ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভোগ্যপণ্য বাজার অবরোধ হরতালের প্রভাবমুক্ত রাখার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৮ জানুয়ারি ২০১৫

ভোগ্যপণ্য বাজার অবরোধ হরতালের প্রভাবমুক্ত রাখার উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ ভোগ্যপণ্যের বাজার অবরোধ-হরতালের প্রভাবমুক্ত রাখতে অত্যাবশ্যকীয় ১৭টি পণ্যের দাম ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে দ্রব্যমূল্য পূর্বাভাস ও মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে এ সেল সারাবছর কাজ করবে। সরকার ঘোষিত অত্যাবশ্যকীয় সতেরটি পণ্যের মধ্যে রয়েছে- পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, শুকনা মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচি, ধনিয়া, জিরা, আদা, হলুদ, তেজপাতা, সয়াবিন তেল, পামতেল, চিনি ও খাদ্য লবণ। প্রধান খাদ্যপণ্য চালের দাম নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। আগামী রোজার সময় যাতে ভোগ্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক থাকে সে লক্ষ্যে আমদানি বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শীঘ্রই আমদানিকারকদের সঙ্গে জরুরী বৈঠক করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, রমজানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, পেঁয়াজ, ডাল ও খেজুর। এ ছয়টি পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের আমদানির প্রস্তুতি নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের টানা হরতাল-অবরোধের মধ্যেও যাতে বাজারে পণ্যমূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে সে জন্য ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা দেয়া হবে। যদিও সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবিও ইতোমধ্যে আমদানি এবং পণ্য মজুদ বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, শুধু রোজা নয়, সারাবছর যাতে পণ্যমূল্য স্বাভাবিক থাকে সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। এখন নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। বহির্বিশ্বে দাম না বাড়লে দেশেও আগামীতে পণ্যমূল্য স্বাভাবিক থাকবে। তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজার তদারকি নিয়ে আগে থেকে কাজ করছে। তবে বাজার স্বাভাবিক রাখতে এখন আনুষ্ঠানিকভাবে দ্রব্যমূল্য পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাস সেল গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাজার পর্যালোচনা করতে কাজ শুরু করেছে সেল। যাতে দ্রব্যমূল্য যৌক্তিক ও সহনীয় রাখা যায়। এখন থেকে প্রত্যেকটি নিত্যপণ্যের চাহিদা ও সরবরাহ পর্যবেক্ষণ করা হবে। তাছাড়া যে দেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে সে দেশের রফতানি, উৎপাদন পরিস্থিতি ও তাদের নিজস্ব চাহিদার জন্য সংরক্ষণ করা পণ্য পরিস্থিতি যাচাই করে মতামত দেবে। সে অনুযায়ী পরবর্তী এক বছরের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। এদিকে ভোগ্যপণ্যের বাজার হরতাল-অবরোধের প্রভাবমুক্ত রাখতে বেসরকারী খাতের আমদানি বাড়াতে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত জরুরী বৈঠক করা হবে। নিত্যপণ্যের বাজারমূল্য স্থিতিশীল ও সহনীয় রাখতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিভিন্ন সংস্থা, অধিদফতর ও অনুবিভাগ সমন্বিত পরিকল্পনাভিত্তিক কাজ করবে বলে জানা গেছে। এছাড়া রমজানে বেশি ব্যবহার হয় এমন সব পণ্য শতভাগ শুল্কমুক্ত সুুবিধায় আমদানির সুযোগ দেয়া যায় কি-না তা নিয়ে কাজ করছে সরকার। এছাড়া এপ্রিল মাস থেকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও তা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে এসব বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। রমজানে পণ্যের চাহিদা ॥ জানা গেছে, রমজানে ২ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। চিনির চাহিদা রয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার টনের। ছোলা ৪০ হাজার এবং ডালের চাহিদা ১ লাখ ৪০ হাজার টন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং কৃষিবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়Ñ সারাবছরে ছোলার চাহিদা ১ লাখ টন। এর মধ্যে দেশীয় উৎপাদন ১০ হাজার টন। বাকিটা আমদানি করে পূরণ করা হয়।
×