ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বনশ্রীতে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুই দুষ্কৃতকারী নিহত

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২৬ জানুয়ারি ২০১৫

বনশ্রীতে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুই দুষ্কৃতকারী নিহত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুুকযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে দুই দুষ্কৃতকারী। শনিবার রাত আড়াইটার দিকে বনশ্রী এলাকায় র‌্যাব-৩’র প্যাট্রল টিম একটি প্রাইভেটকার থামানোর সঙ্কেত দিলে তা না থামিয়ে উল্টো ভেতরের যাত্রীরা গুলি শুরু করে। র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। দু’পক্ষের বন্দুুকযুদ্ধে ঘটনাস্থলেই দুই দুষ্কৃতকারী নিহত হন। তাদের পরিচয় না পাওয়া গেলেও র‌্যাব বলছে, তারা ডিবি পরিচয়ে বিভিন্নস্থানে সন্ত্রাস চালাত। উভয়ের বয়স পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশের কোঠায়। তাদের ব্যবহৃত গাড়ি থেকে অস্ত্র ছাড়াও গোয়েন্দা পুলিশের জ্যাকেট, ওয়াকিটকি ও হাতকড়া পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তাদের দুই সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানায় র‌্যাব। রামপুরায় র‌্যাবের একটি চেকপোস্টে একটি প্রাইভেটকারকে থামার সঙ্কেত দেয়া হয়। তখন ওই গাড়ি থেকে তিন যুবক র‌্যাব সদস্যদের দিকে গুলি ছুড়তে শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। পরে গুলিতে আহত দুজনকে ভোর চারটার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করে। গোলাগুলির সময় চালক গাড়ি ফেলে পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল ও ছয়টি গুলি এবং গাড়ি থেকে একটি পিস্তল, গোয়েন্দা পুলিশের দুটি জ্যাকেট, একটি ওয়াকিটকি ও একটি হাতকড়া উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, রাত দুটা ৪০ মিনিটের দিকে বনশ্রীতে ৩ সন্ত্রাসীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এ সময় দুই পক্ষের গোলাগুলির এক পর্যায়ে ওই ৩ সন্ত্রাসীর মধ্যে দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়। অপরজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। গোলাগুলির সময় মোহাম্মদ আনিস ও মোহাম্মদ মনির নামে দুই র‌্যাব সদস্যও আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। র‌্যাবের অপারেশন অফিসার সাইফুল জানান, রাতে বনশ্রী আইডিয়াল স্কুলের সামনে র‌্যাবের চেকপোস্ট বসানো হয়েছিল। এ সময় এক্স-করলা ব্র্যান্ডের একটি প্রাইভেটকার চেকপোস্টের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সেটিকে থামতে বলা হয়। কিন্তু সেটি না থেমে চলে যাচ্ছিল। এতে র‌্যাবের সন্দেহ হয়। পরে গাড়িটিকে ধাওয়া দিলে ভেতরে থাকা তিন সন্ত্রাসী গাড়ি থেকে বের হয়ে র‌্যাবের ওপর গুলি ছুড়তে থাকে। আত্মরক্ষার্থে র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। এতে ২জন গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যায়। শনিবার মধ্যরাতে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় নিহত দুই জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এদের একজনের বয়স আনুমানিক ৩৫, অপর জনের ৪০। দু’জনেরই গায়ে শার্ট ও পরনে প্যান্ট রয়েছে। একজনের মুখে ছোট ছোট দাড়ি রয়েছে। ঘটনার পর রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির দারোগা সুধন চন্দ্র জানান, বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের সামনে র‌্যাব-৩’র সঙ্গে ওই দুই ব্যক্তির ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয়। র‌্যাব বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই দু’জনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। আনুমানিক রাত চারটার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। এর পর ঢাকা জেলা প্রশাসক অফিসের ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়াত মেহজাবিনের উপস্থিতিতে লাশের সুরতহাল তৈরি করেন রামপুরা থানার দারোগা টিপু সুলতান। সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দুজনই অজ্ঞাতনামা যুবক। একজনের বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর। গায়ের রং শ্যামলা, মুখ লম্বাটে, উচ্চতা সাড়ে পাঁচ ফুট। মাথার চুল কালো, চোখ অর্ধমুদ্রিত। নাক দিয়ে জমাট রক্ত পড়া, বুকের উপরের ডান-বাঁ পাশ ও বগলের নিচে একটি করে গুলির ্িছদ্র। তার পরনে ছিল সাদা কালো শার্ট, জিন্সের প্যান্ট। যার বয়স ৪০, তার শারীরিক বর্ণনা হচ্ছেÑ গায়ের রং শ্যামলা, মুখম-ল গোলাকার, উচ্চতা সাড়ে পাঁচ ফুট, কাঁচাপাকা ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি। তারও বুকের ডান পাশে দুটো, বাম পাশে একটি, পেটসহ অন্যান্য স্থানে মোট সাতটি গুলির ছিদ্র রয়েছে। কোমরে গুলির ছিদ্র রয়েছে। তারও পরণে ফুল প্যান্ট ও জ্যাকেট। বিকেলে তাদের দুজনেরই ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তাদেরকে গুলি করেই হত্যা করা হয়েছে। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দুটো লাশই ছিল হাসপাতাল মর্গে। তাদের কোন স্বজন লাশ নিতে হাসপাতালে আসেনি। তবে অনেক কৌতূহলী লোক মর্গে লাশ দুটো শনাক্ত করতে ভিড় জমায়। নিহত দু’জন ভাল কি মন্দ জানতে চাইলে রামপুরা থানার পুলিশ কিছুই জানাতে পারেনি। পুলিশ তাদের নামে কোন অভিযোগ থাকা না থাকার ব্যাপারে অজ্ঞতা প্রকাশ করে। তবে যাদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে সেই র‌্যাব পরিচালক (মিডিয়া) কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, থানায় মামলা-মোকদ্দমাই কি একমাত্র ভালমন্দের মাপকাঠি? অনেক লোক আছে যাদের কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি, অথচ থানায় তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা-মোকদ্দমা নেই। বনশ্রীতে যারা বন্দুুকযুদ্ধে মারা গেছে তারা যে পেশাদার সন্ত্রাসী বা অপরাধী তাতে কোন সন্দেহ নেই। বেআইনী অস্ত্র দিয়ে তারা র‌্যাবের মতো ফোর্সের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে, তাদের গাড়িতে পাওয়া গেছে ডিবির ইউনিফর্ম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লেখা একটি স্টিকার, হ্যান্ডকাফসহ কিছু জিনিস যা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ব্যবহার করে। তারা সাধারণ নাগরিকও যদি হয়ে থাকে তাহলেও এসব রাখার দায়ে অভিযুক্ত হতে পারে না? ভাল মানুষ কি এগুলো রাখতে পারে? মুফতি মাহমুদ খান আরও বলেন, তারা যে গাড়িটি ব্যবহার করেছে, সেটাও চোরাই। এক মাস আগে কলাবাগান থেকে তারা ওই গাড়িটি চুরি করে। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি রাজধানীতে ডিবি পরিচয়ে সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে মু্্ক্িতপণ আদায়সহ নানাভাবে প্রতারিত করার মতো অপরাধে জড়িত চক্রের সদস্য তারা। র‌্যাব এমন একটি চক্র ধরায় সক্রিয় ছিল।
×