স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ তার নামটা খুবই পরিচিত। আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তরুণ বয়সে অন্যান্য খেলার সঙ্গে ফুটবলটাও খেলতেন। মজা করে নিজেই স্বীকার করেছেন, ‘মোটেও ভাল ফুটবলার ছিলাম না। খেলতে গিয়ে প্রায়ই চোট পেতাম। চোট সারাতে নিজেই ডাক্তারী করতাম হলুদ-মরিচের গুঁড়ো দিয়ে পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে।’ বয়স তার এখন আশিরও বেশি। বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে কর্মরত। রাতদিন প্রচুর ব্যস্ততা। তারপরও ফুটবলকে সেই মতোই ভালবাসেন মনে প্রাণে। যখন শুনলেন নিজ জেলায় অনুষ্ঠিত হবে ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ’ ফুটবল টুর্নামেন্টের ম্যাচ, তখন আগ্রহটা আরও বাড়ল।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন তাকে যখন প্রস্তাব দিলেন এই টুর্নামেন্টের অর্গানাইজিং কমিটির চেয়ারম্যানের পদটা অলঙ্কৃত করতে, প্রস্তাবটা লুফে নিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন সালাউদ্দিনকে নির্দেশ দিলেন, ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে নয়, এই টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচ হবে সিলেট জেলা স্টেডিয়ামেÑ তখন মুহিতের উৎসাহ বেড়ে গেল দ্বিগুণ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দাফতরিক কাজের পাশাপাশি ফুটবল সংক্রান্ত কার্যাবলীও করতে হচ্ছে। এখানেও দ্বিগুণ কাজ। এর নমুনা দেখা গেল শনিবার বাফুফে ভবনে। অর্থমন্ত্রী মুহিত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের আয়োজক কমিটির সভায় মিলিত হলেন। সভা শেষে তিনি মুখোমুুখি হন ক্রীড়া সাংবাদিদের। তাদের অবহিত করেন এ আসর নিয়ে কাদের পরিকল্পনা ও সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে। মুহিতের সঙ্গে ছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ, একোমোন্ডেশন এ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট উপকমিটির চেয়ারম্যান তাবিথ আউয়াল; সুভেন্যির উপকমিটির চেয়ারম্যান কাজী নাবিল আহমেদ, সিকিউরিটি এ্যান্ড ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট উপকমিটির চেয়ারম্যান শেখ মোঃ মারুফ হাসান, সিলেট জেলা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহিউদ্দিন সেলিম এবং বাফুফে সদস্য বিজন বড়ুয়া। প্রেস ব্রিফিংয়ে সালাউদ্দিন জানান, ‘ অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে।’ অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার অর্গানাইজিং কমিটি গঠিত হওয়ার পর এটাই ছিল কমিটির প্রথম অনুষ্ঠিত বৈঠক। আগামী ২৯ জানুয়ারি সিলেটে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ আছে। টুর্নামেন্ট আয়োজনে কি করণীয় এবং সর্বশেষ কি অবস্থা, এ সবকিছু নিয়েই আমরা আলোচনা করেছি। আমার কাছে যা খবর আছে, তাতে মনে হয়েছে সবকিছু প্রায় ঠিকঠাকই এগিয়ে চলেছে। আশা করি বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আমরা সফল ও সুষ্ঠুভাবেই আয়োজন করতে পারব।’ আন্তর্জাতিক মানের এ টুর্নামেন্ট আয়োজনের চাই প্রচুর অর্থ। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রীর ভাষ্য, ‘এ ধরনের আসর আয়োজনের জন্য প্রচুর টাকা দরকার, সেটা আমি বুঝি। সালাউদ্দিন আমাকে জানিয়েছেন তাদের ১৫ কোটি টাকা দরকার। আমরা বলেছি টাকার ব্যবস্থা সময় মতো হয়ে যাবে।’ অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সিলেটন ভেন্যুর যে বিষয়টি নিয়ে আমি চিন্তিত, তা হলো স্টেডিয়ামে দর্শকদের নিয়ন্ত্রণ। এর আগে এই স্টেডিয়ামে কয়েকমাস আগে একটি ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ দেখতে অভাবনীয় দর্শক-ঢল নেমেছিল। তারা স্টেডিয়ামের গেট ভেঙ্গেই মাঠে ঢুকে পড়েছিল। কিন্তু বিস্ময়করভাবে তারা মাঠে ঢুকে কোন প্রকার গ-গোল করেনি। বরং মাঠের দাগের ঠিক বাইরে শান্তভাবে বসে পড়ে। এ থেকেই প্রমাণ হয় সিলেটের দর্শকরা দারুণ ভদ্র। ওই ম্যাচে স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি টিকেট ছাপা হয়েছিল। এবার যেন এমনটা না ঘটে, তাই একটু কমসংখ্যক টিকেট ছাপা হবে।’ সিলেটের যেসব দর্শক টিকেট কিনতে পারবেন না, তাদের খেলা দেখার সুবিধার্থে সুরমা ব্রিজের নিচে একটি বিগ স্ক্রিন স্থাপন করা হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। ‘২৭ তারিখের মধ্যে সিলেটে গিয়ে খেলা বিদেশী দলগুলোকে আতিথেয়তা দেয়ার ব্যাপারে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে এবং ওই দিনই এ টুর্নামেন্ট নিয়ে আয়োজক কমিটির আরেকটি মিটিং অনুষ্ঠিত হবে ঢাকার একটি পাঁচতারা হোটেলে- জানান মুহিত।