বাস্তুচ্যুতদের আইনী পরিচয় নির্ধারণের জন্য সময় নষ্ট করলে চলবে না। ইতোমধ্যে বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষের পুনর্বাসন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশ সরকার সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে। এ্যাকশান এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনে উন্নত, অনুন্নত সব দেশকে এগিয়ে আসতে হবে। প্যানেল আলোচকদের বক্তব্যের পর এ বিষয়ে মুক্ত আলোচনা হয়। এতে বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
×