ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শাহবাগে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা অবস্থান গণজাগরণ মঞ্চের

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২৮ জানুয়ারি ২০১৫

শাহবাগে ৫  ফেব্রুয়ারি থেকে টানা  অবস্থান গণজাগরণ  মঞ্চের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে সন্ত্রাস, সহিংসতার প্রতিবাদ ও ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নে আগামী পাঁচ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে টানা অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। এছাড়া ছয় ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী ‘মুক্তির অভিযাত্রা’ কর্মসূচী পালনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল সংগঠনসমূহের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামনের ফাঁসি কার্যকর করা, সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ রাজনৈতিক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে আগামী শুক্রবার বিকেল তিনটা থেকে প্রজন্ম চত্বরে প্রতিবাদী গণস্বাক্ষর ও সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে মঞ্চের পক্ষ থেকে। উল্লেখ্য, ৫ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের দুই বছর পূর্তি হবে। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। মঙ্গলবার প্রজন্ম চত্বরে দল-মত নির্বিশেষে সহিংসতার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী গণঅবস্থান ও সমাবেশের আয়োজন করে গণজাগরণ মঞ্চ। ‘সম্মিলিত প্রতিবাদ-রুখতে পারে সন্ত্রাস’ শীর্ষক এই কর্মসূচী একযোগে সারাদেশে পালিত হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে এই কর্মসূচীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মুক্তিযোদ্ধা ও পেশাজীবী, ছাত্র সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। ‘পুড়ছে বাংলাদেশ পুড়ছে মানবতা’ শীর্ষক প্রতীকী অর্থে আগুন দিয়ে মানুষ পেড়ানো হয় সমাবেশ স্থলে। খ- বিখ- ছয়টি দেহ আগুন দিয়ে জ্বালীয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও গণস্বাক্ষরসহ প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল শাহবাগে। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ইমরান এইচ সরকার পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধে ও মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারের কাছে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিসমূহের মধ্যে রয়েছে- ২৬ মার্চের মধ্যে কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকরসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের রায় প্রদান, ধর্মভিত্তিকসহ জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, জামায়াতের সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তাদের আয়ের দেড় লাখ কোটি টাকা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারসমূহকে সহায়তা দেয়া, মুক্তিযুদ্ধের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সরকারের সহায়তা করা ও মন্ত্রী, এমপি ও আমলাদের পাসপোর্ট জব্দসহ বিদেশযাত্রা বন্ধ ঘোষণা করে নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে প্রতিরোধের আন্দোলনে শরিক হওয়া। বিদেশী চক্রান্ত ঠা-া মাথায় মোকাবেলা করা ও বাংলাদেশের মিত্র দেশসমূহের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক জোরদার করার পাশাপাশি কৃষকদের ক্ষতি না করে নিত্যপণ্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা। সমাবেশে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকার বলেন, অবরোধ ও রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে বাংলাদেশে এখন ভয়ের মানস প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র চলছে। যারা এসব করছেন তারা মানুষের পর্যায়ে পড়ে না। মানুষের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা হলো রাজনৈতিক দলসমূহের দায়িত্ব। কিন্তু তারা তা না করে মানুষ হত্যায় মেতে উঠেছে। একটি পক্ষ অপরাজনীতি করে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। এক কথায় বলছে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতহীন রাষ্ট্র বানাতে চায় বিএনপি-জামায়াত জোট। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য গণমানুষকে রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে সন্ত্রাস রুখে দিয়ে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ব। অধ্যাপক আবুল বারকাত বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার জন্য রাজনীতি করেন না। তিনি শেখ হাসিনার মৃত্যু চান। জামায়াত নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না এটা খালেদা জিয়া ভাল করেই জানেন। তাই তিনি ক্ষমতায় যেতে আশাও করেন না। জামায়াতের সঙ্গে চুক্তি করেছেন দেশ ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে ধ্বংস করে দিতে। জামায়াতের ১৩৫টি সংগঠন ও ২৩০টি এনজিও থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি জামায়াত গায়ের জোরে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে চায়। ভোট হলো তাদের কাছে খেলা। সাংবাদিক আবু সাঈদ খান বলেন, ক্ষমতার লড়াই চলছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। এই অবস্থা চলতে পারে না। যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে, মানুষ হত্যা করে ও বিদেশীদের কাছে ধরনা দিয়ে বিএনপি কানা গলিপথে চলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। মানবাধিকার কর্মী খুশী কবীর বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করছে বিএনপি-জামায়াত। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাস সেলিম বলেন, জাতির প্রধান শত্রু জামায়াতকে ধ্বংস করতে হবে। জাতির ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ সহিংতার রাজনীতিরোধ করতে পারে বলেও মনে করেন তিনি। মানবাধিকার নেত্রী রোকেয়া কবীর বলেন, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে যারা হত্যা করছে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের আইনী ব্যবস্থা নেয়া উচিত। অধ্যাপক মেজবা কামাল বলেন, ১৯৭১ সালের পর জামায়াতে ইসলাম পাকিস্তান নিষিদ্ধ হয়েছিল। তাদের সদর দফতর পাকিস্তানে রেখে এরা এখনও বাংলাদেশে রাজনীতি করছে। এরা নিষিদ্ধ দল। মুক্তিযুদ্ধের সময় নিষিদ্ধ হওয়া মুসলিম লীগ এখন চেহারা বদল করে বিএনপি হয়েছে। পাকিস্তানের নেজামী ইসলাম এখন তারা এখন বাংলাদেশের হেফাজতে ইসলাম। তারা ইসলামের বড় শত্রু। তাদের কাছ থেকে ভাল কিছু আশা করা ঠিক নয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ এগিয়ে নিতে আপীল বিভাগে স্পেশাল বেঞ্চ করার দাবি জানান তিনি। সকল অপশক্তি রোধে নবজাগরণের আহ্বান জানান ভাস্কর রাসা। মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২৬ মার্চের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শেষ না হলে দেশে গণঅভ্যুত্থান হবে। সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি হাসান তারেক, অধ্যাপক আশরাফউদ্দিন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক মিয়া, রোকেয়া বেবি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি সংহতি প্রকাশ করে। এছাড়া সহিংসতার প্রতিবাদে রাজধানীতে সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, সহিংতাবিরোধী সাংবাদিক মঞ্চসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন। প্রতিরোধ গড়ে তোলার শপথ নিয়েছেন সংস্কৃতিকর্মীরা ॥ সাম্প্রতিক সময়ে দেশে রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে বোমা মেরে ও পুড়িয়ে মানুষ হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার শপথ নিয়েছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বানে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তারা এই শপথ নেন। শপথ বাক্য পাঠ করান সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। সংস্কৃতিকর্মীরা শপথ বাক্যে আরও বলেন, ‘আমরা শপথ করছি যে, ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত এবং কয়েক লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশকে আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক, শোষণমুক্ত, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমাদের মেধা, মনন এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রব্যাপী কর্মধারা পরিচালনা করব।’ এই ধরনের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং হত্যাকা- শুধু জনগণের বিরুদ্ধেই নয়- প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধজাত খোদ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই পরিচালিত হচ্ছে বলে শপথ বাক্যে উল্লেখ করেন তারা। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সূচনা বক্তব্যে শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর সম্মিলিতভাবে সহিংসতা প্রতিরোধের আহ্বান নিয়ে মোমবাতি প্রজ্জালন করেন সংস্কৃতিকর্মীরা। সবশেষে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, জোটের সাবেক সভাপতি নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি শিল্পী ফকির আলমগীর, নাট্যব্যক্তিত্ব লিয়াকত আলী লাকী ও ঝুনা চৌধুরী প্রমুখ।
×