ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিজের বোমায় মারা গেল শিবির ক্যাডার

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৯ জানুয়ারি ২০১৫

নিজের বোমায় মারা গেল শিবির ক্যাডার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বোমার আঘাত কতটা দুঃসহ, কতটা যন্ত্রণাদায়ক-সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে সাকিব। সে অন্যকে হত্যার জন্য বোমা ছোড়ে। দুর্ভাগ্যক্রমে সেটাই বোমেরাং হয়ে এলো তার জীবনে। নিজের বোমায় নিজেই মরবে এমনটি হয় তার জানা বা বিশ্বাস ছিল না। অত্যন্ত সতর্কভাবে বোমা ছোড়ার পরও সেটাই তার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। চট্টগ্রামের আলোচিত এই শিবির কর্মী সপ্তাহখানেক মৃত্যুযন্ত্রণায় ভোগার পর বুধবার ভোরে রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে মারা যায়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হাসপাতালের বেডে শুয়ে এক সপ্তাহ ধরে সাকিবের মুখ দিয়ে যেসব কথা শোনা গেছে তা নার্স ও ডাক্তারদেরও বিস্মিত করে। চট্টগ্রামের একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তির পর পরই তাকে দেখতে আসা স্বজনদের উদ্দেশ্যে যন্ত্রণাকাতর সাকিবের মুখে উচ্চারিত হয়েছে-এই বোমা আমার গায়েই লাগবে এটা কি আমি জানতাম? অনেক সতর্কে বোমাটি ছুড়ি। একটা ফাটে দূরে আরেকটা কাছেই। সেটাই লেগে যায় গায়ে। বোমাহত হওয়ার পর তিনদিন যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে সাকিব কিছুটা অনুতাপের সুরে বলেছে-এই বোমারই এত জ্বালা? যারা পেট্রোল বোমায় ভুগছে তাদের কষ্টটা আমি এখন অনুভব করতে পারছি। হাসপাতালের ওই ওয়ার্ডে কর্তব্যরত এক নিরাপত্তাকর্মী সাংবাদিকদের কাছে সাকিবের মৃত্যুতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এভাবে, ‘অন্যের জন্য কুয়া খুদলে, নিজেই সে কুয়ায় পড়ে মরতে হয়। সাকিব বোমা দিয়ে অন্যকে মারতে গিয়ে নিজেই মরে এ প্রবাদ আবারও প্রমাণ করল। জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা যদি সাকিবের কাছ থেকেও শিক্ষা নিত তাহলেও ওরা আর এমন বোমাবাজি করত না।’ চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি অঞ্চলের সহকারী কমিশনার আব্দুর রউফ জানান, সপ্তাহখানেক আগে বিস্ফোরণে আহত সাকিবকে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার সকালে পুলিশ পাহারায় ঢাকায় আনা হয়েছিল। সেখানেই তার মৃত্যু ঘটে। সাকিব আগে নগরীর বায়তুশ শরফ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিল। জানা যায়-গত ২০ জানুয়ারি রাতে সাকিব ও অন্য এক যুবক ব্যাটারিচালিত একটি রিক্সায় চড়ে যাওয়ার সময় নগরীর কদমতলীর কাছে আটমাসিং মোড়ে একটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। দ্বিতীয় হাতবোমাটি ছোড়ার সময় সেটি রিক্সার হুডে লেগে বিস্ফোরিত হলে সাকিব আহত হয়। এরপর রিক্সায় থাকা অন্য যুবক পালিয়ে যায়। আর আহত অবস্থায় সাকিবকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকায় আনার আগে সাকিবকে নগরীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। পরে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় আনা হয়। নিহত সাকিব লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা গ্রামের মৃত ওসমানুল হকের ছেলে। সে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। সাকিব শিবিরের সাথী পর্যায়ের কর্মী ছিল বলে জানা গেছে। পুলিশ বলছে, সে ককটেল বহন করছিল এবং নিজের ককটেলে নিজেই আহত হয়েছে। আহত হওয়ার পরদিন রাতে পুলিশ তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে গত ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল সেন্টারে তাকে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তাকে দুইদিন লাইফ সাপোর্টে রাখার পর গত ২৬ জানুয়ারি রাতে ঢাকা এ্যাপোলো হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাত তিনটার দিকে সে মারা যায়।
×