ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মাছ মোকামে পাঠাতে পারছে না কলাপাড়ার জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২৮ জানুয়ারি ২০১৫

মাছ মোকামে পাঠাতে পারছে না কলাপাড়ার জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২৭ জানুয়ারি ॥ লাগাতার অবরোধে কলাপাড়ার চার শতাধিক মৎস্য ব্যবসায়ী আড়ত মালিকসহ অন্তত দশ হাজার জেলে পরিবারে চরম দুরবস্থা চলছে। আহরিত মাছ ঢাকাসহ দূরের কোন মোকামে পাঠাতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে কম দামে স্থানীয় বাজারে বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে এ পেশায় মহা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সন্তান-সন্তুতি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন এসব মানুষ। কলাপাড়া পৌরশহরসহ কুয়াকাটা, মহিপুর, আলীপুর, চাপলী, লক্ষ্মীর বাজার, বানাতি বাজার, ব্যুরো জালিয়া, মুন্সিপাড়া, ঢোস, ধুলাসার, কাউয়ারচর, গঙ্গামতি, খাজুরা, খালগোড়া, চাকামইয়া, কাঠালপাড়া, বালিয়াতলী, নিশানবাড়িয়া, পাটুয়া, দেবপুর, পাখিমারা, হাজিপুরসহ অন্তত ৫০টি স্পটে রয়েছে মাছের আড়ত। এখন এসব আড়তে নেই কোন বেচাকেনা। শ্রমিকরা বেকার। মালিকরা রয়েছেন মহা অনিশ্চয়তার মধ্যে। আড়ত মালিক আনোয়ার খান জানান, প্রায় দেড় কোটি টাকা দাদন দেয়া। মাছের আকালের পাশাপাশি অবরোধে যে পরিমাণ মাছ আমদানি হয় তাও মোকামে পাঠাতে পারছেন না। মাছের আমদানি বাড়লেও সাহস করে বেশি কিনছেন না। তার হিসাবে ফি বছর এ সময় গড়ে প্রতিদিন ৫-৭ লাখ টাকার মাছ কিনেছেন। এ বছর ২০-২৫ হাজার টাকার মাছও কিনছেন না। তার এ ক’দিনে লক্ষাধিক টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। কুয়াকাটার রহিম খান জানালেন, কয়েকদিন চরম ঝুঁকি নিয়ে কিছু মাছ মোকামে পাঠিয়েছেন। এখন আর পারছেন না। ঝুঁকি নিয়ে পাশের জেলায় ট্রলারে কিছু মাছ পাঠাচ্ছেন। একই তথ্য জানালেন, চাপলীর করিম মাস্টার, আলকাছ তালুকদারসহ সবাই। এছাড়া পরিবহন খাতে বিভিন্ন ব্যয় অনেকগুণ বেড়ে গেছে। প্রত্যেক গাড়িপিছু তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। এ অবস্থার উত্তরণ না ঘটলে পেশা বন্ধের আশঙ্কা করছেন সবাই। একাধিক জেলে জানান, ভরা মৌসুমে ইলিশের আকাল গেছে। এখন চেউয়া, চিংড়ি, বেলা, গাবের আঁটি ধরা পড়ছে। অবরোধের কারণে আড়ত মালিকরা এসব গুঁড়া মাছ কিনছেন না। তাই শুঁটকি করছেন। নেসারউদ্দিন জানান, মহাজনের টাকা এনে ব্যবসা করছেন। লাভ হোক না হোক মহাজন পাওনা শোধের চাপ দিচ্ছেন। ব্যবসা নিয়ে চরম শঙ্কায় পড়েছেন তিনি। জেলে মোহাম্মদ আলী জানান, বৈরাগীসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট মাছ ধরছেন। যে মাছ এখন দেড়-দুই হাজার টাকায় বিক্রি করছেন হরতাল-অবরোধের আগে কমপক্ষে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারতেন। সবার চোখে-মুখে লোকসানে বিরাজ করছে হতাশা। বহু জেলে সাগরে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। আলীপুর-কুয়াকাটা মৎস্য আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা জানান, ২২ দিনের টানা অববোধে সব স্থবির হয়ে পড়েছে। তার দাবি এ পেশায় জড়িত প্রায় ১০ হাজার পরিবারের উপার্জনক্ষম মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে।
×