ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পুলিশ সপ্তাহর উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী

যখনই দেশ উন্নয়নের দিকে এগোচ্ছে তখনই ওরা নাশকতা চালাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ২৮ জানুয়ারি ২০১৫

যখনই দেশ উন্নয়নের দিকে এগোচ্ছে তখনই ওরা নাশকতা চালাচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সম্মিলিতভাবে দেশ থেকে সন্ত্রাস নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ত্রাস নির্মূলে পুলিশকে সহায়তা করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এজন্য পুলিশের শক্তিমত্তা বাড়াতে প্রয়োজনে আরও ৫০ হাজার পদ সৃষ্টি করা হবে। দেশব্যাপী চলমান নাশকতায় পুলিশ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে। বিএনপির ডাকা দেশব্যাপী টানা অবরোধে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী ও বিশ্বের মুসলিম উম্মার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় মহাসমাবেশ বিশ্ব এজতেমায়ও অবরোধ বহাল রাখায় বিএনপির কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে যথাযথভাবে কর্তব্য পালন করে জনগণের আস্থা অর্জন করতে প্রধানমন্ত্রী পুলিশকে নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার সকালে ঢাকার রাজারবাগে পুলিশ সপ্তাহ-২০১৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যখনই দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই বিএনপি-জামায়াত-শিবির অবরোধ-হরতালের নামে নাশকতা চালিয়ে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত করছে। মানুষকে পুড়িয়ে মারছে। সারাজীবনের মতো অনেককে পঙ্গু হতে হচ্ছে। এর থেকে জঘন্য কাজ আর হতে পারে না। পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী ও বিশ্ব এজতেমার মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলার সময়ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট অবরোধ-হরতালের মতো কর্মসূচী বহাল রাখায় প্রধানমন্ত্রী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি সমালোচনাও করেন। এছাড়া ছয়জন মার্কিন কংগ্রেসম্যানের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভুয়া বিবৃতি প্রদান এবং বিজেপিপ্রধান অমিত শাহর সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সনের আলাপ আলোচনার মিথ্যা তথ্য প্রকাশেরও সমালোচনা করেন তিনি। এছাড়া হেফাজতের সমাবেশের নামে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের হাজার হাজার পবিত্র কোরআন শরিফ, দোকানপাট পুড়িয়ে দেয়ারও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথাও বলেন তিনি। অচিরেই দক্ষিণ এশিয়ায় একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে আমাদের বাংলাদেশ। এদেশে সহিংসতা, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের কোন স্থান নেই। দেশ থেকে সন্ত্রাস নির্মূল করতে পুলিশকে সার্বিক সহায়তা করতে জনগণের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। সন্ত্রাস নির্মূল করতে পুলিশকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশব্যাপী চলমান নাশকতায় অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। যাদের অধিকাংশকেই নিহত হতে হয়েছে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হয়ে। এ ধরনের কাজ থেকে বিরত হওয়া উচিত। তিনি নাশকতাকারীদের এ ধরনের জঘন্য কাজ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। ২০১৩ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধে নাশকতায় পুলিশ বাহিনীর ১৭ জন সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২০ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। গত বছরের ৫ জানুয়ারি পুলিশের সহযোগিতায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় পুলিশকে ধন্যবাদ জানান তিনি। সাম্প্রতিক বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নাশকতামূলক কর্মকা-, হরতাল ও অবরোধের নামে নিরীহ মানুষ হত্যা, যাত্রীবাহী গাড়িতে আগুন দিয়ে নারী-শিশু হত্যা প্রতিরোধে পুলিশ অত্যন্ত দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে। পুলিশের আধুনিকায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, গত ছয় বছরে পুলিশে ৩১ হাজার ৭৪৪টি নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। আরও ৫০ হাজার পদ সৃষ্টি করা হবে। বর্তমানে পুলিশে থাকা দুটি গ্রেড-১ পদ প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে। বর্তমানে কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যন্ত ৩০ শতাংশ ঝুঁকিভাতা পর্যায়ক্রমে সকল স্তরে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। সন্ত্রাসবিরোধী অপতৎপরতা, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য প্রযুক্তিনির্ভর ও স্বয়ংসম্পূর্ণ এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠনের কাজসহ পুলিশের নানা উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হয়েছে। পরে প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে পেশাগত কৃতিত্বের জন্য ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক’ ও ‘রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক’ পাওয়া পুলিশ সদস্যদের পদক পরিয়ে দেন। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও মহাপুলিশ পরিদর্শক একেএম শহীদুল হকসহ পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×