ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বনানী সামরিক কবরস্থানে দাফন

কোকোর লাশ আসছে আজ, বায়তুল মোকাররমে জানাজা

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ২৭ জানুয়ারি ২০১৫

কোকোর লাশ আসছে আজ, বায়তুল মোকাররমে জানাজা

স্টাফ রিপোর্টার॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মরদেহ আসছে আজ। সকাল সাড়ে এগারোটায় মালয়েশিয়ার একটি বিমানে করে তার মরদেহ ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিবানবন্দরে পৌঁছানের কথা রয়েছে। জানা গেছে, তার লাশ বিমানবন্দর থেকে সরাসরি বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে নেয়া হবে। পরে বাদ আছর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে কোকোর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জনাজা শেষে বনানীর সামরিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। এছাড়া আজ সকাল সাড়ে ১০টায় সারাদেশে কোকোর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি চেয়াপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা সায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, কোকোর মরদেহবাহী বিমানটি আজ সকাল ৯টায় মালয়েশিয়া থেকে ঢাবার উদ্দেশ্যে রওনা হবে। সকাল সাড়ে ১১টায় তার লাশবাহী বিমানটি ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। কোকোর লাশ বিমানবন্দর থেকে সরাসরি বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে নেয়া হবে। এই কার্যালয়েই বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়া গত ২৪ দিন ধরে অবস্থান করছেন। এ কারণে পারিবারিক আত্মীয়স্বজন ও দলের সদস্যরাও গুলশান কার্যালয়ে কোকোর মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এদিকে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কোকোর জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। সোমবার বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনির পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিকে জানানো হয়েছেÑশহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর নামাজে জানাজা নয়াপল্টন নয়, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া তার দাফন হবে বনানীর আর্মি কবরস্থানে। বিবৃতিতে রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, আরাফাত রহমান কোকোর নামাজে জানাজা সর্বসাধারণের সুবিধার্থে আজ রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পরিবর্তে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে বাদ আছর অনুষ্ঠিত হবে। নামাজে জানাজা ও লাশ দাফনে অংশ নেয়ার জন্য বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বসাধারণকে অনুরোধ করা হয়েছে। এদিকে কোকোর গায়েবানা জানাজার অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তও পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রথমে বুধবার সারাদেশে এই জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা একদিন এগিয়ে মঙ্গলবার করা হয়েছে। সোমবার রুহুল কবির রিজভীর বরাত দিয়ে আব্দুল লতিফ জনির পাঠানো অপর বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে-বুধবারের পরিবর্তে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় সারাদেশে কোকোর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে ঢাকা মহানগর ছাড়া সারাদেশে সকাল সাড়ে ১০টায় কোকোর গায়েবানা জানাজা নামাজে অংশ নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমানের মৃত্যুতে দলের পক্ষ থেকে তিনদিনের শোক পালন করা হচ্ছে। শোকের প্রথম দিন সোমবার এ উপলক্ষে সারাদেশে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলনের পাশাপাশি নেতাকর্মীরা বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করেছেন। বিএনপি এ শোক কর্মসূচী আগামীকাল বুধবার শেষ হবে। পুত্রশোকে শোকাহত বিএনপি নেত্রী গত ৩ জানুয়ারি থেকে তার গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। কোকোর মৃত্যুর পর থেকে গুলশান অফিসে দলীয় লোকজনের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা সোমবার সকালের পর থেকেই গুলশান কার্যালয়ে ভিড় করেন। সোমবার বিএনপির নেতাদের মধ্যে যারা গুলশান কার্যালয়ে যান তাদের মধ্যে ছিলেনÑ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী। এছাড়া গুলশান কার্যালয়ে কোকোর মৃত্যু উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে একটি শোকবই খোলা হয়েছে। দ্বিতীয় দিনের মতো শোকবইতে স্বাক্ষর করেছেন নরওয়ের রাষ্ট্রদূত মেরিডি ল্যানডিমো। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তিনি খালেদার কার্যালয়ে এসে শোকবইতে স্বাক্ষর করেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত কুয়েতের রাষ্ট্রদূত আলী আহমেদ ইব্রাহিমও শোকবইতে স্বাক্ষর করেন। অপরদিকে কোকোর মৃত্যুতে খালেদার কার্যালয়ে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত ও নেপালের রাষ্ট্রদূত। এছাড়া ফিলিপিন্সের রাষ্ট্রতদূত বেন্দিলো ও ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত শোকবইতে স্বাক্ষর করেন। ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমেদও সোমবার বিকেলে গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে শোকবইতে স্বাক্ষর করেন। এ সময় তিনি বলেন, খলেদা জিয়ার শোকের সময় আমি তার পাশে রয়েছি। তার সন্তানের মৃত্যুতে শোক জানাই। গত শনিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আরাফাত রহমান কোকো। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৫ বছর। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে জাতীয় মসজিদ নাগারায় রবিবার দুপুরে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে রবিবার লন্ডনেও তার গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ লন্ডনস্থ বিএনপির নেতাকর্মীরা এ জানাজায় অংশগ্রহণ করে। বিএনপিসহ ২০ দলের চলমান অবরোধ-আন্দোলন কর্মসূচীর মধ্যে কোকোর মৃত্যু হয়। কিন্তু তার মৃত্যুর পরও জোটের পক্ষ থেকে আন্দোলন স্থগিত করা হয়নি। বরং অবরোধ কর্মসূচীর মধ্যেই আবার হরতাল কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। সোমবার সন্ধ্যায় দুদিনের হরতাল কর্মসূচী শেষ হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে অবরোধ কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। এই অবরোধ কর্মসূচীর মধ্যেই কোকোর লাশ ঢাকায় আনা হচ্ছে। তবে জানা গেছে, কোকোর মৃতুদেহের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে বিএনপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিতে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ফলে অবরোধের মধ্য দিইে তার সৎকার সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে।
×