ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ খুলনা-মংলা পোর্ট প্রকল্পের দরপত্র জমা

দ্রুত এগিয়ে চলছে ভারতীয় ঋণের প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ২৯ জানুয়ারি ২০১৫

দ্রুত এগিয়ে চলছে ভারতীয় ঋণের প্রকল্প

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ দ্রুতই এগিয়ে চলছে ভারতীয় ঋণের অর্থে গৃহীত প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া। ইতোমধ্যেই সমাপ্ত হয়েছে ৭টি প্রকল্প। নতুন করে কন্ট্রাক সাইন হয়েছে একটি প্রকল্পের। আজ বৃহস্পতিবার দরপত্র জমা নেয়া হবে খুলনা-মংলা পোর্ট প্রকল্পে। থার্ড-ফোর্থ লাইন ডুয়েল গেজ সংক্রান্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কন্সালটেন্ট নিয়োগ প্রস্তাব মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে এই ঋণের অগ্রগতি খতিয়ে দেখছে সরকার। এ জন্য শীঘ্রই বৈঠকে বসছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। এ বৈঠকে ভারতীয় হাইকমিশনের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (এশিয়া) আসিফ-উজ-জামান জনকণ্ঠকে জানান, শীঘ্রই অগ্রগতি পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পগুলো অগ্রতিতে আমরা সন্তোষ্ট। কেননা লোকোমোটিভসহ হার্ডওয়ার ক্রয়সংক্রান্ত সব কাজই শেষ হয়ে গেছে। সিভিল ওয়ার্ক যে কয়েকটি প্রকল্পে আছে সেগুলো বাস্তবায়নে প্রক্রিয়াগত কারণেই একটু সময় লাগছে। তারপরও সেগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। যেমন ইতোমধ্যেই ১২০ কোচ প্রকল্পের বিষয়ে কন্ট্রাক্ট সাইন হয়েছে। খুলনা-মংলা পোর্ট এবং থার্ড-ফোর্থ ডুয়েল গেজ প্রকল্পের দরপত্র ও কন্সালটেন্ট নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়গুলো দ্রুত এগুচ্ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, ভারতীয় ঋণে গৃহীত প্রকল্পগুলোর ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। ইতোমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে ৭টি উন্নয়ন প্রকল্প। বাকিগুলো বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। মোট ১৫টি প্রকল্পের মধ্যে ইতোমধ্যেই যে ৭টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ হয়েছে সেগুলো হলো- ৮১টি বগি ট্যাংক ওয়াগন সংক্রান্ত প্রকল্প, ৫০টি আর্টিকুলেটেড ও ৮৮টি সিঙ্গেল ডেকার এসি বাস সংক্রান্ত প্রকল্প (সবগুলো বাস সরবরাহ করেছে ভারত), ১০ লোকোমোটিভ সংক্রান্ত প্রকল্প (সবগুলো লোকোমোটিভ এসেছে বাংলাদেশে), ১৬৫ ব্রডগেজ (বিজি) ট্যাংক ওয়াগণ সংক্রান্ত প্রকল্প (সবগুলো ওয়াগণ সরবরাহ করেছে ভারত), প্রকিউরমেন্ট অব ১৬ লোকোমোটিভ প্রকল্পের আওতায় সবগুলো লোকোমোটিভ এসেছে, ১৭০ ফ্লাট ওয়াগণ সংক্রান্ত প্রকল্পটি শেষ হয়েছে। অন্যদিকে ভারতীয় ঋণের অর্থে বাস্তবায়নাধীন থার্ড-ফোর্থ লাইন ডুয়েল গেজ সংক্রান্ত প্রকল্পটি কন্সালটেন্ট নিয়োগ প্রস্তাব মূল্যায়ন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এর আগে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়েছে। এতে আরও নতুন কম্পোনেন্ট যুক্ত হয়েছে। গত বছরের ১৪ এপ্রিল ভারতের পক্ষ থেকে এটি বাস্তবায়নের ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। খুলনা-মংলা পোর্ট সংক্রান্ত প্রকল্পটির দরপত্র আজ জমা নেয়া হবে। এর আগে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ করা হয়েছে। ডিটেইল্ট প্রজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরির কাজ শেষ। দ্বিতীয় ভৈরব ও তিতাশ সেতু নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্পটির জন্য দুটি আলাদা বাণিজ্যিক চুক্তি হয়েছে এবং গত বছরের জানুয়ারি মাসে মূল সেতু বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এর একটি সেতু বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে ২ বছর এবং অন্যটির আড়াই বছর। সূত্র জানায়, আধুনিক নিরাপদ ও মানসম্পন্ন যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য কেনা হচ্ছে ১২০টি সর্বাধুনিক কোচ। ভারতীয় ঋণের টাকায় এগুলো কেনা হচ্ছে এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৭৫ কোটি ৯৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২৬৫ কোটি ৩৩ লাখ ৬৪ হাজার এবং ভারতীয় ঋণ থেকে ৭১০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। রেল মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়েতে ৩২৪টি ব্রডগেজ (বিজি) যাত্রীবাহী কোচ রয়েছে। এ সমস্ত কোচের মধ্যে ৭৮টি (২৪ শতাংশ) কোচের স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল শেষ হয়েছে। ট্রাফিক চাহিদা অনুসারে ২২৫টি বিজি কোচের স্বল্পতা রয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে বর্তমানে বিদ্যমান ৩২৪টি কোচের মধ্যে মাত্র ১৮টি এসি কোচ আছে যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। বাংলাদেশ রেলওয়ের কোড অনুযায়ী যাত্রীবাহী কোচের স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল ধরা হয় ৩৫ বছর। আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ পুরাতন ও জরাজীর্ণ এই কোচগুলোর বর্তমান অবস্থা খুবই নাজুক। এই কোচগুলো পুরাতন ডিজাইনের এবং খুব দ্রুত এগুলো প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন। এজন্য ভারতীয় ডলার ক্রেডিট লাইনের আওতায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে- ১২০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী (এসি সিøপার কার ১৭টি, এসি চেয়ার কার ১৭টি, নন এসি শোভন ক্যারেজ ৬৭টি এবং এসি জেনারেটর কাম প্রার্থনা কক্ষ ১৯টি) কোচ সংগ্রহ করা, অফিস ইক্যুইপমেন্ট ও আসবাবপত্র সংগ্রহ করা হবে। অপর দিকে রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েল গেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পটি গত বছরের শেষ দিকে সংশোধন করা হয়েছে। দুই বছর আগে অনুমোদনের সময় প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮৪৮ কোটি ৬০ লাখ ১২ হাজার টাকা। সেখান থেকে ২৫৮ কোটি ১৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা বেড়ে বর্তমান ব্যয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১০৬ কোটি ৮০ লাখ ৮ হাজার টাকা। এ সংক্রান্ত একটি সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ প্র্রকল্পের আওতায় মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৪৮ দশমিক ৮০ কিলোমিটার নতুন ডুয়েল গেজ রেল ট্রাক নির্মাণ, টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ১২ দশমিক ২৮ কিলোমিটার নতুন ডুয়েল গেজ রেল ট্রাক নির্মাণ, ব্রিজ, স্টেশন ভবন, প্লাটফর্ম নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজ, একটি হ্যাভি ডিউটি বিজি টেমপিং মেশিন সংগ্রহ, সিগনালিং, অফিস যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য কার্যক্রম, ডিটেইল্ড ডিজাইন, টেন্ডারিং সার্ভিস ও সুপারভিশন পরামর্শক সেবা প্রভৃতি।
×