ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রবীন্দ্র লোক ও শাস্ত্রীয় আঙ্গিকে ছায়ানটে কত্থক নৃত্যানুষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৯ জানুয়ারি ২০১৫

রবীন্দ্র লোক ও শাস্ত্রীয় আঙ্গিকে ছায়ানটে কত্থক নৃত্যানুষ্ঠান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নৃত্যের প্রতিটি মুদ্রা যেন ইঙ্গিত করছে প্রকৃতি ও মানুষের অপূর্ব মেলবন্ধন। যেখানে মথিত রয়েছে রবীন্দ্রনাথ, লালন অথবা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মোহময়তা। দর্শক নীরবে অপলক উপভোগ করছে এমনই এক নৃত্যানুষ্ঠান। বুধবার সন্ধ্যায় ছায়ানট মিলনায়তনের মঞ্চটিও সাজানো হয়েছিল তেমনই এক কত্থক নৃত্যপযোগী করে। ছায়ানট আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে কত্থক নৃত্য পরিবেশন করেন ভারতের কত্থক নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার দেবশ্রী ভট্টাচার্য ও তার দল। নৃত্য পরিবেশনার পূর্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ছায়ানটের নৃত্যশিক্ষক শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, নৃত্য হলো শরীরের ভাষা। কোন গান যেমন সুর ছাড়া আমরা কবিতা ভাবি তেমনি নাচে আমরা শরীর দিয়ে কবিতা লিখি। কবিতার ভাষাকে আমরা শরীর দিয়ে প্রকাশ করি। আজ এ অনুষ্ঠানে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি ভারতের এমনই এক নৃত্যশিল্পীকে, যিনি মাত্র ৭ বছর বয়স থেকে কত্থত নৃত্যে তালিম নিয়েছেন। শুধু ভারত নয়, কত্থক নৃত্যে ইতোমধ্যে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। আজ এই শিল্পীর সঙ্গে নৃত্যে অংশ নিচ্ছেন ভারতের উদীয়মান ৫ নৃত্যশিল্পী। বক্তব্যের পর শুরু হয় নৃত্য। শিল্পীরা মোট ৬ টি পর্বে অনুষ্ঠানটি ভাগ করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী এ কত্থক নৃত্যে রবীন্দ্রসঙ্গীত, লোকসঙ্গীত ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সঙ্গে কত্থক পরিবেশন করেন শিল্পীরা। প্রতিটি নাচের পূর্বে ধারাভাস্যে অনুষ্ঠানের ভাবমূর্তি আরও প্রাঞ্জল হয়। দর্শক নিবিষ্টচিত্তে উপভোগ করে এ নৃত্যানুষ্ঠান। নৃত্যানুষ্ঠান শেষে শিল্পীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতশিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। ছবি মেলার ষষ্ঠ দিনের আয়োজন ॥ রাজধানী ঢাকাজুড়ে ১১ টি ভেন্যুতে চলছে এশিয়ার সর্ববৃহৎ আলোকচিত্র উৎসব ছবিমেলা। এবারের উৎসবের থিম ‘অন্তরঙ্গ’। পৃথিবীর ২০টি দেশের ৩০ জনেরও বেশি আলোকচিত্রী এতে যোগ দিয়েছেন। বুধবার অষ্টম ছবিমেলার ষষ্ঠ দিনটি ছিল মনোরম। এদিন সকালে মিশেল উইরের সঞ্চালনায় ‘বেলফাস্ট ফটো ফেস্টিভ্যাল’ শুরু হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় মহেশ শান্তরামের সঙ্গে আর্টিস্ট টক। এই দুটি আয়োজনই অনুষ্ঠিত হয় গ্যটে ইনস্টিটিউটে। বিকেলে জাতীয় জাদুঘর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় অনুষ্ঠিত হয় গ্যালারি ভিজিট। এ দুই জায়গায় প্রদর্শিত হচ্ছে সাইমন নরফোক এবং তাপস পালের আলোকচিত্র। সন্ধ্যায় গ্যটে ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হয় লার্স উইলমেইটের লেকচার ও ডেনিস ডেইলাক্সের সঙ্গে আর্টিস্ট টক। দুই সপ্তাহব্যাপী এই উৎসব চলবে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। নৃত্য উৎসবের দ্বিতীয় দিন ॥ জাতীয় নৃত্যনাট্য উৎসবের দ্বিতীয় দিনে বুধবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় তিনটি নৃত্যনাট্য। নৃত্যনাট্য ‘রঙিলা নায়ের মাঝি’র পরিবেশনার মধ্য দিয়েই শুরু হয় দ্বিতীয় দিনের নৃত্য উৎসব। গ্রামের সহজ-সরল মানুষের জীবনভিত্তিক নৃত্যনাট্য ‘রঙিলা নায়ের মাঝি’। নাম সোনাহাটি। গ্রামের সবাই মোটামুটি সচ্ছল। প্রায় সবাই কৃষক। ওই গ্রামেরই পরোপকারী, উচ্ছল ছেলে কদম। পাশের গ্রামে থাকে তরুণী পারুল। নদীর ঘাটে আসে সখীদের সঙ্গে। একদিন কদম-পারুলের প্রেম হয়। গড়ায় বিয়ে পর্যন্ত। সুখের সংসার চলছিল তাদের। কিন্তু সেই সুখ বেশিদিন থাকেনি। বন্যা সবকিছু ভাসিয়ে নেয়। এরপর গ্রামে অভাব চলতে থাকে। তার ওপর খরা। কদম ভাবে দূরদেশে গিয়ে ব্যবসা করবে, সংসারের অভাব মেটাবে। এ বাসনা নিয়ে সে তার বন্ধু-বান্ধবকে নিয়ে নৌকায় পাড়ি দেয়। কিন্তু বিধি বাম। নৌকাডুবি সব শেষ করে দেয়। পারুল শোনে কদমের মৃত্যুর খবর। সে দৌড়ে নদীতে যায়, ঝাঁপ দেয়। এদিকে ঝড়ে বিধ্বস্ত কদম গ্রামে ফিরে আসে। নদী থেকে উদ্ধার করে পারুলকে। কিন্তু ততক্ষণে পারুলের প্রাণ নেই। পারুলের বিরহে কদমের হৃদয় ভেঙে যায়। এভাবেই এগিয়ে যায় নৃত্যনাট্য। নৃত্যাংশে ছিলেন এনামুল হক বাচ্চু, সাজিয়া রহমান প্রিসিলা, মোসাদ্দেক আলী অপু, বেলাল হোসেন চঞ্চল, মিজানুর রহমান সোহাগ, শেখ ওমর উদ্দীন, আনিসুজ্জামান রুবেল, পৃথিশ কুমার ম-ল, অথৈ রায় শিল্পী, সুমনা আক্তার শান্তা, কামরুন্নাহার তানিয়া, সোনিয়া নাসরিন, সুরভী ক্রজ, মাফুজা খানম লিজা, ফেরদৌসী খানম, বিপাশা মল্লিক, সিরাজুল ইসলাম হিরা প্রমুখ। এর পর ৭টায় বেলায়েত হোসেন খানের পরিচালনায় পরিবেশিত হয় ‘সামান্য ক্ষতি’। ফাতেমা কাশেমের নৃত্যপরিচালনায় রাত ৮টায় পরিবেশিত হয় নৃত্যনাট্য ‘গুনাই বিবি’। সুরের লহরীতে উপেক্ষিত শীত ॥ সুফির সুরে মাঘের শীতেও শিহরিত তনুমন। যেন সুরের পিয়াসা আর আধ্যাত্মিকতার চেতনায় জগতের সব কিছুই হার মেনে যায়। সুফির সুরের পেয়ালায় অবগাহন করে সঙ্গীতানুরাগীরা ফিরে পেয়েছিল এক ভিন্ন সুরের ব্যঞ্জনা। এমন চিত্রই লক্ষণীয় ছিল ব্লুজ কমিউনিকেশন্স আয়োজিত সুফি ফেস্ট ২০১৫’র দ্বিতীয় আসরে। বুধবার সুরের দ্বিতীয় দিনের আসরে হাজারো সঙ্গীতপ্রেমী মিলিত হয় বিজয়নগরে সামরিক জাদুঘর মাঠে। শুধু সুরের টানেই শীত হয়েছে উপেক্ষিত। একদিকে সুফি গানের মূর্ছনা, অন্যদিকে নানা রঙের বাতির আলোকচ্ছটায় মোহনীয় রূপ ধারণ করেছিল উৎসবের দ্বিতীয় রাতের আসর। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করে বাংলাদেশসহ ভারত, মিসর, ব্রাজিল ও স্পেনের শিল্পীরা। বাংলাদেশের শিল্পী রব ফকির ও বাউল শফিম-লের গান দিয়ে গত রাতের আসর শুরু হয়। রব ফকির পরিবেশন করেন ‘সাধ্য কিরে আমার সে রূপ চিনিতে’ গানটি। পরিবেশনা শেষেই চারদিকে করতালি ওঠে। এরপর দলের আরেক সদস্য বেবি দেওয়ান পরিবেশন করেন ‘তোরা কে কে যাবি জিয়ারতে বাবার দরবারে’,‘গুরুর চরণ অমূল্য ধন’ । এতে শফি ম-ল পরিবেশন করে ‘আমি মন মন্দিরে পূজা দিব’, ‘অযতনে ডুবলো ভরা’ গানটি। এছাড়া এই আসরে ভারতের শিল্পী অর্ক মুখার্জি, মিসরের মাওলাইয়া, ব্র্রাজিলের প্রজেটো সারাভা ও ভারতের মুনোয়ার মাসুম। আজ বৃহস্পতিবার শেষ হবে তিনদিনব্যাপী এই সুফি ফেস্ট।
×