ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অজয় দাশ গুপ্ত

অবসান হোক অশুভ পাঁয়তারা

প্রকাশিত: ০৩:৩০, ২৮ জানুয়ারি ২০১৫

অবসান হোক অশুভ পাঁয়তারা

বাংলাদেশকে যদি সত্যি কেউ ভালবাসেন, এদেশের মানুষের প্রতি যদি কারও বিন্দুমাত্র মমত্ব বা প্রীতি থাকে, বর্তমান পরিস্থিতিতে নীরব থাকতে পারেন না অথচ সুশীল, বুদ্ধিজীবী নামের গজিয়ে ওঠা মিডিয়ানির্ভর সমাজটি এখন পাথর। আমি অনুমান করি তাঁদের এই পাথর হওয়াটা অধিক শোকের লক্ষণ, তাঁদের ‘গণতান্ত্রিক’ নেতা খালেদা জিয়ার মুহুর্মুহু ঘোষণা আর জেদের পরও সাধারণ মানুষ সাড়া না দেয়ায় বুদ্ধিজীবীরা পাথর বা নীরব হয়ে আছেন। তাঁদের কথায়, বাংলাদেশের কিছু আসে যায়নি, যাবেও না। দু’চারজন টিভি উপস্থাপক, দৈনিক বা সাপ্তাহিকের সম্পাদক, মালিক, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কর্তা ছাড়া এদের না আছে পৃষ্ঠপোষক না কোন খাঁটি ফলোয়ার। বুদ্বুদের মতো ওঠানামা আর নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত বুদ্ধিবৃত্তির করুণ দশায় লজ্জা পাই। প্রশ্ন করি, উপসাগরীয় যুদ্ধে, মধ্যপ্রাচ্যে আহত-নিহত মানুষ, মানব শিশুর জন্য আপনাদের আহাজারি কি ধর্মীয় চেতনাপ্রসূত, না মানবিক? মানবিক হলে নিজের দেশের আগুনে পোড়া মানুষ, শিশু, ভয়ার্ত স্কুলবালক, চোখ হারানো কিশোরীর জন্য হৃদয় পাষাণ কেন? কেন আপনারা কলম খুলে, গলা খুলে বলেন না-এ আচরণ, এই সহিংসতা অগণতান্ত্রিক। কার পেছনে লাইন দিয়ে আছেন আপনারা? বেগম জিয়া, বিএনপি বা জামায়াত কি আদৌ কোন গণতান্ত্রিক শক্তি? ধরে নিলাম আওয়ামী লীগ ভুল করছে, আওয়ামী লীগের ভেতরও অগণতান্ত্রিকতা, স্বেচ্ছাচার আছে, কিন্তু যাঁদের হয়ে লড়ছেন তাঁদের চেহারাটা কি আপনাদের অজানা? আমরা এ আমল, ঐ আমল, সে আমলের তুলনায় যাব না। বর্তমান সময়ে বেগম জিয়ার আচরণ ও বিএনপি-জামায়াতের কথা বলব। একের পর এক ব্যর্থ চেষ্টায় হতোদ্যম খালেদা জিয়া ও তাঁর দল অবরোধের নামে যে ধ্বংস ও রক্তপাত দেখাচ্ছেন তার নাম কি গণতন্ত্র? প্রতিদিন গরিব মানুষের আহাজারি আর মধ্যবিত্তের চাপা কষ্টে দেশের নাভিশ্বাস তোলার ভেতর দিয়ে কী অর্জন বা কী লাভ করবেন তিনি? ক্ষমতা? সেটাও কি দীর্ঘস্থায়ী হবে? জনগণের একটা বিষয় বোঝা প্রয়োজন, দল চালানোর মানুষ যেখানে নেই সেখানে সরকার চালানো কতটা সম্ভব? এটা সত্য, ভাত ছিটালে কাকের অভাব হয় না। আর এতো ভাত নয়, এখন বাংলাদেশের ক্ষমতা মানে বিরিয়ানি, ফাইভস্টার জাতীয় লোভনীয় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। যে একবার তা পায় তার চৌদ্দগোষ্ঠীর আর কিছু করার দরকার পড়ে না। ভাত-রুটি, বিদেশ ভ্রমণ, গাড়ি-বাড়িÑ সব পাকা চিরকালের না হলেও দীর্ঘকালের জন্য গ্যারান্টেড। খালেদা জিয়ারও লোকের অভাব হবে না। মওদুদ, খাঁটি দুধ, ভেজাল দুধ সবাই ফের ছেঁকে ধরবে তাঁকে। তাঁর জন্যই কি এই সর্বনাশ আর ভয়ঙ্কর খেলা মেনে নেব আমরা? খুব গভীরে যাবার প্রয়োজন পড়ে না। কোন্ গ্রামের কৃষক বা শহরের শ্রমিক গণতন্ত্রের জন্য কাঁদছেন? কোন্ পোশাকশিল্পী বা সঙ্গীতশিল্পীর অগণতান্ত্রিক জীবনের চাপে কষ্ট হচ্ছে? কোন্ মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত গণতন্ত্রহীনতার কথিত অজুহাতে শপিং করছেন না? বিদেশ পাড়ি দিতে পারছেন না? কোন্ শিক্ষক, মজুর, সাংবাদিক বা লেখকের কলম-কোদাল ঠেকে আছে? কোথাও কিছু ঠেকে নাই। এ ধন্দ নিতান্ত ক্ষমতার। বিএনপি নামের মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের মৌলিক চেহারাবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তির আজাহারি। এটা মানি, সমঝোতা বা সহাবস্থান ছাড়া রাজনীতি বাঁচে না, মানুষ গণতান্ত্রিকও হতে পারে না। কিন্তু বর্তমান সময়ের দোলাচলে যে প্রশ্নটি সামনে এসে দাঁড়ায় গণতন্ত্র কি আসলেই পারবে বাংলাদেশকে বাঁচাতে? পারবে কি সামনে নিয়ে যেতে? পৃথিবীর সঙ্গে চলতে হলে দুনিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে শেখা ও পাঠ নেয়া আবশ্যক। গণতন্ত্রের পীঠস্থান নামে পরিচিত আধুনিক দেশগুলোয় কি স্বাধীনতাবিরোধী, ইতিহাস-ঐতিহ্যবিরোধীদের রাজনীতি করতে দেয়া হয়? নাৎসি, যুদ্ধাপরাধী ইদানীংকালের ধর্মান্ধ জঙ্গীবাদীদের বেলায় গণতন্ত্র কি কঠোর নয়? সেখানে ছাড় বা উদারতার লেশমাত্র নাই। দিনকে দিন কঠোরতর হচ্ছেন তাঁরা। আমাদের দেশে ধর্ম ও অন্যান্য কারণে স্পর্শকাতর বিষয়ে উস্কে দেয়ার সমাজে গণতন্ত্রের নামে ভাংচুর, জিহাদী মনোভাব আর দেশের শান্তি বিনষ্ট করাকে প্রশ্রয় দেয়া অনুচিত। সরকারী দল ভাষ্যে কঠোর হলেও কাজে ততটা না। বিএনপির মতো নড়বড়ে দাঁতকেও ঠিক করতে পারছে না তারা। অনেক বিভ্রান্তি আর ফসকা গেরো দেখছি, খালেদা জিয়া সুপার উইম্যানের মতো যা ইচ্ছে তাই করছেন। তাঁকে কখনও বারান্দা, কখনও আঙ্গিনা পর্যন্ত দেখি, কখনও অদৃশ্য। রিজভী সাহেব কিভাবে হাসপাতাল ছাড়লেন, কিভাবেই বা এর পর মিডিয়ায় এসে বা মিডিয়ার কাছে বক্তব্য দিচ্ছেন- অনুমান করা কঠিন। কঠিন বিএনপি-জামায়াতের হাতবোমা, পেট্রোলবোমা, গাড়ি পোড়ানো বা জীবননাশের সমীকরণ মেনে নেয়া। এভাবে চললে মানুষ তো অসহিষ্ণু অধৈর্য হয়ে উঠবেই। তখন কোন্ রোষ কোন্ দিকে মোড় নেয়, ষড়যন্ত্রকারীরা চাকা কোন্ দিকে ঘুরিয়ে ফেলে, কে বলতে পারে? দেশবিরোধী অগণতান্ত্রিক, উগ্রবাদী, হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী নাশকতাপ্রিয় দল ও সন্ত্রাসীদের দমন করা না গেলে গণতন্ত্র নামের এই মারাত্মক খেলাধুলা কখনও বন্ধ হবে না। দেশও এগোতে পারবে না। মানুষকে অভয় ও নিরাপত্তা দেয়া না গেলে কি তাঁরা এভাবে চলতে পারবেন আদৌ? কবে এর অবসান দেখব আমরা?
×