ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ছয় মাসে ছাড় হয়েছে ১৫ কোটি ১৬ লাখ ১ হাজার ডলার

দাতাদের অর্থছাড় বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২৭ জানুয়ারি ২০১৫

দাতাদের অর্থছাড় বেড়েছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে বৈদেশিক অর্থছাড় বেড়েছে। দাতাদের দেয়া সহায়তা প্রতিশ্রুতি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কিছুটা কম হলেও এটি স্বাভাবিক বলে মনে করছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। চলতি জানুয়ারি ও আগামী ফেব্রুয়ারি মাস মিলে এ ঘাটতি পূরণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। দীর্ঘদিন থেকে বিশ্বব্যাংক সবচেয়ে এগিয়ে থাকলেও এবার এগিয়েছে এডিবি। বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ মিশনের দায়িত্বশীলরা বলছেন, এটি হতেই পারে। কেননা ঢাকা ও চিটাগাং ওয়াটার সাপ্লাই এ্যান্ড স্যানিটেশন প্রকল্পের মতো অনেক প্রকল্প রয়েছে যেগুলোর বাস্তবায়ন শুরু করতে প্রস্তুতি পর্যায়েই বেশ খানিকটা সময় চলে যায়। যখন অর্থছাড় শুরু হবে তখন একবারেই দেখা যাবে মোটা অঙ্কের অর্থছাড় হবে। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিশ্রুতির বিষয়টি ভিন্ন বিষয়। কেননা এ বছর জানুয়ারি মাসে গত দুই দিনে তিনটি বড় ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। সেগুলো এখনও প্রতিশ্রুতিতে যোগ হয়নি। তাছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসে আরও একটি বড় ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হবে। এগুলো যোগ করলে দেখা যাবে, গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি হবে। তাছাড়া অর্থছাড় ব্যাপক হচ্ছে। এটি পজেটিভ বিষয়। প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাড়ছে বলেই দাতারা অর্থছাড় করছে। আগামীতে এটি আরও বাড়বে বলে আশা করছি। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) দাতারা অর্থছাড় করেছে মোট ১৫০ কোটি ১৬ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। এরমধ্যে ঋণের পরিমাণ ১২৭ কোটি ৯৩ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার আর অনুদান হচ্ছে ২২ কোটি ২২ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে মোট অর্থছাড়ের পরিমাণ ছিল ১৩০ কোটি ৯৩ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। এরমধ্যে ঋণের পরিমাণ ছিল ১০৭ কোটি ৭১ লাখ ডলার এবং অনুদান ছিল ২৩ কোটি ২২ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ইআরডির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, গত অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের বাকি থাকা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে একটি বড় ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যার পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি মার্কিন ডলার। ফলে গত অর্থবছরের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে যোগ হয়ে এটির পরিমাণ বেড়ে গেছে। তাই চলতি অর্থবছরের প্রতিশ্রুতি গত অর্থবছরের সঙ্গে মেলালে চলবে না। ইআরডি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) দাতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ১০০ কোটি ৩৩ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৫৪ কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। এরমধ্যে ঋণ হচ্ছে ৮১ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার আর অনুদান ১৯ কোটি ১৩ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। অন্যদিকে গত অর্থবছরের একই সময়ে যে প্রতিশ্রুতি এসেছিল তার মধ্যে ঋণ ছিল ১২৬ কোটি ৪৭ লাখ ডলার আর অনুদান ছিল ২৭ কোটি ৭২ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের গত ছয় মাসে সরকারের পক্ষ থেকে দাতাদের ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ৬৩ কোটি ২৯ লাখ মার্কিন ডলার। এরমধ্যে আসল হচ্ছে ৫৩ কোটি ৮৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার এবং সুদ ৯ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে দাতাদের ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৬৩ কোটি ৭৪ হাজার মার্কিন ডলার। এরমধ্যে আসল ৫৩ কোটি ৬৫ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার এবং সুদ ৯ কোটি ৪১ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। অর্থছাড়কারী প্রধান দাতা সংস্থাগুলো হচ্ছেÑ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৪৯ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার, বিশ্বব্যাংক ৪২ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার, ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) ৯ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার, জাপান আর্ন্তজাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ১২ কোটি ৮৪ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার এবং চীন ১০ কোটি ৩৭ হাজার মার্কিন ডলার। বিশ্বব্যাংকের অর্থছাড় কিছুটা কম হওয়া বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ডেস্কের প্রধান অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আজম জনকণ্ঠকে বলেন, এটি হতেই পারে। সব সময় যে একরকম অর্থছাড় হবে এমনটা নয়। কোন সময় একটু কম হবে আবার কোন সময় একটু বেশি হবে, এটিইতো স্বাভাবিক। সূত্র জানায়, সরকারী সম্পদ ব্যবহারে সক্ষমতা বৃদ্ধি, সরকারী কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা, নতুন নতুন দাতা দেশ যুক্ত হওয়া এবং বাংলাদেশে সহায়তার প্রয়োজনীয়তা দাতাদের বোঝাতে পারার কারণেই বৈদেশিক সহায়তা বেড়েছে। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও অন্য দাতাদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির আশঙ্কা এবং পরবর্তীতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছিল সেসব আশঙ্কা কেটে গেছে। সরকারের দায়িত্বশীলদের তৎপরতা এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সফল নেগোসিয়েশনের ফলেই উন্নয়ন সহযোগীদের আস্থা অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি ইআরডির তুলনামূলক এক হিসাব এবং পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
×