ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পুড়িয়ে মারা সন্তানের মায়ের আর্তনাদ কি খালেদা বুঝবেন না?

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৯ জানুয়ারি ২০১৫

পুড়িয়ে মারা সন্তানের মায়ের আর্তনাদ কি খালেদা বুঝবেন না?

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা অবরোধ-হরতালের নামে সন্ত্রাস-সহিংসতার সঙ্গে জড়িত মুষ্টিমেয় সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বিএনপি নেত্রী (খালেদা জিয়া) এখন তাঁর অসুস্থ ছেলের স্বাভাবিক মৃত্যুর ব্যথা উপলব্ধি করতে পারছেন। ছেলের স্বাভাবিক মৃত্যুই যদি উনি সহ্য করতে না পারেন, যদি তাঁকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে হয়; তা হলে যে সন্তানকে নির্মমভাবে আগুনে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে তাদের মায়ের বুকের ব্যথা-যন্ত্রণা কি উনি বুঝবেন না? উপলব্ধি করতে পারবেন না? এ ধরনের জঘন্য কর্মকা- সহ্য করা যায় না। বিএনপি-জামায়াত জোটের নাশকতা বন্ধ ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে বদ্ধপরিকর। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারী দলের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিএনপি নেত্রী তাঁর সন্তানের স্বাভাবিক মৃত্যুর বেদনা সহ্য করতে পারছেন না। সেখানে অবরোধের সহিংসতায় যে বাবা-মা তার সন্তান হারাচ্ছে, যে স্ত্রী স্বামী হারাচ্ছে; তারা কীভাবে এ বেদনা সহ্য করবে? তাই বিএনপি নেত্রীকে বলব, সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে আর কোন মায়ের বুক খালি করবেন না। মানুষকে পুড়িয়ে মারবেন না। মুষ্টিমেয় এসব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম নিয়ে উচ্চ আদালতের রায় সমীচীন নয় ॥ রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমে (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) বিচারপতিদের মর্যাদা বাড়িয়ে নিয়ে সম্প্রতি উচ্চ আদালতের দেয়া রায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিনের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের মর্যাদা নিজেরা বাড়িয়ে রায় দেয়া কোনমতেই সমীচীন নয়। এ ধরনের রায় পক্ষপাতদুষ্ট (পার্টিজান) ভূমিকা হয়ে যায়। প্রশ্নকর্তার সঙ্গে একমত পোষণ করে তিনি বলেন, বিচার বিভাগের এই সিদ্ধান্তের ফলে একটি চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির উপক্রম হয়েছে। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে একটা নিয়মনীতি আছে। আমাদের সংবিধানে বলা আছে, সবাই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আইনসভা, বিচারবিভাগ ও প্রশাসন- এই তিনটি হচ্ছে প্রধান স্তম্ভ। এই তিন স্তম্ভের সমন্বয়ে সবকিছু চলবে। কিন্তু কেউ যদি একটি ঘোষণা দিয়ে দেয় তাহলে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ প্রসঙ্গে সংসদ নেতা আরও বলেন, সংবিধানে সুনির্দিষ্ট রয়েছে কার কোথায়, কী অবস্থান হবে। এখানে যার যার নিজের মর্যাদা নিজে দেয়া, নিজের পক্ষে নিজেরা রায় দেয়া, এটা তো সমীচীন নয়। এটা তো পার্টিজান রুল হয়ে যায়। তিনি বলেন, জেলা জজের মর্যাদা যদি সচিব মর্যাদার হয় তাহলে উচ্চ আদালতে যারা আছেন তারা কোন্ মর্যাদায় যাবেন? যেতে যেতে তো মনে হয় তারা রাষ্ট্রপতির ওপরেই চলে যাবেন। বাংলাদেশ কোন বিচ্ছিন্ন দেশ নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন দেশ কীভাবে চলে, সেটা আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে যার যার কর্তব্য পালন করবে। বিচার বিভাগ তার দায়িত্ব পালন করবে। সকলের সঙ্গে একটি সমন্বয় থাকতে হবে। তাহলেই রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে। সেই জায়গাটা যদি নষ্ট করা হয়, উচ্চ আদালত থেকেই যদি এটা আসে, তাহলে সেটা দুঃখজনক। বিষয়টি সুরাহায় সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে আইনমন্ত্রী আলাপ-আলোচনা করছেন। এই সমস্যাটা কীভাবে সমাধান করা যায় তার যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। আশা করি, আমাদের বিচারক যারা আছেন তারাও বিষয়টি বুঝবেনÑকোন আদালতই নিজের নিজের প্রমোট করা বা কোনভাবে লাভবান বা বেনিফিশিয়ারি করা সম্পূর্ণ এথিক্সের বাইরে। বিএনপি সরকারেও নেই, বিরোধী দলেও নেই ॥ প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের অপকর্ম ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই বিএনপি এখন সরকারেও নেই, বিরোধী দলেও নেই। বিএনপি নেত্রী এখন শুধু একটি জোট বা গ্রুপের নেতা। এরা এখন সন্ত্রাসী, জঙ্গীবাদ, খুনীদের দলে পরিণত হয়েছে। হঠাৎ করেই আন্দোলনের নামে পূর্বের মতো আবারও মানুষকে পুড়িয়ে মারছে, দেশের সম্পদ ধ্বংসসহ নানা জঘন্য কর্মকা- ঘটিয়ে চলেছে। সমগ্র দেশের মানুষ এদের যন্ত্রণায় এখন অতীষ্ট হয়ে পড়েছে। এসব অপকর্ম ও সন্ত্রাসী কর্মকা- দেশের মানুষ আর সহ্য করবে না। সমবেদনা জানাতে গিয়েও তাঁকে বিএনপি নেত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না দেয়ার ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্তান হারানো মায়ের বুকের ব্যথা আমি বুঝি। তাই সন্তানের মৃত্যুর সংবাদ শুনে বিএনপি নেত্রীর গুলশানের কার্যালয়ে ছুটে গিয়েছিলাম। কিন্তু দরজায় তালা মেরে রেখে আমাকে ঢুকতে না দিয়ে অপমানিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, দরজায় তালা দেখেও আমি নিজের নিরাপত্তার কথা না ভেবে গাড়ি থেকে নেমে প্রধান ফটকের সামনে গিয়েছি। দরজার ছোট গেট দিয়ে সেখানে প্রবেশ করা যায় কিনা, সে চেষ্টাও করেছি। কিন্তু দেখলাম, প্রধান ফটকের সঙ্গে সঙ্গে ছোট গেটেও তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে এ ধরনের ব্যবহার কেউ কোনদিন করেছে কিনা, তা আমার জানা নেই। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির আগেও তাকে নির্বাচনে নিয়ে আসতে নিজে ফোন করেছিলাম। তখনও আমাকে ঝাড়ি খেতে হয়েছে। এবারও আমাকে অপমানিত করা হলো। বিএনপি-জামায়াত জোটের ধ্বংসাত্মক ও নাশকতামূলক কর্মকা- প্রতিহত করতে জনগণ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে নিজ নিজ এলাকায় সতর্ক প্রহরা বসানোর জন্য সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া এসব জঘন্য কর্মকা- করে যাচ্ছে, আর কিছু লোক আছে যারা আমাদের ওপর দোষ চাপানোর অপচেষ্টা করছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমাদের কী দোষ? আমরা তো মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করছি না? তিনি বলেন, নির্বাচনের পর গত এক বছরে আমরা দেশকে সবদিক থেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, দেশের ব্যাপক উন্নতি করেছি, দেশের মানুষ সেসব উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে। তবে কেন এই অবরোধ-হরতালের নামে সহিংসতা? একটি দেশকে কেউ এভাবে ধ্বংস করতে পারে? তারা কী রাজনীতি করে, রাজনৈতিক দলের নেতা হতে পারে? সরকারী দলের সদস্য মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে সহিংসতা চালিয়ে জনগণকে জিম্মি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টায় লিপ্ত। একাত্তরে পাকবাহিনীর ন্যায় সহিংসতা ও নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে চোরাগোপ্তা হামলার মাধ্যমে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে সাধারণ ও নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে। গত ৫ জানুয়ারি থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তথাকথিত অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীরা পেট্রোলবোমা মেরে ও আগুন দিয়ে ১৩৩ মানুষকে দগ্ধ করেছে, যার মধ্যে ইতোমধ্যে মোট ২৬ জন নিহত হয়েছে। ৩৮২টি বাস-ট্রাক পুড়িয়েছে, রেলে নাশকতামূলক ১৪টি ঘটনায় দুটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে, পুলিশের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে ৮৫টি। সংসদ নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারির আগ পর্যন্ত দেশ শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎই বিএনপি-জামায়াত জোট রাজনীতির নামে ইস্যুবিহীন আন্দোলন শুরু করে এবং শুরু করে সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কাজ। রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে তারা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘিœত করে জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অবরোধের নামে তারা জনগণকে পুড়িয়ে মারছে, অনেক মা-বাবার বুক খালি করেছে। এসব সন্ত্রাস-সহিংসতা দমনে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের এসব জঘন্য সহিংসতা দমনে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। অবরোধের নামে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে মানুষকে যারা পুড়িয়ে মারছে তাদের ধরিয়ে দিতে পারলে একলাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। জনগণকে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি করে ব্যবস্থা নেয়ারও আহ্বান করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে বদ্ধপরিকর। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আইন-শৃৃঙ্খলা রক্ষা ও উন্নয়নের কাজ অব্যাহত রেখেছি।
×