ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানুষ চায়নি অমন

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২৭ জানুয়ারি ২০১৫

মানুষ চায়নি অমন

সারাদেশ ও জাতি স্তম্ভিত। এমন একটা দৃশ্যপট কেউ আশা করেনি। সৌজন্যবোধ, ভদ্রতা, উদারতা ও সম্মান প্রদর্শনের যে সংস্কৃতি, রীতিনীতি তার সবকিছু এভাবে ম্লান হয়ে যাবেÑ কারও কল্পনাতেও আসেনি। অমন অবস্থানের কেউ যে এমন বিসদৃশ আচরণ করে অসম্মান প্রদর্শন করলেন, তা কোনো সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান তার অনুগতদের পক্ষে মানানসই হলেও দেশবাসী হতভম্ব হয়েছে। ক্ষুদ্র ও সঙ্কীর্ণ এবং দেশ ও জনগণবিরোধী স্বার্থান্ধে এতই অন্ধ হয়ে পড়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী নামক প্রতিষ্ঠানটিকে হেয় করতে বাধেনি। যেমন বাধে না পেট্রোলবোমা মেরে, বাসে আগুন জ্বালিতে, পিটিয়ে মানুষ হত্যা করতে ট্রেনলাইন উপড়ে ফেলতে, লঞ্চে অগ্নিসংযোগ কারতে। বার্ন ইউনিটের আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে গেছে দগ্ধ মানুষের স্বজনের আহাজারিতে। অপরাধ তাদের, তারা সাধারণ মানুষ। অবরোধ ও হরতাল ডেকে জনজীবন বিপর্যস্ত করা চলছে। আর এ সময়ে অর্থ পাচার, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত ও ৬ বছরের কারাদ-ের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে নির্বাসিত জীবন যাপনকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় অবরোধ আহ্বানকারী নেত্রীর কনিষ্ঠপুত্র। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের মৃত্যুতে সহানুভূতি জানাতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আগাম জানান দিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। তিনি যাওয়ার দু’ঘণ্টা আগেই সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী পৌঁছে। প্রধানমন্ত্রী প্রধান ফটকে ৬-৭ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকেন। তালাবদ্ধ ফটক। কেউ এগিয়েও আসেনি সম্মানের সঙ্গে অভ্যর্থনা জানাতে। শোকাহত বিএনপি নেত্রীকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয় ‘অফিস কাম রেসিডেন্সে।’ এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। হতেই পারে। বয়স হয়েছে তদুপরি শোক সইতে পারাটা তার জন্য কঠিন। কিন্তু তার অফিসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির চার সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তাঁরাও প্রধানমন্ত্রীর আগমনে এগিয়ে আসেননি। গেটের সামনে এসে সম্ভাষণ জানানোর মতো মানসিক সাহস তাঁরা হারিয়ে ফেলেছিলেন সম্ভবত। এমনকি নেত্রীর কর্মচারীরাও সেখানে হাজির হননি। প্রবেশ পথে তালা মেরে তাদের এই অবরুদ্ধ থাকার মাজেজা তো অবশ্যই রয়েছে। তাঁর এক কর্মচারী তো বলেই ফেলেছেন পরে, প্রধানমন্ত্রী লোক দেখাতে এসেছিলেন। কী ভাষ্য। আসলে যে হারে তারা মানুষ হত্যা করে চলছেন, যুদ্ধাপরাধী রক্ষা ও নিজেদের অপর্কম ঢাকতে, তাতে লজ্জায় মুখ দেখানোর মতো মনোবল ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এমন অসৌজন্য আচরণ যাঁরা করেছেন, তাঁরা জনগণের সঙ্গে আচরণ তো করবেনই বৈরিতার। না হলে নিরীহ মানুষদের নির্বিবাদে হত্যা করে, তাদের বিরুদ্ধে ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কাজটি কেন করছেন। শেখ হাসিনার প্রতি সন্তানহারা মায়ের আচরণে পুরো দেশবাসী হতবাকই হয়েছে। দু’নেত্রী যে দু’ধরনের, ভিন্ন মানসিকতার, ভিন্ন মানবিকবোধধারী, তা আবারও প্রমাণিত হলো। জামায়াতের ক্ষেপুটে থেকে বিএনপি যে আরচণ করেছে, তা স্পষ্ট করে দেয় সভ্যতার সঙ্কট বিএনপির কোন্ পর্যায়ে। এদের সঙ্গে সংলাপই কী আর আলোচনাই বা কী। সন্ত্রাসের সঙ্গে দেশের জনগণ বসবাস করতে চায় না। আর যারা সন্ত্রাস করছে, তাদের নির্মূলে সম্মিলিত পদক্ষেপই গ্রহণ করা যায়।
×