ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিদিন ১৩ লাখ ঘনমিটার দূষিত বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে

জনস্বাস্থ্যের ভয়ঙ্কর হুমকি॥ নদীতে ধাতব বিষ

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ২৮ জানুয়ারি ২০১৫

জনস্বাস্থ্যের ভয়ঙ্কর হুমকি॥ নদীতে ধাতব বিষ

শাহীন রহমান ॥ ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীসহ চট্টগ্রামে কর্ণফুলী এবং খুলনার ভৈরব ও পশুর নদীসহ এসব এলাকার বিভিন্ন জলাশয়ে অস্বাভাবিক মাত্রায় দূষণকারী ভারি প্রদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এসব ভারি দূষিত পদার্থ শুধু মানব স্বাস্থ্যের জন্য নয়, জীববৈচিত্র্য ও অন্যান্য প্রাণীদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ও হুমকি সৃষ্টি করছে। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়াও নষ্ট করছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, এসব এলাকার নদী ও জলাশয়ের পানিতে ভয়াবহ মাত্রায় জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর মার্কারি, ক্যাডমিয়াম, কপার, জিঙ্ক, লেড, ক্রোনিয়াম, ইউরেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কোবাল্ট, আয়রন ও ক্ষতিকর ক্যান্সারের উপাদান এবং হরমোনোর ক্ষতি হয় এমন সব পদার্থের অস্তিত্ব রয়েছে। সহনীয় মাত্রার চেয়ে অধিক মাত্রায় এসব ধাতুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে গবেষণায়। গবেষণায় বলা হয়, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ি থেকে আসা বর্জ্যরে শেষ ঠিকানা এসব নদী ও জলাশয়। কোন প্রকার দূষণমুক্ত ছাড়াই নদীতে ফেলা হচ্ছে দূষিত বর্জ্য। এই দূষিত বর্জ্য কৃষি কাজ, সেচ, বাসাবাড়ি ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারের কারণে মানবস্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। তেমনি পশুপাখি থেকে শুরু করে জীববৈচিত্র্যও নষ্ট হচ্ছে দূষিত পানির কারণে। গবেষণায় দেখানো হয়েছে, এভাবে নদী ও জলাশয়ের পানি দূষিত হওয়ার কারণে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। নদীর মোহনা, উপকূলীয় এলাকা থেকে মাছ অন্যত্রও সরে যাচ্ছে। চিংড়িসহ নদীর বিভিন্ন জলজ প্রাণীর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। বিভিন্ন ধরনের জলজ প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে। খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া বিষাক্ত হয়ে পড়ছে। এছাড়া গোসলসহ বাসাবাড়ি ও গৃহস্থালির ব্যবহারের কারণে ক্যান্সারসহ, কিডনি, হার্ট, লাঞ্চ ও মস্তিষ্ক, যকৃতের ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে। মাছ ধরার সঙ্গে জড়িতরা আক্রান্ত হয়ে পড়ছে নানারোগে। এ অবস্থায় নিরাপদ খাদ্য ও পানি নিশ্চিত করা, জলজ উদ্ভিদ এবং অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের টেকসই অবস্থান নিশ্চিত করতে এবং বর্তমান ও ভবিষ্যত জনগোষ্ঠীকে বিপজ্জনক পানি দূষণের হাত থেকে মুক্ত রাখতে এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্স এ্যান্ড ফিশারিজ (আইএমএসএফ), সিটি ইউনিভার্সিটি অব হংকং ও অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে এসব এলাকার পানি পরীক্ষা করে ভারি বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতি পায়। এই গবেষণা কাজে সহায়তা করেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল ফেসিলিটি (জিইএফ) ও বে অব বেঙ্গল লার্জ মেরিন ইকোসিস্টেম প্রকল্প। ২০১৩ সালের নবেম্বর থেকে ২০১৪ সালের নবেম্বর পর্যন্ত এসব এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। গবেষণা কাজে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী, নদীর মোহনা ও উপকূলীয় মোট ১৪টি এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে নদী ও মোহনার হালদা, কালুরঘাট, চাকতাই খাল, সদরঘাট এলাকা ও পতেঙ্গা। উপকূলীয় এলাকার মধ্যে খেজুরতলী ঘাট, সলিমপুর, বাঁশবাড়িয়া, উত্তর পতেঙ্গা, মহেশখালী চ্যালেন, কলাতলী ও রেজু খাল। ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তিনটি এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে বড়পুল বাস্তুহারা কলোনি, বাবুবাজার ব্রিজ ও কামরাঙ্গীরচর এলাকা। এছাড়া খুলনার ভৈরব নদীর মীরেরডঙ্গা খেয়াঘাট, হার্ডবোর্ড মিল খেয়াঘাট, রূপসা নদীর মাথাভাঙ্গা, পশুর নদীর মংলা পোর্ট জেটি এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে বাসাবাড়ির আবর্জনা এবং শিল্পকারখানার পানি দূষণমুক্ত না করে ফেলার কারণে বর্তমানের এ নদীর পানি কালো রং ধারণ করেছে। ঢাকার বেশিরভাগ শিল্পকারখানা এ নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে মুন্সীগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, তেজগাঁও ও হাজারীবাগ এলাকায় ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব এলাকায় ৭ হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ওষুধ শিল্পকারখানা, টেক্সটাইল শিল্পপ্রতিষ্ঠান, রাবার, কেমিক্যাল, সারকারখানা, লেদার ও ট্যানারি শিল্পকারখানা, স্টীল রি রোলিং, পেট্রোলিয়াম রিফাইনারি, প্লাস্টিক ও ডাইয়িং শিল্পকারখানা, গ্লাস ফ্যাক্টরি ও পেপার বোর্ড। এসব ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে পরিবেশ আইন লংঘন করে প্রতিদিন ১.৩ মিলিয়ন কিউবিক মিটার দূষিত তরল পদার্থ নদীতে ফেলা হচ্ছে। এছাড়াও কঠিন বর্জ্য, জাহাজ থেকে ফেলা পোড়া তেল নদীতে অবমুক্ত করা হচ্ছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, চট্টগ্রামের হালদা নদীর পাশে অবিস্থত পেপার মিল, ডাইয়িং মিল এবং টেক্সটাইল শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কারণে এলাকার পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। অথচ এ নদীর পানি কৃষি, সেচকাজে ব্যবহার, নদীতে মাছ ধরা ও চট্টগ্রামের ওয়াসা এবং স্থানীয় জনগণ এ পানি ব্যবহার করছে। কিন্তু দূষণের কারণে পানি ব্যবহার হুমকির হয়ে দেখা দিয়েছে। কর্ণফুলী নদীর কালুঘাট ব্রিজ এলাকার পানি দূষিত হয়ে পড়ছে কর্ণফুলী পেপার মিল থেকে আসা বর্জ্যরে কারণে। চাকতাই খালে পরিশোধন ছাড়াই অবমুক্ত করা হচ্ছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তরল বর্জ্য, সিটি, বাসাবাড়ির কঠিন বর্জ্য, এছাড়া এ এলাকায় বিএসআরএম, কেএসআরএমসহ বিভিন্ন ধরনের টেক্সটাইল, গার্মেন্টস, স্টীল রিরোলিং মিল, রাসায়নিক কারখানা রয়েছে। অথচ এই দূষিত পানি গৃহস্থালির ব্যবহারের ক্ষেত্রে, বাণিজ্যিক কাজে এবং বস্তিবাসীরা পানি ব্যবহার করছে। কর্ণফুলী নদীর আপস্ট্রিমে রয়েছে তেল পরিশোধন কারখানা, সিমেন্ট ক্লিঙ্কার কারখানা, বিভিন্ন ধরনের হাল্কা জাহাজ এখানে রয়েছে, যা থেকে থেকে দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে নদীতে। আবার এ এলাকার পানি অনেকটাই লবণাক্ত। এখানকার পানিও বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে স্থানীয় জনগণসহ অনেকে দূষিত পানির কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে। চট্টগ্রাম এলাকার বেশিরভাগ এলাকাতে পানিতে মিশছে জাহাজভাঙ্গা শিল্প, কাগজ কল ও সারকারখানা থেকে বের হওয়া দূষিত পদার্থ। এছাড়াও খুলনার ভৈরব হার্ডবোর্ড মিল এলাকায় প্রধান শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে মেঘনা ওয়েল রিফাইনারি, যমুনা ওয়েল রিফাইনারি, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, পদ্মা ওয়েল রিফাইনারি, পিপুল জুট মিল, ক্রিয়েট জুট মিল, প্লাটিনাম জুটমিল এবং দৌলতপুর জুট মিল। এছাড়াও রয়েছে খুলনা হার্ডবোর্ড মিল। এসব ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কারণে বিভিন্ন বিষাক্ত ভারি পদার্থ নদীতে পড়ছে। এ পানি গোসলসহ নৌচলাচলসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। রূপসার মাথাভাঙ্গা পয়েন্টে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে দূষিত বর্জ্য ফেলার কারণে এ এলাকায় মাছ ধরা ও কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। মংলা পোর্ট এলাকায় রয়েছে এডিবল ওয়েল মিল, রূপসা ওয়েল রিফাইনারি, পেট্রোমেক্স গাস রিফাইনারি, ওমেরা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড, এলপিজে ওয়েল রিফাইনারি, হোলসিম সিমেন্ট, ফাইভ রিং সিমেন্ট, এলিফ্যান্ট ব্রান্ড সিমেন্ট ফ্যাক্টরি। এ কারণে এলাকার পানি পরীক্ষা করে অতিমাত্রায় এবং মধ্যম মাত্রায় দূষিত পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এছাড়া লবণাক্ত পানিও রয়েছে এখানে। এখান থেকে বিভিন্ন কাজে পানি সংগ্রহ করে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া পানি শিপিং ও ট্রান্সপোর্টেশনের কাজেও ব্যবহার করা হয়। মিরেরডাঙ্গা খেয়াঘাট এলাকার পানিতে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কারণে দূষিত। এখানকার পানি ব্যবহার করা হয় গোসলসহ অন্যান্য কাজে। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে পানি বা জলাশয়ে দূষিত মার্কারি বা পারদের মতো পদার্থের কারণে নদী বা মোহনা এলাকায় মাছের উৎপাদন হ্রাস পাওয়া, দূষিত পানি কৃষিকাজ সেচে ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্য দূষিত হয়ে পড়ায় মানব দেহের নার্ভ, মস্তিষ্ক ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ক্যাডমিয়াম একটি উচ্চমাত্রার দূষণকারী ভারি পদার্থ। এর কারণে জলাশয়ে মাছের উৎপাদন হ্রাস পাওয়া এবং মানুষের নার্ভে ক্ষতি হয়। এছাড়া সেচকাজে পানি ব্যবহারের কারণে উৎপাদিত কৃষিদ্রব্য শাকসবজি দূষিত হয়ে পড়ে, যা খেলে মানবদেহে ক্যান্সারসহ, হার্টে ও কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। কপারযুক্ত দূষিত পানি ব্যবহারের কারণে যকৃতের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পানিতে লেডযুক্ত পদার্থের উপস্থিতির কারণে মাছ, পাখি অন্যান্য প্রাণীর জন্য হুমকি সৃষ্টি করা ছাড়াও এ পানি ব্যবহারের কারণে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনও হুমকির মুখে পড়তে পারে। জিঙ্কের কারণে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত, পশুপাখির ওপর প্রভাব পড়তে পারে। ক্রোমিয়াম মতো বিষাক্ত পদার্থের কারণে মানবদেহে ক্যান্সারসহ মাছ ও কৃষি উৎপাদন প্রক্রিয়াও ব্যাহত হয়। বেশিমাত্রায় নিকেল জাতীয় পদার্থের অস্তিত্ব থাকলে লাংস, প্রোস্ট্রেট ক্যান্সার, নাকে ক্যান্সার এবং হার্টের ক্ষতি হতে পারে। মাছ বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ইউরেনিয়ামের কারণে মানবদেহে কিডনি রোগ ও ক্যান্সার হতে পারে। এছাড়া নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়াও ব্যাহত হয়। এছাড়া ম্যাঙ্গানিজ, কোবাল্ট এবং আয়রনের কারণে মাছের উৎপাদন হ্রাস পাওয়াসহ মানবদেহে নানারোগ সৃষ্টি ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। অস্ট্রেলিয়ার আরএমটি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া এ বিষয়ে বলেন, চট্টগ্রামের খেজুরতলী ঘাট, হালদা নদী, সদরঘাট, ঢাকার বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী কামরাঙ্গীরচর, বড়পুল বাস্তুহারা কলোনি এলাকায় অতি মাত্রায় দূষণকারী ধাতু পাওয়া গেছে। চট্টগ্রামের সালিমপুর, চাক্তাই, বাঁশবাড়িয়া, পতেঙ্গা, হার্ডবোর্ড মিল খেয়াঘাট ও মিরেরডাঙ্গার তীরে মাঝারি মাত্রায় দূষণকারী বস্তু পাওয়া গেছে। এসব এলাকায় জাহাজভাঙ্গা শিল্প, কাগজ কল ও সার কারখানা থেকে এসব বস্তু গিয়ে পানিতে মিশছে। খুলনার পশুর ও রূপসা নদীতে দূষণকারী বস্তু পাওয়া গেলেও তা বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছায়নি। তিনি বলেন, বিভিন্ন শিল্প কারখানা থেকে আসা বর্জ্যের ভেতর ব্যাপকভাবে মারকারি, ক্যাডমিয়াম ও ইউরেনিয়াম থাকে। যা পানিকে বিষাক্ত করে তোলে। প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত হালদা নদীতে সবচেয়ে বেশি ক্যাডমিয়াম রয়েছে। এটা খুব ভয়ঙ্কর বিষয়। এই পানি ফসলের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পানি দূষিত হয় চট্টগ্রাম, ঢাকা ও খুলনাতে। এসব এলাকায় শিপ ব্রেকিং শিল্প, পেপার মিল ও সারকারখানা থেকে নির্গত ক্যাডমিয়াম, মারকারি ও ইউরেনিয়াম বর্জ্য হিসেবে পানিতে মিশে।
×