শংকর কুমার দে ॥ অবরোধের নামে যানবাহনে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ ও আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার মতো পৈশাচিক নাশকতার বিরুদ্ধে আরও হার্ডলাইনে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য কঠোর এ্যাকশনে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। সরকারের হার্ডলাইনে যাওয়ার বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরই যাত্রাবাড়ীতে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে ৩০ জনকে অগ্নিদগ্ধ করার ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামিসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে ৬৮ নেতাকে আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা হয়। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো আকস্মিকভাবে মারা যাওয়ার ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। কোকোর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানাদি শেষে যাত্রাবাড়ী থানার মামলাটির তদন্তে নাটকীয় মোড় নিতে পারে। কোকোর আকস্মিক অকাল মৃত্যুর ঘটনায় বদলে যাওয়া শোকের দৃশ্যপটে নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এই ধরনের তথ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানান, শনিবার দুপুর ১২-১০ মিনিটে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করা অন্তত আরও ২০ মিনিট পর কোকোর মৃত্যু ঘটে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে।
কোকোর অকাল মৃত্যুর ঘটনায় আকস্মিকভাবে বদলে যায় রাজনীতির দৃশ্যপট। সামনে চলে আসে অগণিত প্রশ্নও। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা নিউইয়র্কে সংবাদ মাধ্যমে কোকোর মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন সরকারকে। প্রশ্ন উঠেছে, বর্তমান সরকারের সময়ে কি কোকো মালয়েশিয়া গেছেন? নাকি ওয়ান ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে তিনি থাইল্যান্ড গেছেন? থাইল্যান্ড গেলেন কেন? তার নামে মুদ্রা পাচারের দুর্নীতির যে মামলা হয়েছে সেটাও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের। তিনি যে মুদ্রা পাচার করেছেন তার সাক্ষ্য দিয়েছে আমেরিকার সবচেয়ে বড় তদন্তকারী সংস্থা এফবিআই। এফবিআই আমেরিকার আদালতে কোকোর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার পর অর্থ পাচারের ঘটনাটি জানতে পারে বাংলাদেশ সরকার। তারপর তার বিদেশে পাচার করা মুদ্রা দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়। তারপরও সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা যে কোকোর মৃত্যুর জন্য সরকারকে দায়ী করেছে তার কি সত্যিকারের যুক্তিযুক্ত অর্থবহ প্রমাণ দেয়?
কোকো থাইল্যান্ড থেকে পরে মালয়েশিয়া গেলেন কেন? সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দীবিনিময় চুক্তি আছে। বাংলাদেশে কোকোর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় সাজা হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে থাইল্যান্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেÑ এই আশঙ্কা থেকেই মালয়েশিয়ায় চলে যান কোকো।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গুলশানের বিএনপি কার্যালয়ে যাওয়ার পর তাকে অভ্যর্থনা না জানিয়ে গেট থেকে ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়টি। এই বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না করার ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ইনজেকশন দিয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখার ঘটনাটি। খালেদা জিয়ার পিএস শিমুল বিশ্বাস একবার বলেছেন, খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছেন। তিনি আরেকবার বলেছেন, দৌড়ে তিনি শোক বই নিয়ে গেটে এসে দেখেন প্রধানমন্ত্রী চলে গেছেন। প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক মঙ্গলবার সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখার বিষয়টি আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। কারণ ঘটনার সময়ে আমিও ওখানেই ছিলাম। প্রধানমন্ত্রীকে সৌজন্যতাবোধ না দেখানো, খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা, বিশিষ্টজনদের প্রতিক্রিয়া ও অভিমত প্রদানের মধ্যেই মঙ্গলবার দেশে চলে এসেছে কোকোর লাশ।
সূত্র জানান, কোকোর মৃত্যুর আগে দায়ের করা মামলাটির তদন্তের ভাগ্য বদলে দিয়েছে কোকোর মৃত্যুর ঘটনাটিতে। খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করার পর তাকে গ্রেফতার করা হবে কিনা এই ধরনের এক প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, তথ্যপ্রমাণ সাপেক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দেশব্যাপী বিএনপির ডাকা চলমান অবরোধে নাশকতা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: