ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কোকোর লাশ আসছে কাল, নয়াপল্টনে জানাজা

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২৬ জানুয়ারি ২০১৫

কোকোর লাশ আসছে কাল, নয়াপল্টনে  জানাজা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়া ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর প্রথম নামাজে জানাজা মালায়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে জাতীয় মসজিদ নেগারায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুরে জানাজা শেষে তার লাশ মালয়া ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হচ্ছে। আগামী কাল মঙ্গলবার তার লাশ কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকায় আনা হবে এবং ওইদিন বাদ আছর নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কোকোর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া বুধবার সারাদেশে গায়েবানা নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে বিএনপির এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এদিকে কোকোর মৃত্যুতে রবিবার দিনভর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও বিদেশী কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে যান এবং শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন। তবে পুত্র শোকে নির্বাক খালেদা জিয়া রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কারও সঙ্গে কথা বলেননি। নিকটাত্মীয় ছাড়া কাউকে তাঁর কক্ষেও প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। ঢাকা মহানগরী হেফাজতে ইসলামীর আহ্বায়ক নূর হোসেন কাসেমীর নেতৃত্বে দলের একটি প্রতিনিধি দলও গুলশান কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। কোকোর মৃত্যুতে আজ সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত দেশব্যাপী ৩ দিনের শোক কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। শোক দিবস উপলক্ষে দেশের সব দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন ও নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন। কোকোর মৃত্যুতে রবিবার আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কুতিক ও সামাজিক সংগঠন শোক প্রকাশ করেছে। কোকোর মৃত্যুতে আওয়ামী লীগের সব দলীয় কর্মসূচী স্থগিত করা হয়েছে বলে দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন। সাত বছর পর লাশ হয়ে মঙ্গলবার দেশে ফিরছেন কোকো। ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই প্যারোলে মুক্তি পেয়ে থাইল্যান্ডে চিকিৎসার জন্য যান কোকো। এরপর থাইল্যান্ড থেকে মালায়েশিয়ার কুয়ালালামপুর গিয়ে একটি ভাড়া বাড়িতে সস্ত্রীক বসবাস করেন তিনি। ওইদিন মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা পৌঁছাবে তার মরদেহ। জানাজা শেষে আরাফাত রহমান কোকোকে বনানীর সেনা কবরস্থানে দাফন করার কথা ভাবছে তার পরিবার। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট জায়গায় আবেদন করা হয়েছে। অনুমতি মিললে এই কবরস্থানেই তার দাফন হবে। উল্লেখ্য শনিবার দুপুরে মালয়েশিয়ায় মারা যান কোকো। মালয়েশিয়া থেকে কোকোর লাশ আনতে আগেই খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর গিয়েছিলেন। আর সৌদি আরব থেকে যান বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালু। তাঁরা সেখানে প্রথম জানাজায় অংশ নেন। এছাড়াও প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে বেশকিছু লোক এ জানাজায় অংশ নেন। মালায়েশিয়ায় কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান, মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানকে সান্ত¡না দেন মোসাদ্দেক আলী ফালুসহ অন্যরা। ফালু কোকোর দুই মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরলে তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কোকোর মৃত্যুতে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও যাঁরা রবিবার খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে যান তাঁরা হলেনÑ বিকল্প ধারার সভাপতি অধ্যাপক বি চৌধুরী, কবি ও বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার, নাগরিক ফোরামের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ। এছাড়া কোকোর মৃত্যুতে মা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে সেখানে গিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কূটনীতিকরা। এর মধ্যে ছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন, মিশরের রাষ্ট্রদূত মাহমুদ ইজ্জাত, যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি চীফ অব মিশন ডেভিড মিলি, চীনা রাষ্ট্রদূত লি জুন, সৌদি রাষ্ট্রদূত ড. আবদুল্লাহ বিন নাসের আল বুসাইরি, কাতারের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আব্দুল আজিজ এম আল-মানা, সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রদূত চ্যান হেং উইং এবং ফিলিস্তিনের উপ-রাষ্ট্রদূত ও পাকিস্তানের উপ-হাইকমিশনার প্রমুখ। তারা শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন। সংলাপে না বসলে গণ-অনশন করবেন বি চৌধুরী ॥ বিকল্পধারার সভাপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, সাত দিনের মধ্যে দুই নেত্রীকে সংলাপ বা আলোচনায় বসতে হবে। তা না হলে দেশের জনগণকে নিয়ে তিনি গণ-অনশন করবেন। তিনি বলেন, যেভাবে দেশের মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, আর দুই নেত্রী যা করছেন, তা দেশের জন্য ভাল হচ্ছে না। রবিবার বেলা আড়াইটায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন। বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দেখা করতে না পারার ব্যাপারে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ের গেটে তালা থাকাটা যেমন অপরাধ, তেমনি প্রধানমন্ত্রী যাওয়ার পর দরজা খুলে না দেয়াটাও অপরাধ। প্রধানমন্ত্রীকে ঢুকতে দিলে তা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য ভাল হতো। তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানাতে চাইলেও পারেননি। পরে শোক বইয়ে স্বাক্ষর করে চলে যান। সহানুভূতি জানাতে আসা প্রধানমন্ত্রীর নিছকই ছলনা ॥ বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, পুত্রশোকে কাতর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরে প্রমাণ হয়েছে যে, খালেদা জিয়াকে সহানুভূতি জানাতে আসা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিছক ছলনা। রবিবার এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, কোকোর মৃত্যুতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতে আসাকে আমরা ইতিবাচক অর্থে গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনায় এটা সুস্পষ্ট যে, প্রধানমন্ত্রীর আসা ছিল একটি প্রহসনের মহড়া মাত্র। আর কাকোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর সমবেদনা জানানোটা যেন কুমিরের কান্না। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাটিকে মিথ্যা এবং চক্রান্তমূলক অভিহিত করেন রিজভী বলেন, তার মত, পুত্রশোকে কাতর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের সরকারের নিষ্ঠুরতা ও বিবেকহীনতার মতো নজীর বিশ্বে আর নেই। রিজভী বলেন, আরাফাত রহমান কোকো শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের অসুস্থতায় ভুগেই মারা গেছেন। আওয়ামী মহাজোট সরকার একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করতে থাকে কোকোর বিরুদ্ধে। মায়ের কাছ থেকে সন্তান ও সন্তানের পরিবারকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের ফলে অসুস্থতায় ভুগতে ভুগতে শনিবার আরাফাত রহমান কোকো মারা যান।
×