ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুন্সীগঞ্জে গার্মেন্টস শিল্পপার্ক

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২৭ জানুয়ারি ২০১৫

মুন্সীগঞ্জে গার্মেন্টস শিল্পপার্ক

শিল্পায়ন ছাড়া কোন দেশেরই যে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব নয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কৃষিপ্রধান দেশ হলেও আয়তন ও লোকসংখ্যা বিবেচনায় প্রায় তিন দশক ধরে বাংলাদেশ শিল্পের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। সেই দিক থেকে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প দেশের রফতানি খাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই শিল্পের সঙ্গে বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের জীবন-জীবিকা জড়িত। দেশের প্রায় দেড় কোটি লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পোশাক শিল্পে সংশ্লিষ্ট। প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক সরাসরি এই খাতে কাজ করে। তাদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের সংস্থান হয় এ খাত থেকে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই দীর্ঘ সময়েও পরিকল্পিতভাবে এই শিল্প সেক্টরটি গড়ে ওঠেনি। রফতানি আয়ের প্রধান এ খাতটি রাজধানীসহ সারাদেশে অপরিকল্পিত ও অব্যবস্থাপনায় বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে ওঠায় নানাভাবে সমস্যাক্রান্ত। তবে বর্তমান সরকার এ খাতের গুরুত্ব অনুধাবন করে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের রফতানিতে শীর্ষে থাকা এ শিল্প খাতটি যাতে আরও দ্রুত বাজার সম্প্রসারণে সক্ষম হয় সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকেও সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। এই শিল্পকে ভালভাবে দীর্ঘমেয়াদী টিকিয়ে রাখতে শিল্পপার্ক স্থাপন যে অত্যন্ত জরুরী তাও অনুধাবন করে সরকার। সেই লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকার ওপর চাপ কমাতে মুন্সীগঞ্জে গড়ে তোলা হচ্ছে গার্মেন্টস শিল্পপার্ক। জানা গেছে, শতভাগ কমপ্লায়েন্স কারখানা গড়ে তোলা হবে এই শিল্পপার্কে। এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে রবিবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আগামী বছরের মধ্যে প্রকল্পটি চালু করার চেষ্টা করছে সরকার। এ জন্য বিজিএমইএ-ও প্রস্তুত। ঢাকা থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসংলগ্ন মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার বাউশিয়া, পোরার চর, কাইচখালী চৌদ্দকাছমিয়া, মৌজার ৪৯২ একর জমির ওপর গার্মেন্টস শিল্পপার্ক স্থাপন করার লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে আগেই। পার্কটি উন্নয়নের জন্য গত বছরের ১৪ জুন প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সময় চীনের স্বনামধন্য কোম্পানি ওরিয়েন্ট ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিংস লিমিটেড (ওআইসি) ও বিজিএমইএ’র মধ্যে এক সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এর ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ওআইসিকে ডেভেলপার হিসেবে নিয়োগ প্রদানের জন্য অনাপত্তিপত্র প্রদান করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর একটি ফ্রেমওয়ার্ক এ্যাগ্রিমেন্টও স্বাক্ষরিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পর্যায়ক্রমে দেশে আরও কয়েকটি শিল্পপার্ক করার কথা চিন্তা করছে সরকার। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে গার্মেন্টস শিল্প দুই দিকে গুরুত্ব বহন করে। প্রথমত রফতানি বাড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন। অপরদিকে দেশের বেকার জনশক্তিকে কর্মে নিয়োজিত করা। দেশের অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এগিয়ে যাওয়া এবং বেকার সমস্যা সমাধানে গার্মেন্টস ভূমিকা রাখলেও খাতটি নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নও শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। শ্রমিক নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে দু’বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশী পণ্যের ওপর শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার প্রত্যাহার করেছে। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার এই শিল্পপার্কটি সুপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হলে ক্রেতাদেশগুলোর এসব অভিযোগ অনেকাংশে নিষ্পত্তি সম্ভব হবে। শুধু তাই নয়, বাউশিয়ায় শিল্পপার্ক স্থানান্তরিত হলে সেখানে প্রায় ৩ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে, যার ৮০ শতাংশই নারী। শিল্পপার্কটি চালু হলে রাজধানীর পরিবেশের ওপরও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
×