ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধরতে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা ও পুলিশ সোর্স

ছাত্রদল-শিবির ক্যাডার ও ভাড়াটিয়া দুর্বৃত্তরা নাশকতা চালাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ২৭ জানুয়ারি ২০১৫

ছাত্রদল-শিবির ক্যাডার ও ভাড়াটিয়া দুর্বৃত্তরা নাশকতা চালাচ্ছে

শংকর কুমার দে ॥ অবরোধের নামে আগুনে পুড়িয়ে মারার নাশকতকারীদের ধরার জন্য রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এবার পুরস্কারের পাশাপাশি নিয়োগ করা হচ্ছে ‘পুলিশ সোর্স’। পুলিশ সোর্সের পাশাপাশি নিয়োগ থাকছে ‘সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা’। কোন এলাকায় কারা পেট্রোল বোমা নিক্ষেপকারী, পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে নিরীহ নিরপরাধ মানুষজনকে পুড়িয়ে মারছে কারা তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করাই হচ্ছে এর উদেশ্য। রাজধানী ঢাকার চেয়ে বাইরের জেলায় ও হাইওয়েতে এখন তুলনামূলকভাবে বেশি ঘটছে যানবাহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের মতো নাশকতার ঘটনা। পুলিশের উচ্চ পর্যায় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্র জানান, এখন রাতের আঁধারে চোরাগুপ্তা হামলা করে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিচ্ছে অবরোধের নামে মাঠে নামানো দুর্বৃত্তরা। শুধু তাই নয়, স্থানীয় মানুষজন চিনতে না পারে সেজন এক এলাকার দুর্বৃত্তকে অন্য এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। কারণ বিএনপি-জামায়েতের জেলা, শহর ও থানা পর্যায়ের নেতারা আত্মগোপনে চলে গিয়ে ভাড়াটিয়া দুর্বৃত্তদের মাধ্যমে যানবাহনে আগুন দেয়াচ্ছে। এসব ভাড়াটিয়া দুর্বৃত্তদের সঙ্গে থাকছে বিএনপির যুবদল ও ছাত্রদল এবং জামায়েতের ছাত্র শিবিরের ক্যাডররা। গত ২০ দিনের টানা অবরোধের সময়ে নাশকতা চালানোর সময়ে যারা ধরা পড়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এ ধরনের তথ্য উদ্ধার করেছে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তারা। সূত্র জানান, সহিংস সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীদের নাম-ঠিকানা, তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা, তাদের চিহ্নিত বা শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্যসহ সব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে মাঠে নামার পর তাদের বেশিরভাগই আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় এখন পুলিশ সোর্স ব্যবহার করার ওপর প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা অবরোধ-হরতালে দেশজুড়ে জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর অবহ্যত রয়েছে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ঢাকা, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, পাবনা, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, বগুড়া, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, সিলেট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বেশি সন্ত্রাসকবলিত। রাজশাহী, বরিশাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, লালমনিরহাট, গাইবান্ধাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরের সন্ত্রাসী ও সহিংসতাকারী বোমাবাজদের ধরতে পুলিশ সোর্স ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যদের মাঠে নামানো হয়েছে। সূত্র জানান, খোদ রাজধানীতে পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে যানবাহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগকারীদের যে নামের তালিকা করা হয়েছে তাতে অন্তত শতাধিক বোমাবাজ এখন নাশকতামূলক কর্মকা- চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ। এদের বেশিরভাগই কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক নয়। ভাড়ায় বিভিন্ন এলাকায় হাতবোমা ছুঁড়ে মারে। নির্দিষ্ট একটি এলাকায় একটি বা দুইটি মিশন সম্পন্ন করতে গড়ে ২ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। বোমা কেনা ও অপারেশনের জন্য টাকা পাওয়ার পর তারা নির্দিষ্ট এলাকায় যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায় ভাড়াটিয়া দুর্বৃত্তরা। তবে যেসব দুর্বৃত্ত যানবাহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়ার সময়ে যারা হাতে-নাতে ধরা পড়েছে তাদের মধ্যে ছাত্রদল ও শিবিরের ক্যাডার হিসেবে পরিচয় পাওয়া গেছে। সূত্র জানান, গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় বোমাবাজ ও অগ্নিসংযোগকারীদের এলাকা হিসেবে দুইটি এলাকা ভাগ করা হয়েছে। গুলিস্তান থেকে পুরান ঢাকাসহ যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, জুরাইন, খিলগাঁও, সুবজবাগ, কমলাপুর ও মতিঝিল এলাকাজুড়ে একটি এলাকা ভাগ করেছে। এ এলাকায় হাতবোমা ও ককটেল তৈরির কারিগর রয়েছে। একেকটি বোমা ও ককটেল গড়ে ৫শ’ টাকা থেকে ৭শ’ টাকায় বিক্রি হয়। বংশাল, সুরিটোলা, চকবাজার, সোয়ারীঘাট, লক্ষ্মীবাজার ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় বেশিরভাগ হাতবোমা তৈরি হয়। এ এলাকা থেকে বোমা রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় সরবরাহ করা হয়। গে-ারিয়া, বংশাল ও জুরাইন, কোতোয়ালি, নয়াবাজার, সুরিটোলা, নর্থসাউথ রোড, ওয়ারী, সূত্রাপুর, নবাবপুর, গুলিস্তান, লালবাগ, যাত্রাবাড়ী, সুবজবাগ, খিলগাঁও, শাজাহানপুর, ও মতিঝিল এলাকায় বোমাবাজ চক্রের সদস্য নাশকতাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ সোর্স ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা মাঠে নেমেছে। রাজধানীর নতুন ঢাকার বেশকিছু স্থানকে স্পর্শকাতর হিসেবে উল্লেখ করে মাঠে নামানো হয়েছে পুলিশ সোর্স। এর মধ্যে শাহবাগ, পল্টন, বাংলামোটর, কাওরানবাজার, ধানম-ি-২৭, আগারগাঁও, শ্যামলী, মিরপুর-১৩ নম্বর সেকশন, কাজীপাড়া, সরকারী বাঙলা কলেজের সামনে, মহাখালী, বনানী কাকলী, খিলক্ষেত, এ্যালিফেন্ট রোড, বিমানবন্দর গোলচক্কর ও আজমপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সবচেয়ে বেশি বোমাবাজ ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগকারী এ চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ সোর্সের সাহায্য নেয়া হচ্ছে।
×